প্রতিটি দিন হোক নার্স দিবস

রোগ আর রোগীর সঙ্গে কেটে যায় দিন থেকে রাত।  মরণাপন্ন মানুষকে জীবনে ফেরানো, অসুস্থকে সুস্থ করে তোলা- এই নিয়েই তাঁদের দিন প্রতিদিনের জীবন। পেশাগত দায়বদ্ধতার কাছে তুচ্ছ হয়ে যায় ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখ, পরিবার। নার্স হওয়ার চাপ কম নয়। কোন ম্যাজিকে হাসিমুখে সেই চাপ সামলান তাঁরা? 'আন্তর্জাতিক নার্স দিবস'-এর(International Nurses Day) বিশেষ পর্বে জানালেন সুবিনি থমাস (Subini Thomas, GM Nursing, AMRI Hospital, Mukundupur)

সুবিনি থমাস বত্রিশ বছর ধরে এই পেশায়। কর্মজীবনের চোদ্দো বছর কাটিয়েছেন সেনাবাহিনীতে নার্সের ভূমিকায়। সতেরো বছর ধরে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে হেড নার্সের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তিনি জানিয়েছেন এই পেশায় স্ট্রেস কম নয়। ৯০ শতাংশ নার্স স্ট্রেসের সমস্যায় ভোগে। কিন্তু সেই চাপ যাতে তারা কাটিয়ে উঠতে পারে সে ব্যাপারে সব রকম সাহায্য করা হয়। অত্যাধিক কাজের চাপ,ক পারিবারিক জীবন একাধিক কারণে মানসিক চাপ আসতে পারে। বিবাহিত হলে সমস্যা আরও বাড়ে। তখন স্বামী, সন্তান, পারিবারিক দায়দায়িত্বের ব্যাপার এসে যায়। আবার নিজের রাজ্য ছেড়ে ভিন রাজ্য ভিন্ন পরিবেশে মানানোর ব্যাপার থাকে।

এশব ক্ষেত্রে জুনিয়রদের সন্তান স্নেহে পাশে থাকার চেস্তা করেন তিনি। তাদের কাউন্সিলিং করা হয়। সময় দেওয়া হয়। ওভার টাইম ডিউটি হলে রিফ্রেশমেন্টের ব্যবস্থা থাকে। যাতে স্ট্রেসের সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে তারা।

কীভাবে সামলেছেন করোনা কাল? সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনার সময় প্রচন্ড সঙ্কটের মধ্যে পড়তে হয়েছিল। একে অজানা ভাইরাস। কোন চিকিৎসায়, কীভাবে রোগী সামলানো যাবে সেদিকটি যেমন একেবারে নতুন তেমনি নার্সদেরও পড়তে হয়েছিল অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে। চারপাশের ভয় আতঙ্কের ছোঁয়া লেগেছিল তাঁদের গায়েও। সেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছিল পরিবার, পরিজনের উদ্বেগে। সেই সময় নার্সদের বাড়ি পরিবারকে যেমন বুঝিয়ে সামলাতে হয়েছিল তেমনি নার্সদের খেয়ালও রাখতে হয়েছিল। তাদের বিশেষ যত্নে রাখা হত। প্রতি শিফটে দেওয়া হত হাই প্রোটিন ডায়েট।

রোগীদের সঙ্গে নার্সদের সর্বক্ষণের যোগাযোগ। অনেক সময় তা যেন মা আর সন্তানের সম্পর্ক হয়ে উঠে। ওষুধ থেকে চিকিৎসক, রোগযন্ত্রণা থেকে নিরাময় সবই তাঁদের কাছে। তাই সুবিনি দেবী বলেন, নিজেদের জীবনে যাই হোক না কেন, রোগীর সেবায় তার প্রভাব পড়তে দেওয়া যায় না।

'আন্তর্জাতিক নার্স দিবস-এ মানুষের প্রতি তাঁর বার্তা, সমাজ এবং দেশ যেন যথাযথভাবে বুঝতে পারে সমাজে নার্সদের ভূমিকা। তাদের যেন সেই যোগ্য সম্মান দেওয়া হোক। নাহলে অচিরেই ভুগতে হবে নার্স সঙ্কটে… 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...