অটিজম আক্রান্ত শিশুকে কেমন ভাবে যত্ন করবেন

শৈশবের আনন্দমুখর দিন আর দৌড়ঝাঁপ-খেলাধুলো, যে কারোর প্রারম্ভিক জীবনেরই এক বড় অধ্যায়। সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার মধ্যে পড়াশোনা, নিত্যনতুন কিছু শেখা আর জানা এগুলির সাথে এক বড় ভূমিকা নেয়। তবে মানসিক ও শারীরিক দিক থেকে কোনও স্বাভাবিক শিশুসন্তান, সফলভাবে যেই কাজগুলি করে উঠতে পারে অথবা তার নিজস্ব লার্নিং প্রসেসের মাধ্যমে যতটা সহজেই কোনও কিছু আয়ত্ত করতে পারে, তা অনেক বাচ্চার ক্ষেত্রে সম্ভব হয়ে ওঠে না। আরও জোর দিয়ে বললে, বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন শিশুদের ক্ষেত্রে, সহজে শিখে ফেলার প্রবণতা বা আয়ত্ত করার শক্তি অনেকাংশেই কম থাকে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রকাশিত তালিকায় রয়েছে ২৭টি ডিজঅর্ডারের কথা। যার মধ্য অটিজম, অ্যাসপার্জার সিনড্রোম, ডাউন সিনড্রোমের মতন আরও অনেক জিনগত রোগের নাম তালিকাভুক্ত রয়েছে।

বর্তমানে, জিনগত রোগগুলিতে আক্রান্ত বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন শিশুরা অবশ্য সঠিক প্রশিক্ষণ এবং স্পেশাল এডুকেশনের মাধ্যমে অনেকাংশে আত্মনির্ভর হতে পারছে। অটিজম আক্রান্ত শিশুদের পড়াশোনা নিয়ে মনোবিদ এবং স্পেশাল এডুকেটর সুস্মিতা দত্তকে হেলথ কথার পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, বাচ্চারা অটিজম আক্রান্ত হলে কমিউনিকেশন, সোশ্যাল ইন্টারাকশন এবং রেস্ট্রিকটিভ রিপিটেটিভি বিহেভিয়ার এই তিনদিক থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন টেস্টের মাধ্যমে, অটিজম আক্রান্ত বাচ্চা কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা জানার চেষ্টা করা হয়। এবার একজন বাচ্চার প্রয়োজন অনুযায়ী, কোন ধরনের প্রশিক্ষন দরকার তা নির্ণয় করা হয়। যেমন বলা চলে, অটিজম আক্রান্ত শিশুরা স্বাভাবিক বাচ্চাদের মতন রং চিনে উঠতে পারে না অথবা নিজে হাতে খেতেও তাদের অসুবিধা থাকে। বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সেগুলি শেখানো হয়। অটিস্টিক অনেক বাচ্চারাই হয় ভীষণ হাইপারঅ্যাক্টিভ অথবা অনেকের মধ্যে আইকিউ লেভেল স্বাভাবিকের থেকে বেশ কম থাকে। সেক্ষেত্রে, তাদের সঠিক ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে অনেকটাই সুস্থ করে তোলা যায়।

অটিস্টিক আক্রান্ত বাচ্চাদের বাবা মায়ের কি করা উচিত এই নিয়ে সাইকোলজিস্ট সুস্মিতাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে বাবা মায়ের কখনোই হীনমন্যতায় ভোগা উচিত নয়। সন্তান অটিস্টিক এটি বোঝা মাত্র সাথে সাথে তার স্পেশাল এডুকেশন শুরু করানো উচিত। অটিজমের বাচ্চাদের সেলফ কেয়ার এবং প্রাইভেসি মেইনটেইন শেখানো ভীষণভাবে দরকার। বাচ্চাদের কোথায় পোশাক বদলাতে হবে, সবার সামনে কেমন ব্যবহার করতে হবে অথবা গুড টাচ-ব্যাড টাচ এই সব বিষয়েও শেখানো এবং ধারণা দেওয়া উচিত। তবে অবশ্যই এগুলি খেলার ছলে প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। তবে মডারেট পর্যায়ে থাকা অটিস্টিক বাচ্চাদের জন্য স্পেশাল এডুকেশনও ভীষণ ভাবে প্রয়োজন।

অভিভাবকদের উচিত বাড়িতে অটিস্টিক শিশু থাকলে, সবসময় নিজের ধৈর্য্য ধরে রাখা। বিহেভেরিয়াল প্রবলেম এবং সাইকোটিক ফিচার্স অটিজিম আক্রান্ত বাচ্চাদের থাকার দরুন বহু বাবা মা খুবই মনোকষ্টে ভোগেন। এক্ষেত্রে অভিবাবকরা দরকার পড়লে প্যারেন্টাল কাউন্সেলিং করতে পারেন। কারণ, বাবা মায়ের মনের স্বাস্থ্য ভাল থাকলেই, বাচ্চাও মানসিক দিক থেকে স্বাভাবিক থাকবে। অটিজম যেহেতু একটি 'ব্রেইন ডিসঅর্ডার', তাই এর থেকে পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। ড. সুস্মিতার মতে অটিজম ভীষণই ইউনিক। অটিস্টিক বাচ্চারাও অনুভূতিপ্রবণ এবং হাইফাংশনিং। অটিজম নিয়ে বেড়ে ওঠা বাচ্চারা, ডাক্তার বা ইঞ্জিয়ার না হতে পারলেও, তাদের মধ্যে অনেকেই ভাল খেলোয়াড় অথবা গায়ক হয়ে উঠতে পারে। হেলথ কথার পক্ষ থেকে, ড. সুস্মিতাকে অটিস্টিক বাচ্চাদের বৈবাহিক জীবন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কারোর অটিজম যদি খুব মাইল্ড কন্ডিশনে থাকে, তার বিয়ের ব্যাপারে ভাবা গেলেও যেতে পারে। কিন্তু এসব নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে আগে থেকে পরামর্শ করে নিতে হবে।

ড. সুস্মিতা দত্ত বাবা মায়ের উদ্দেশ্যে আরও জানান, বাচ্চাকে সবসময় ভাল কাজের জন্য প্রশংসা করা উচিত। তাদের ভাল কাজের জন্য ছোটখাটো উপহার দেওয়াই যেতে পারে। অটিস্টিক বাচ্চাদের জেদ বা রাগ তৈরি হলে, তাদের শাসন না করে, আদর আর ভালবাসা দিয়ে বোঝানো উচিত। তবে সবসময় যে বাচ্চাদের আদরই দিতে হবে তা নয়, দরকার পড়লে বাচ্চাদের কার্যকলাপকে ইগনোরও করা দরকার। সবসময় সবকিছু নিয়ে বাবা মায়ের একদমই উচিত নয় বাচ্চার পিছনে পড়ে থাকা। কোনও বাচ্চা মনোযোগ পেতে গিয়ে দুষ্টুমি শুরু করলে, তাকে না বকে তার শান্ত হয়ে না বসা অবধি অপেক্ষা করে যেতে হবে। বাচ্চা বসলে এরপর তার প্রশংসা করলে, বাচ্চাটিও যেমন খুশি হবে তেমনই পরেরবার থেকে সে সঠিক নিয়ম মেনে চলতেও উৎসাহী থাকবে, শুধুমাত্র 'গুড বয়' অথবা 'গুড গার্ল' শোনার আশায়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...