ভাল কথা মন ভাল করে দেয়, খারাপ কথায় মন খারাপ হয়। মুষড়ে পড়ে মানুষ। ‘আপনি সেরে উঠবেন’-চিকিৎসকের এই একটা কথাই অনেকটা চাঙ্গা করে দেয় রোগীকে। কথায় বলে মন ভাল থাকলে সব ভাল থাকে। শরীরের অসুস্থতায় সেরে ওঠার সাহস দেয় মন। মন শক্ত থাকলে তবেই রোগের ওষুধ কাজ করে-এ অতি প্রচলিত বিশ্বাস। আসলে সব কিছুর নেপথ্যে অনুঘটক ইতিবাচক মানসিকতা। কথা সেই আবেগকে চালিত করে নিরাময়ের দিকে।
ইতিবাচক কথা ও ইতিবাচক আবেগ কীভাবে স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে জানালেন, মনোবিদ সুকন্যা ঘোষ (Sukanya Ghosh, Counselling Psychologist)
মনোবিদ সুকন্যা ঘোষ জানিয়েছেন, আমাদের দেশে শারীরিক স্বাস্থ্যকে যতটা গুরুত্ব দেওয়া হয় মানসিক স্বাস্থ্যকে ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অথচ মনকে ভাল রাখা ততটাই গুরুত্বপূর্ণ যতটা শারীরিক ভাল থাকাটা দরকার। পজেটিভ মেন্টাল হেলথ নিয়মিত ব্যাপার হওয়া উচিত আমাদের জীবনে।
মনখারাপ আর মন ভাল নিয়ে জীবন। মন কোনওদিন একটু ভাল হল, কোনওদিন একটু খারাপ সব মিলিয়ে দৈনন্দিন চলে, কিন্তু টানা বেশ কিছুদিন যদি মনে মনে অস্বস্তি বোধ হয়, খিটখিটে মেজাজ, খুব সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছে মন, আগে যে কাজ অনেক সহজে করতে পারতেন সেই কাজই করতে অনেক সময় লাগছে এরকম অবস্থা হলে বুঝতে হবে সেই মুহূর্তে মনের স্বাস্থ্য হয়ত খুব ভাল নেই।
পজিটিভ মেন্টাল হেলথ আমাদের প্রতিদিনের কাজে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। যেমন ধরুন গত সাতদিন আপনি কোনও অসুখে ভুগছেন, স্বাভাবিকভাবেই কিন্তু মনে তার প্রভাব পড়বে। আমি কি আর ভাল হব না?- এরকম ভাবনা চিন্তা ঘোরাফেরা করলে তা কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়। মেন্টাল হেলথ আমাদের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, তাই পজিটিভ থাকাটা দরকার।
আবেগ দু’রকম হয়। একটা ইতিবাচক আবেগ, অপরটি নেতিবাচক আবেগ। আমাদের জীবনে দুটোই কাজ করে। একদিন হয়ত ঘুম থেকে উঠে মনে হল অফিসের ওই কাজটা শেষ হয়নি এটা একধরনের নেগেটিভ আবেগ, আবার কোনও দিন অফিসের শেষে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে ভেবে মন খুব খুশি-এটা একটা ভাল লাগা, ইতিবাচক আবেগ। দুটোই পাশাপাশি চলে।
প্রতিদিন যদি নেতিবাচক আবেগ বাড়তে থাকে তাহলে তা মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলবে। পরিবেশের ওপর নির্ভর করে মনের স্বাস্থ্য। আমি ভাল নেই, আমার ভাল লাগছে না, আমি আগের চেয়ে অনেক বেশি নিজেকে ক্লান্ত অনুভব করছি মানসিক ভাবে, বা আমার মনে হচ্ছে আমার মাথায় একটা চাপ তৈরি হয়েছে যা আগে অনুভূত হয়নি কখনও, খিদে ও খুব কমে গিয়েছে- এরকম পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গেলে কাউন্সিলিং বা মনোবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার।
চিন্তাভাবনার জটিলতা মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। মনোবিদ সেই জটিলতাকে চিহ্নিত ও বিশ্লেষণ করে রোগীকে বুঝতে সাহায্য করেন। জীবনের পরিস্থিতিকে অন্য চোখে দেখার পরামর্শ দেন তিনি।