এবারের পুজোয় অ্যাডভেঞ্চার জমুক শাড়িতে। ডেনিম বা সাদা শার্টের সঙ্গে সম্বলপুরীর কনট্র্যাস্ট, ক্রপটপের সঙ্গে টাঙ্গাইল পরলে দেখাবে? পুজোয় শাড়ির ছকভাঙ্গা স্টাইল নিয়ে টিপস দিলেন জাতীয় পুরস্কারজয়ী কস্টিউম ডিজাইনার সাবর্ণী দাস।
একসময় ফ্যাশন জার্নালিস্ট ছিলেন। তারপর তাঁর সফল শুরু হয় কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে। লম্বা জার্নি। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের জাতিস্মর ছবির জন্য তাঁর জাতীয় পুরস্কার পাওয়া। দর্শকরা মনে করে এই ছবিই তাঁর সেরা ও সবচেয়ে কঠিন কাজ। কিন্তু জাতীয় পুরস্কারজয়ী কস্টিউম ডিজাইনার সাবর্ণী দাস মনে করেন তিনি এখনও পর্যন্ত জীবনের সেরা কাজটা করে উঠতে পারেননি। তিনি ভাবতেই পারেননি যে জাতীয় পুরস্কার পাবেন 'জাতিস্মর' পাবেন। তিনি শুধু জানতেন গল্প অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
তাঁর নিজের কাছে তাঁর নিজের সবচেয়ে কঠিন কাজ 'জুলফিকার'। কারণ পুরো ছবিতে যত চরিত্র ছিল তারা প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা প্রেক্ষাপট ও স্তর থেকে উঠে এসেছে। মাফিয়া গ্যাং, ক্রিমিনাল। তাদের চেহারার মধ্যে একটা সাদৃশ্য থাকে। তার মধ্যে বৈচিত্র গড়ে তোলা শক্ত। তার মধ্যেই আলাদা আলাদা ব্যক্তিত্ব বের করে আনা কঠিন। সেটাই আসল চ্যালেঞ্জ। তাঁর ভাষায়, তবে এক্ষেত্রে কাজটা যদি শাড়ির হয় তাহলে তা সবচেয়ে সহজ হয়ে যায়।
ভারতে শাড়ির এত বেশি ব্যাপ্তি, এতরকম শাড়ি পাওয়া যায়, এক একটা রাজ্যে এক এক রকম শাড়ি। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রতি দশ মাইল অন্তর একটা করে নতুন ধরনের শাড়ি পাওয়া যাবে। ২০ মাইল পর নতুন স্টাইল পাওয়া যাবে। এই বাংলাতেই কত রকমের তাঁতের শাড়ি। তাই শাড়ি হলে চরিত্র বিশ্লেষণ সহজ হয়।
শাড়ির প্রতি ভালবাসা ও শাড়ি চেনা তাঁর মায়ের থেকে। তাঁর মা খুব শৌখিন মানুষ ছিলেন। তাঁর ব্যক্তিত্বর ওপর তাঁর মায়ের প্রভাব আছে। তাঁর কাছে ভাল পোশাক মানেই শাড়ি।
শাড়ি পরার চল বেড়েছে এখনকার প্রজন্মের মধ্যে। অন্য সমস্ত পোশাকের মতোই শাড়ি পরছে তারা। ট্রাডিশনাল, ক্যাজুয়াল দুই। শাড়ির স্টাইলিং আলাদা হয়ে যাওয়ায় যে কোনও সময় শাড়ি পরা যায় ব্যাপারটা এসেছে। একটু অগোছালো হলেও সেটা স্টাইল। শাড়ির বদলে যাওয়া এই ধারণাকে ওয়েলকাম করতেই হবে। খুব ট্রাডিশনাল শাড়ির সঙ্গে খুব আধুনিক একটা ব্লাউজ। শার্ট, ডেনিমের সঙ্গে শাড়ি।
তিনি বিশ্বাস করেন 'সিম্পল লাইন'। শাড়ির ক্ষেত্রে নানারকম স্টাইল এসেছে। গুজরাটিদের সিধা পাল্লা শাড়ির কত রকম ধরন আছে। উত্তর ভারতে শাড়ি পরার ধরন একরকম। দক্ষিণের এক একটা রাজ্যে এক রকম। এখন ব্লাউজের কাট যেহেতু অন্য রকম হয় তাই আঁচলের ধরনে বদল এসেছে নানারকম। সব চেয়ে ভাল নিজেদের শাড়ির স্টাইল নিজেরাই তৈরি করা। যেটায় পরে স্বছন্দ। যে কোনও পোশাকে সেটাই আসল ব্যাপার। নিজে কমফর্টেবল হলে নিজেদের ঘিরে থাকা মানুষও। এখন বডিশেমিং নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে। কে রোগা কে মোটা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। নিজের পোশাকে যেন নিজের আরাম লাগে। শুধু শাড়ি নয়, সব ধরনের পোশাকের জন্য এই কথা খাটে। তুমি যেমন কমফোর্টেবল তেমন সাজো, তেমন পরো- সেটাই সাজ।
তাঁর প্রিয় শাড়ি সূতির শাড়ি এবং প্রাদেশিক শাড়ি। সে বাংলার তাঁত হতে হতে পারে কেরল কটন, ওড়িশার সম্বলপুরী হতে পারে। বিয়ে বাড়িতেও তিনি এই ধরনের শাড়ি পরে যেতে পারেন। আসলে ব্যাপারটা কেমন দেখাচ্ছে নির্ভর করছে ব্যক্তিত্ব আর সাজের ওপর। বেনারসী পরেই যে সন্ধ্যেবেলা বিয়েবাড়ি যেতে হবে সেরকম নয়। গরমের সময় বেনারসীর মতো ভারি শাড়ি পরা খুবই কঠিন। তার চেয়ে বরং জরিপাড় টাঙ্গাইল, ব্লাউজ হালকা একটা গয়না। মুখের ফ্রেমিংটা খুব জরুরি। এখন অতিরিক্ত মেকাপ করার একটা প্রবণতা দেখা যায়। তাঁর মেন্টর অপর্ণা সেন একবার তাঁকে বলেছিলেন ‘যত বেশি মেকাপ করবে চরিত্র, তত বয়স্ক দেখাবে’। তাঁর মতে মেকআপ ছাড়া সবচেয়ে বেশি ফ্রেশ আর ইয়ং লাগে যে কোনও মানুষকে। কিন্তু আজকালকার জীবনে সব সময় নো মেকআপ সম্ভব নয় তাই তাঁর পরামর্শ এমনভাবে মেকআপ করা উচিত যাতে সেটা নিজের সঙ্গে ব্লেন্ড করে যায়। ব্যক্তিত্ব আর ত্বক দুইয়ের সঙ্গেই।