কোমরের ব্যথার (Back Pain) জন্য পায়ের জোর কমে যাচ্ছে ? হাড় নাকি স্নায়ু- কোমরের ব্যথার জন্য দায়ী কে? পায়ের দুর্বলতা দেখা দিলে ফিজিওথেরাপি (Physiotherapy) কখন শুরু করা উচিত? বিস্তারিত জানালেন নিউরোসার্জেন ডাঃ কৌশিক শীল (Dr Kaushik Sil, Neurosurgeon)
শিরদাঁড়ার মধ্যে ডিস্ক থাকে। ডিস্ক হল শিরদাঁড়ার দুই হাড়ের মধ্যে জেলির মতো বস্তু। ত্রিশ বছর বয়সের পর ডিস্কের মধ্যে থেকে জলীয় অংশ কমতে থাকে। তারপর শুরু হয় ব্যথা। এই ব্যথা যখন সারাদিন থাকে তখন সেটা চিন্তার কারণ। হাঁটলে, সিঁড়ি চড়তে গেলে লাগছে, ভারি কাজ করলে যদি ব্যথা বাড়ে তখন তা চিন্তার ব্যাপার।
কোমরের ব্যথা থেকে পায়ের ব্যথা হলে প্রথমে পায়ে ঝিঁঝিঁ করে। কোমরের ব্যথা যদি পায়ে নামে। এমন লক্ষণ দেখা দিলে সচেতন হওয়া উচিত। তাও যদি অবহেলা করা হয় তাহলে পায়ে দুর্বলতা দেখা যায়। প্রথমে পায়ের বুড়ো আঙুল, গোড়ালিতে অসুবিধা, তারপর সেই দুর্বলতা ক্রমশ বাড়তে থাকে। হাঁটুর কারণে পায়ে দুর্বলতা দেখা দিলে পায়ে অসম্ভব যন্ত্রণা হয়। হিপ জয়েন্টে হলেও।
ব্যথার একটা পর্যায় পর্যন্ত বেল্ট, মেডিসিন দিয়ে ব্যথা কমানোর প্রক্রিয়া চললেও ঝিঁ ঝিঁ যদি না কমে তাহলেই সেটা চিন্তার। পা আস্তে আস্তে বসতে থাকে। একবার কোনও অংশ অবশ হয়ে গেলে তা প্রায় ক্রমশ স্থায়ী সমস্যার চেহারা নেয়। পায়ের মুভমেন্ট চলে যায়। কোমর থেকে পায়ে ব্যথার সমস্যা হলে তাই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
দিনের শেষে কোমরে ব্যথা- এই পর্যায়ে গরম সেঁক, ব্যথার ওষুধ, কখনও বেল্ট, ওয়েট লস, exercise এগুলো করলেই নিরাময় সম্ভব। সার্জারি লাগে না। ওজন কমানো জরুরি। আমাদের শরীরের পুরো ওজন মেরুদন্ডের ওপর পড়ে। তার ওপর বাড়তি চাপ পড়লে সমস্যা আসতে বাধ্য। শিরদাঁড়ার স্বাস্থ্য অবনতি ঘটলে তখন তাকে রক্ষার জন্য মাংসপেশী, লিগামেন্ট শক্তিশালী করতে হবে। তার জন্য শরীরচৰ্চা জরুরি। ব্যথা পায়ে নামলে নিউরোপ্যাথিক পেইন মেডিসিন প্রয়োগ করা হয়। ৬০-৭০ শতাংশ নিরাময় হয় তাতে। ওষুধের নানা স্তর আছে। কিন্তু যাদের দেড়-দু'মাস চিকিৎসাতেও সারছে না তাদের সার্জারি ছাড়া উপায় নেই।
ইউরিনারি সমস্যাও এই রোগের অন্যতম লক্ষণ। কোমরে ও পায়ে ব্যথার সঙ্গে প্রস্রাবে সমস্যা দেখা দিলে সেরে ওঠার উপায় সার্জারি।
স্পাইন সার্জারিতে সুস্থ হয়ে ওঠা যায় না- এমন মিথ প্রচলিত থাকলেও তা ঠিক নয়। পুরোপুরি সেরে যায়। নার্ভের সেরে ওঠার সময় থাকতে থাকতেই করাতে হবে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করতে হবে। অপারেশনের পর ফিজিওথেরাপি মাস্ট। এই রোগ সামগ্রিকভাবে স্পন্ডেলাইটিস সমস্যা। স্পন্ডেলাইটিসকে ঘাড়ের অসুখ বলে মনে করা হলেও আসলে তার অনেক ভাগ আছে।
তাই সার্জারি পর্যন্ত যাওয়ার আগেই সচেতন হতে হবে ব্যথা সম্পর্কে।