নবজাতক-ছোট শিশুদের শুকনো কাশির সমস্যা কেন হয়?

নবজাতক-ছোট শিশুদের ড্রাই কফ বা শুকনো কাশির সমস্যা কেন হয়? নিরাময়ের উপায় কী, জানালেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সহেলী দাশগুপ্ত (DR SAHELI DASGUPTA, MBBS MD PEDIATRICS)

বাচ্চাদের অনেকদিন ধরে কাশি হচ্ছে। কিছুতেই সারছে না। রাতের বেলাতেও কাশির দাপটে ঘুম হচ্ছে না এমন সমস্যা এই মুহূর্তে ঘরে ঘরে। চিকিৎসকদের মতে একাধিক কারণে এই কাশি হয়ে থাকে।   

ডাঃ সহেলী দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, শুকনো কাশি যে কোনও ভাইরাল ইনফেকশনের পর হচ্ছে। কিছু ভাইরাস থাকে যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা, ক্রপ- যার জেরে অনবরত কাশতে থাকে বাচ্চারা। এছাড়া হুপিং কাশি হয়। মেডিকেল পরিভাষায় কাকে পাটুসিস বলা হয় তাতেও প্রচন্ড শুকনো কাশি হয়। এছাড়া কিছুদিন আগেই অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়েছিল সেই সংক্রমন সেরে গেলেও তার জেরে ফুসফুস যেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাতে একটা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হচ্ছে। আরও একধরনের শুকনো কাশি দেখা যায় বাচ্চাদের যা কিছুটা অভ্যাসের বসে হয়ে থাকে। একদম ছোট বাচ্চারা সারাক্ষণ কাশতে থাকে। অনেক সময় বাবা’মার নজর কাড়ার জন্য। তাদের এই কাশি রাতেরবেলা ঘুমিয়ে পড়লে আর হয় না।

যখনই কফের সমস্যা হবে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। অনেক বাচ্চার অ্যাজমার সমস্যা থাকে, তাদের একটু সর্দিকাশি হলেই ভাইরাল ইনফেকশনে অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা যায়। কাশি সারতে চায় না। তাদের নিয়মিত ওষুধের মধ্যেই থাকতে হবে। ইনহেলার নিতে হবে নিয়ম করে। সদ্যজাত শিশুর কাশির সমস্যা একটু আলাদা। তাদের কাশি যে সবসময় ভাইরাল ইনফেকশন থেকে হয় তা নয়। তাদের হুপিংকাশির সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। একদম ছোট শিশুদের ফিডিং করার সময় দুধ উপরে উঠে আসে। ফুসফুসে সেটাই কফ হিসেবে জমা হয়। দুইয়ের চিকিৎসা একেবারে আলাদা।

যাদের অয়াজমা বা এলার্জির সমস্যা বেশি হয় তাদের কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। যেমন বাড়িতে কার্পেট ব্যবহার না করা, পোষ্য থেকে সাবধানে রাখা, সফট টইয়েজ এড়িয়ে চলা, এয়ার পিউরিফায়ার রাখা যেতে পারে। শীতে কম্বল কভার করে রাখতে হবে। এই ছোট ছোট জিনিসগুলো যদি মেনে চলা হয় তাহলে সমস্যা অনেক কমে যায়।

ইনহেলার যেগুলো ব্যবহার করা হয় তার কিছু কন্ট্রোলার মেডিসিন আছে। যেগুলো ক্রনিক সর্দি-কাশি প্রতিরোধ করে। অনেকে কাশির সময় ইনহেলার ব্যবহার করলেও পরবর্তী সময়ে ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। যেটা একেবারেই ঠিক নয়। যে মেডিসিন কফ কমায় তা নিয়মিত চালিয়ে যাওয়া উচিত।

তবে কাশি হলেই ইচ্ছেমতো ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক বাচ্চাকে খাইয়ে দেওয়া উচিত নয়। যদি মনে হয় কফের জন্য নিঃশ্বাস নিতে পারছে না, জ্বর আসছে, বমি হচ্ছে তাহলে প্রথম এবং প্রধান কাজ শিশুকে বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া। বাড়িতে নেবুলাইজেশন একেবারেই না। দিতে হলে হাসপাতালে। কারণ সেখানে অক্সিজেনের মাধ্যমে তা দেওয়া হয়। ঘরোয়াভাবে মধু, তুলসিপাতা খাওয়া যেতে পারে। কিছু কিছু লজেন্স আচগে যা খেলে কাশির দমক কিছুটা কমে যায়।

কাশি মানেই শুশুমাত্র ফুসফুসের সমস্যা নয়, অনেক সময় হার্টের সমস্যা থেকেও একটানা কাশি হয়। কাশি ছাড়াও ওজন কমে যাওয়া, খিদে চলে যাওয়া, অত্যাধিক ঘামের উপসর্গ দেখা যায়। যদি দেখা যায় বাচ্চার অতিরিক্ত কাশি হচ্ছে, হাঁপানি চ্ছে, নিঃশ্বাসে প্রবল সমস্যা, ক্লান্তি, প্রস্রাবে সমস্যা, জ্বর আসছে তাহলে এইসব লক্ষণকে একাবারেই এড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়।    

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...