টিকা নেওয়ার পরেও কি শিশুরা টাইফয়েডে আক্রান্ত হতে পারে? টাইফয়েড প্রতিকারে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা কীভাবে কাজ দেয়? টাইফয়েডে আক্রান্ত হলে যত্ন নেবেন কী ভাবে? বিস্তারিত জানালেন, বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ডাঃ কে.এ. মোহিত (Dr. K.A.MOHIT, Homeopathy Doctor)
ডাঃ কে.এ. মোহিত জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন বা টিকা নিলেই যে সেই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে ১০০ শতাংশ মুক্ত এমন বলা যায় না। ৬০ শতাংশ মানুষের মধ্যে আশানুরূপ কাজ করলেও ৪০ শতাংশের ক্ষেত্রে কাজ না করার আশংকা থেকে যায়। করোনার ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে বহু মানুষ টিকা নিয়েও প্রাণ হারিয়েছে। টিকা নেওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বৃদ্ধি পায়। টিকা নেওয়া থাকলে টাইফয়েড হলেও তাকে মারণের জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে না।
এলোপ্যাথিতে ভ্যাকসিন বেশি প্রচলিত হলেও হোমিওপ্যাথিতেও ভ্যাকসিন আছে। টাইফয়েড সম্পর্কে সচেতনতায় প্রাক পুজো সময়কাল অতি গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষার বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় জল জমে। অপরিশোধিত জল থেকে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মতো বিভিন্ন রোগ হয়।
টাইফয়েড হয় সালমোনেলা টাইফি নামে একটি ব্যাকটেরিয়া থেকে। ফিকো-ওরাল রুট দিয়ে যে সমস্ত নিঃসরণ হয় তার মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া বাইরে বেরিয়ে আসে। যদি কোনও কারণে খাদ্য বস্তুর সঙ্গে মিশে মুখে যায় তাহলে তা শরীরে মিশে যায়। লালারস তাকে প্রতিরোধ করতে পারে না। শরীরে প্রবেশ করে দ্রুত হারে ছড়াতে থাকে ব্যাকটেরিয়া। তার ফলে ফুসফুস, যকৃত, প্লীহা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এই রোগের কতগুলো পর্যায় আছে। প্রথম, দ্বিতীয় তৃতীয় ও চতুর্থ পর্ব।
শিশুর জ্বর যদি ১০০ হয় আর পালস রেড যদি ৭০ কিংবা ৮০ দেখায় তাহলে বুঝতে হবে যে সমস্যা আছে। তারপরই চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষার কথা ভাবেন। টাইফিডট নামে একটি টেস্ট এসেছে এখন যার মাধ্যমে খুব সহজেই টাইফয়েড হয়েছে কি না নির্ণয় করা যায়। আগে বিডাল টেস্ট ছিল। সেটা সময় সাপেক্ষ পরীক্ষা ছিল। আক্রান্ত হওয়ার প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায় তখন দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে কঠিন হয়। টাইফয়েড জ্বরের একটা বিশেষ ধরন আছে। প্রথম সপ্তাহে এই জ্বর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। মাথা যন্ত্রণা থাকে। দ্বিতীয় সপ্তাহে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তপাত হতে শুরু করে। ডায়রিয়ার সমস্যা হয়। জ্বর আস্তে আস্তে কমতে পারে কিন্তু কখনই বেস লাইন টাচ করবে না। নিউমোনিয়া আসতে পারে। এরপরও যদি রোগকে বাড়তে দেওয়া হয় তাহলে তৃতীয় ধাপে আরও ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। ব্লাড ব্রেন বেরিয়ার পার হতে সমর্থ হয় ব্যাকটেরিয়া।। তখন পুরো স্নায়ুতন্ত্রে তার প্রভাব পড়ে। নিউরোলজিক্যাল সমস্যা দেখা দেয়। রোগী চেতনাহীন হতে শুরু করে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। টাইফয়েডের চতুর্থ সপ্তাহে মৃত্যু রেট খুব বেশি। সুতরাং টাইফয়েডকে খুব সাধারণ জ্ঞান করলে হবে না। কোনও ব্যক্তি টাইফয়েড থেকে সেরে উঠলেও বহু কাল পর্যন্ত তাকে বহু রকমের শারীরিক সমস্যায় পড়তে হয়। চুল পড়ে যায়, রোগ ফিরে আসে। টাইফয়েডের দোসর হিসেবে নিউমনিয়া আসতেই পারে।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় টাইফয়েড প্রতিরোধের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রয়েছে। মূলত সিম্পটন দেখে চিকিৎসা করা হয়।শুরুতেই দেখে নেওয়া হয় রোগ কোন পর্যায়ে আছে এবং শরীরে কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়।
কীভাবে বোঝা যাবে টাইফয়েড হয়েছে?
প্রথমেই পালস চেক করতে হবে যে কতগুলো বিট আসছে আর তাপমান কত। চিকিৎসা সূত্র অনুযায়ী আপনার যদি এক ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়ে তাহলে সাধারণ জ্বর হলে দশ ঘর অর্থাৎ পালস বিট দশ বাড়বে সাধারণ মানুষের পালস রেট থাকে ৭০ থেকে ৮০। যদি কারও ১০০ হয় তাহলে পালস হওয়া টাইফয়েড উচিত ৯০। সেখানে যদি দেখা যায় ৬০-৭০ পালস তাহলে বুঝতে হবে জ্বর টাইফয়েডের দিকে যাচ্ছে। একবার টাইফয়েড হলে আর হবে না এমন না। ডাবল টাইফয়েড হতে পারে। তাছাড়া একবার টাইফয়েড হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই দুর্বল হয়ে যায় যে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
রোগীকে কোনও শক্ত খাবার দেওয়া যায় না। হাই ক্যালারি লিকুইড খাবার দেওয়া হয়। খাবারের অভ্যাস, নিয়ম করে হাত ধোয়া এসবই এই রোগের অনুঘটক।