ক্যানসার চিকিৎসায় অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনে কীভাবে সুস্থ জীবন ফিরে পাওয়া সম্ভব?

অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন বা বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট কী? ক্যানসার চিকিৎসায় অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনে কীভাবে সুস্থ জীবন ফিরে পাওয়া সম্ভব? বোন ম্যারো দাতা কীভাবে নির্বাচন করা হয়? বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন নিয়ে বিশদে জানালেন হেমাটো অঙ্কোলজিস্ট, বোন ম্যারো ট্র্যান্সপ্লান্ট ফিজিশিয়ান ডাঃ শিশির পাত্র।

ক্যানসার চিকিৎসায় বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট আসলে কী, এ প্রসঙ্গে ডাঃ শিশির পাত্র জানিয়েছেন,  প্রথমত বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টটা একটু গুছিয়ে বললে আসলে কথাটা হবে স্টেমসেল ট্রান্সপ্লান্টেশন। বোন ম্যারো থেকে স্টেমসেল থেকে সংগ্রহ করে সেটাকেই থেরাপিতে ব্যবহার করা হয়। তাই বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লেটেশনকে একটু ভালো ভাষায় বললেই বলা হয় স্টেমসেল ট্রান্সপ্লান্টেশন।

স্টেমসেল ট্রান্সপ্লান্টেশন যে যে রোগে প্রয়োজন পড়ে, তার মধ্যে প্রধানত হল একিউট লিউকেমিয়া, একিউট হাইপাপ্লাস্টিক লিউকেমিয়া, অ্যাকিউট মাইনর লিউকেমিয়া, হজকিন লিম্ফোমা এবং নন হজকিন লিম্ফোমা। এছাড়াও রয়েছে মাল্টিপল মাইলোমা।

এই ট্রান্সপ্লান্ট সার্জিকাল পদ্ধতিতে হয় না। পুরো ট্রান্সপ্লান্ট প্রসেসটাই হয় নন সার্জিকাল প্রসেসের মাধ্যমে। কী ধরণের ট্রান্সপ্লান্ট সেটার দিকে আগে দেখা হয় তারপর পেশেন্ট অথবা ডোনারের কাছ থেকে শুধুমাত্র স্টেমসেল সংগ্রহ করা হয়। এটি একটি বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে করা হয়, সেটি হল এফেরেসিস মাধ্যম। পেশেন্টকে শরীরে কিছু ওষুধ প্রয়োগ করা হয় যেটাকে 'কন্ডিশনিং মেডিসিন্স' বলা হয়। তারপরে পেশেন্টের বোন ম্যারোটাকে ক্লিন করে স্টেমসেলটাকে ভেনের মাধ্যমে পেশেন্টের শরীরে দেওয়া হয়।

এই সার্জারিতে প্রথমে আগে কেমো থেরাপি ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়। যদি এই থেরাপিতে রেসপন্স করে যায় তাহলে স্টেমসেলের প্রয়োজন হয় না। যদি কেমোথেরাপিতে রেসপন্স করলো না বা রেসপন্স করলো তবে রোগটা আবার ফিরে এলো, তখন স্টেমসেল ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়।

কিন্তু কিছু রোগ যেগুলো খুব 'হাই রিস্ক' সেখানে ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়। সেখানে প্রথমে রোগটাকে কেমোথেরাপির দ্বারা কমিয়ে ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়। এই সার্জারি ডিপেন্ড করে রোগটা 'লো risk' নাকি 'হাই রিস্ক'। এর সঙ্গে কোনও জেনেটিক ফ্যাক্টর নির্ভর করে।

এই স্টেমসেল সোর্স কি পেশেন্ট নিজে হতে পারে নাকি জেনেটিক কাউকে এই সোর্সটা করতে হয়? এর উত্তরে ড: শিশির পাত্র জানিয়েছেন যদি মাল্টিপল মাইলোমা ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়, সেক্ষেত্রে ট্রান্সপ্লান্টের ভাগের মধ্যে পড়ে আউটলোগোস স্টেমসেল ট্রান্সপ্লান্ট। অটো মানে নিজের শরীর থেকে স্টেমসেল সংগ্রহ করে আবার নলতার শরীরেই স্টেমসেলটা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। হজকিন লিম্ফোমা, নন হজকিন লিম্ফোমা এবং মাল্টিপল মাইলোমা এখানে প্রধানত অটোলোগোস ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়।

