কীভাবে বুঝবেন শিশু মানসিক চাপে ভুগছে?

অভিভাভবকের প্রত্যাশা কীভাবে মানসিক চাপে রাখে শিশুদের? বাড়ির খুদে সদস্যটি যে মানসিক চাপে ভুগছে কীভাবে বুঝবেন? শিশুকে স্ট্রেসমুক্ত রাখতে তার কোন কোন দিকগুলি অবিভাবকদের খেয়াল রাখা উচিত পরামর্শ দিলেন কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট সুব্রত ভট্টাচার্য্য (Mr. Subrata Bhattacharyya, Counselling Psychologist)

কী করে বোঝা যাবে শিশু মানসিক চাপে ভুগছে?

এই প্রসঙ্গে ডাঃ সুব্রত ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, আগে মনে করা হত স্ট্রেস শুধু বড়দের ক্ষেত্রেই হয়। কিন্তু এখন সেটা শিশুদেরও হচ্ছে। তারা বলতে পারে না,কিন্তু সেটা বোঝার রাস্তা হল তাদের আচরণ দেখে। রেগে যাওয়া, কথায় কথায় কাউকে মারা বা স্কুল থেকে অভিযোগ আসা, এই সব দেখেই বুঝতে হবে যে বাচ্চা চাপে আছে আছে। স্ট্রেস থাকার নানান কারণ থাকতে পারে কিন্তু বেশিরভাগ কারণটাই আসে পরিবার থেকে।

শিশু মানসিক চাপে থাকলে অভিভাবকদের কী করা উচিত?

তিনি বলেন, স্ট্রেস হওয়ার এক কারণ বাড়ি, অন্যদিকে আর এক কারণ হল পড়াশোনা। এই ক্ষেত্রেও বড়রাই দায়ী। কারণ ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা নিয়ে একটা চাপ তৈরি করা হয় বাচ্চাদের মধ্যে।

প্রথমত, পড়াশোনা, খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক চর্চা-এই তিনটি জিনিস দরকার একটি শিশুর জীবন গড়ার জন্য। নানা রকম কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে স্কুল বা বাড়িতে যে চাপ তৈরি হয় তা থেকে অনেকটাই মুক্ত হয়ে যাবে। বিকেলবেলায় খেলাধুলা করাটা খুব প্রয়োজন, কিন্তু সেটার সময় দেওয়ার অভাব পড়েছে। তার সঙ্গে কোনও সাংস্কৃতিক কিছু শেখাটাও খুব জরুরি।

দ্বিতীয়ত, একটা বাচ্চার পড়াশোনা ছাড়া যে কোনও অন্য চর্চায় আগ্রহ বেশী থাকতে পারে এবং বাবা-মাকে বুঝতে হবে সেটা। মা কোনও কারণে চাপে থাকলে তার প্রভাব বাচ্চার ওপর পড়তে পারে।বাবা মায়ের চাহিদা বাচ্চাদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বাচ্চারা কী চাইছে তাদের ভবিষ্যতে কী ইচ্ছে, সেটা তার বাবা-মাকে বুঝতে হবে।

বয়ঃসন্ধিকালে বাচ্চারা খুব সংবেদনশীল হয়ে পড়ে কারণ এই সময়ই তাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। ক্লাস ৯-১০ এ পড়ার সময় তাদের ভাব আসে যে তারা সব জানে এবং সব বুঝে গেছে, সেটা সময়ের সঙ্গে ঠিক হয়ে যাবে।

অভিভাবকদের উদ্দ্যেশ্যে তাঁর পরামর্শ- জন্মের পর থেকে ৬ বছর পর্যন্ত বাচ্চাকে একদম স্বাধীন রাখুন, ৬ থেকে নিয়ে ১০-১১ বছর পর্যন্ত বাচ্চাকে সীমাবদ্ধ রাখুন,কী করবেন এবং কী করবে না সেটা শেখানো উচিত। আবার তার ১১ বছর বয়সের পর বন্ধুর মতো মিশুন।

শিশু যদি কোনও খেলার সঙ্গে যুক্ত থাকে,  তাহলে হার-জিত ব্যপারটায় তাদের অভ্যাস হয়ে যাবে।

যদি বাবা মায়েরা দুজনেই চাকরি করে তবে কতটা ‘কোয়ালিটি টাইম’ তারা তাদের বাচ্চাদের সঙ্গে কাটাচ্ছে, সেটা দেখা খুব জরুরি। বাড়িতে কেউ একজন থাকা খুব দরকার যার কাছে বাচ্চা এসে সব কথা বলতে পারে।

বাচ্চাকে কোনওভাবেই ফোন থেকে দূরে রাখতে পারবেন না। তাই বাবা মায়েদের দরকার কীভাবে তারা তাদের বাচ্চাকে ফোনের ব্যবহার শেখাবেন। তারা বেশী তাদের নিজেদের বন্ধুদের কথায় প্রভাবিত হয়, সেটার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

অনেক সময় বাচ্চাদের মধ্যে কিছু মানসিক সমস্যা দেখা যায় যেমন এডিএইচডি, এডিডি, লার্নিং ডিসেবিলিটি। বাবা মায়েদের দরকার সেদিকে খেয়াল রাখার। তাদেরকে বুঝতে হবে সমস্যাগুলোকে। এই অসুবিধেগুলোকে কাউন্সিলিং-এর মাধ্যমে বা থেরাপির মাধ্যমে সময়মত করালে ঠিক হয়ে যাবে।

নতুন বাবা-মায়েদের জন্য ডাঃ সুব্রত ভট্টাচার্য্যের পরামর্শ,নিজেদের সঙ্গে তাদের বাচ্চাদের মানসিক এবং শারীরিক, এই দুদিকেই সুস্থ রাখতে হবে। সবার আগে সেটাই খুব জরুরী।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...