খুব অল্প কারণে মনখারাপ হওয়া কী স্বাভাবিক?

শরীর ভালো রাখার পাশাপাশি মন ভালো রাখাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মন কী? মন কীভাবে সুস্থ ও সতেজ রাখা যায়? কীভাবে মানসিক চাপ থেকে বাঁচবেন? -এমনই সব চেনা সমস্যার অজানা উত্তর দিলেন কনসালট্যান্ট সাইকিয়াট্রিস্ট ডঃ অয়ন বসাক।

হাইলাইটস:

১। মন কীভাবে ভালো রাখা যায়?

২। খুব অল্প কারণে মনখারাপ হওয়া কী স্বাভাবিক?

৩। স্ট্রেস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে কীভাবে?

মন বলতে কী বোঝায়?

মন হল হিউম্যান বিহেভিয়ার, যা মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে। যা দেখা বা ছোঁয়া যায়না, কিন্তু অনুভব করা যায়। আগে মানুষকে বোঝানো খুব কঠিন ছিল যে, শরীরের কোন অঙ্গ মন নয়। কিন্তু এখন বাস্তবের দিকে তাকালে দেখা যায় মানুষের জীবনযাত্রার সাথে ইন্টারনেট জড়িত, কিন্তু সেই নেটওয়ার্কও চোখে দেখা যায়না। মনও তেমনই এক জিনিস, এটি প্রত্যক্ষভাবে না দেখা গেলেও অনুভব করা যায়।  

খুব অল্প কারণে মনখারাপ হওয়া কী স্বাভাবিক?

মনখারাপ কোন অস্বাভাবিক বিষয় নয়। মন কোন কারণে খারাপ বা ভালো থাকতেই পারে। কিন্তু যখন সেই মন খারাপ অতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যায়, অর্থাৎ সেটা যদি তার কাজের বা ব্যবহারের উপর প্রভাব ফেলে, তখন সেটাকে খারাপ বলা হয়। এক্ষেত্রে তার উপযুক্ত চিকিৎসা প্রয়োজন।

কাজের স্ট্রেস মনখারাপের ক্ষেত্রে কতটা দায়ী?

বর্তমান সময়ে ‘স্ট্রেস’ খুব পরিচিত একটি শব্দ। জীবনধারণের জন্য আমাদের প্রত্যহ পরিশ্রম করতে হয়। আর সেই কাজের কারণে স্ট্রেস বাড়তে পারে জীবনে। এটিকে দুই পর্যায়ে ভাগ করা যায়। প্রথমটি, অল্প স্ট্রেস ও দ্বিতীয়টি, বেশি স্ট্রেস।

প্রথম পর্যায়ের স্ট্রেসের উদাহরণ যা পরীক্ষার আগের দিন হয়। একটা ভয় কাজ করে। কিন্তু সেই হালকা টেনশন কাজ করার দক্ষতাও বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এছাড়াও আরেকধরণের স্ট্রেস আছে, যা শরীরের ও মনের পক্ষে ক্ষতিকারক। এটি মানসিকভাবে আমাদেরকে পঙ্গু করে দেয়। কোন কাজ সঠিকভাবে হয়না, ইমোশন কন্ট্রোল করতে অসুবিধা হয়।

স্ট্রেস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে কীভাবে?

এই সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়ার প্রথম উপায়, কোন কাজ বা সিদ্ধান্ত নিতে হলে তা, আগে থেকে প্ল্যান করে নিতে হবে। কোন কাজের ছক যদি অনেক আগে থেকে ঠিক করা থাকে, তবে সেই কাজটি করতে আমাদের সুবিধা হয় এবং কাজটি সঠিক সময়ে সম্পন্ন হয়। ফলে কাজের স্ট্রেস থাকেনা।

এছাড়াও ইমোশনকে কন্ট্রোল করার জন্য প্রতিদিন অল্প কিছু সময় ধরে মোটিভেশনাল স্পিচ শুনলে তা মানসিক স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়াও মেডিটেশন, যোগা, প্রাণায়াম ইত্যাদি দিনে অন্তত ১৫ মিনিট থেকে ৩০ মিনিটের জন্য অভ্যাস করলে তা আমাদের মনযোগ বাড়ায়।

মনখারাপ কতটা ক্ষতিকর জায়গা অবধি যেতে পারে?

কিছুটা সময় ধরে কারোর মনখারাপ হলে সেটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু যদি কারোর দীর্ঘ সময় ধরে মন খারাপ হয় এবং সে কাজ করতে ও খাবার খেতে কোন উৎসাহ না পায়, তবে সেটা খুব ক্ষতিকারক। সেটা খুব সিরিয়াসভাবে নিতে হবে অবিভাবকদের। এই মনখারাপ থেকেই নানান দূর্ঘটনা অর্থাৎ সুইসাইড করার প্রবণতা থাকে।

মন কীভাবে ভালো রাখা যায়?

১। মানুষের সাথে যোগাযোগ অর্থাৎ জনসংযোগ বাড়াতে হবে।

২। ভালো বই পড়তে হবে।

৩। নিজেকেই নিজের খেয়াল রাখতে হবে, অর্থাৎ নিজেকে ভালো রাখতে হবে।

দর্শকদের প্রশ্নঃ

মনখারাপ ও ডিপ্রেশনের মধ্যে পার্থক্য কী?

ডিপ্রেশন হল, ক্লিনিকাল ইনটিনি। অর্থাৎ এক্ষেত্রে কিছু বিভাগ নির্দিষ্ট করা হয় এবং মানসিক অবসাদ বা মনখারাপ সেই পর্যায় অবধি পৌঁছালে তাকে ডিপ্রেশন বলা হবে। মনখারাপ যদি ১৫ দিনের বেশি স্থায়ী হয়, তবে তাকে ডিপ্রেশন বলা হয়।

মনখারাপ কতটা খারাপ পর্যায়ে যেতে পারে?

ছোট বাচ্ছাদের মনখারাপ হলে তা ভয়ানক পর্যায়ে যেতে পারে। বাচ্ছারা সহজে নিজের মনের কথা খুলে বলতে পারেনা, ফলে তা তাদের মনে থেকে যায়। তখন দেখা যায়, তারা স্বাভাবিকভাবে ব্যবহার করছেনা, খাবার খাচ্ছে না , খেলছে না ও কথায় কথায় বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। তখন তাদেরসাথে কথা বলে তাদেরকে বোঝাতে হবে ও প্রয়োজনে চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে।   

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...