যখন আমরা এইলোজেনিক টান্সপ্লান্ট করা হয় তখন প্রয়োজন পড়ে একজন ডোনারের। সেই ডোনার বাড়ির লোক হতে পারে, যদি আলোজেনিক ম্যাচ করে, যেমন বাড়ির ভাই বোন। যদি ম্যাচ আনরিলেটেড হয় তবে ভারত বা বিদেশে অনেক রেজিস্ট্রি আছে। সেই রেজিস্ট্রিতে এইচএলএ পাঠাতে হয়। সেখানে ইচ্ছুক ডোনার তাদের এইচএলএ-এর একটা ব্যাংক রাখা থাকে। তাঁদের সঙ্গে পেশেন্টের ম্যাচ করানোর চেষ্টা হয়। যদি ম্যাচ হয় তখন স্টেমসেল সংগ্রহ করে পেশেন্টকে দেওয়া হয়।

এখনকার দিনে আর এক ট্রান্সপ্লান্ট এসেছে, যেটা খুব বাড়ছে সেটাকে বলা হয় হাফ ম্যাচ ট্রান্সপ্লান্ট বা হ্যাপলো আইডেন্টিকাল ট্রান্সপ্লান্ট। এ ক্ষেত্রে ডোনার একজন আলাদা মানুষ তবে এক ফ্যামিলির মধ্যে। মানে সে ভাই কিন্তু ১০/১০ এইচএলএ ম্যাচ নয়, হাফ ম্যাচ। সেক্ষেত্রে ভাই, বোন, বাবা, মা হতে পারে। এই হাফ ম্যাচ ট্রান্সপ্লান্ট খুব তাড়াতাড়ি বাড়ছে এবিং পেশেন্টদের আউটকাম খুব ভালো। এই ক্ষেত্রে ডোনারের এবিলিটিটা বেড়ে যাচ্ছে এবং এটার খরচটাও খুব কম।

বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট চিকিৎসা ছাড়া কি আর কোনো চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়? ড: শিশির পাত্র জানিয়েছেন ক্যানসার ছাড়াও অনেক রোগেতে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ব্যবহার করা হয় প্রগ্রেস খুব ভালো। নর্থওয়েস্টার্ন দিকে একটা রোগ দেখা যায় সেটা হচ্ছে থ্যালাসেমিয়া। যাদের ম্যাচ রিলেটেড ডোনার আছে বাড়িতে তাঁদের যদি স্টেমসেল ট্রান্সপ্লান্টেশন করতে পারি তাহলে খুব ভালো। সাধারণত ৫ বছরের বাচ্ছাদের করলে খুব ভালো এবং ১০ বছরের বাচ্ছাদের হলেও ভালো। তার ওপরে বয়স হলে কঠিন হয়ে যায় ট্রান্সপ্লান্টটা। এই থ্যালাসেমিয়া রোগ থেকে মুক্তি পেতে গেলে এই বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট খুবই ভালো অপশন। পুরো ৮০% একদম সেরে যায় এবং সারা জীবনে আর রক্ত লাগবেনা।

আরও এক রোগ যেটায় বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন চিকিৎসা দিয়ে নির্মূল করা হয় সেটা হচ্ছে অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানেমিয়া। এটা একটা নন ক্যানসেরাস রোগ। এই রোগের ক্ষেত্রে হিমোগোলবিন, হোইট ব্লাড সেল, প্লেটলেট যেগুলো বোন ম্যারো থেকে তৈরী হয় সেগুলো সব কমে যায়। যদি ৪০-৫০ এর নিচে বয়স হয় তাহলে ট্রান্সপ্লান্ট করলে সেটার আউটকাম খুবই ভালো। ৮০% সব কিছুই আবার ঠিক হয়ে যাওয়া সম্ভব। এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের ইমিউনোলজি রোগ আছে যেখানে এই ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়।

স্টেমসেল ট্রান্সপ্লান্ট করলে ডোনারের কোনো ক্ষতি হয়না এবং স্টেমসেল সংগ্রহ করাটা প্রচন্ড একটা ক্লোস্ড সেট প্রসেস। এতে পেশেন্টের কোনো ইনফেকশন বা সমস্যা হয়না।

ক্যান্সারের বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের রিস্ক থাকে। প্রথমটি হচ্ছে ট্রান্সপ্লান্ট প্রসেসের সময় ২-২.৫% সম্ভবনা থাকে মৃত্যু। এটা বাদ দিলে এই প্রসেসের পড়ে গাভাশাসর রোগ, সেটা হচ্ছে স্টেমসেল নিয়ে পেশেন্টের শরীরে দেওয়ার সময় একটা রিয়েকশন তৈরী হয়। বিভিন্ন ধরণের ইনফেকশন হতে পারে। অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানেমিয়া হতে পারে। ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হিতে পারে। এগুলোর প্রত্যেকটার ট্রিটমেন্ট আছে।

একজন বোন ম্যারো ডোনারের প্রকৃত বয়স সীমাবদ্ধ নয়। ৫ বছরের নিচে শিশু থেকে ৬০ বছরের মধ্যেও হতে পারে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...