Health katha: কানে জল ঢুকে গেলে কী করা উচিত?

দৈনন্দিন জীবনে ছোট ছোট সমস্যা বড় সমস্যার কারণ হতে পারে। যেমন স্নান করার সময় যদি হঠাৎ কানের মধ্যে জল ঢুকে যায়, তবে সেটা থেকে কানের কতটা ক্ষতি হতে পারে? তার সমাধানই বা কী?

এই বিষয়ে সমাধান দিলেন ENT স্পেশালিস্ট ড: শিব শঙ্কর পাল।

হাইলাইটস,

১। বাচ্চাদের কানের জল ঢুকলে কি করা উচিত?

২। কানে জল ঢুকে গেলে কী করা উচিত?

৩। ইয়ারবার্ডস কি কানের পক্ষে ক্ষতিকারক?

 

কানে জল ঢুকে যাওয়া কী ক্ষতিকর হতে পারে?

কানে জল ঢুকে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে স্নান করা। বাড়িতে স্নান, পুকুর, সমুদ্র বা সুইমিং পুলে স্নান করতে পছন্দ করেন অনেকে। কিন্তু এই প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সমুদ্রর জল:

সমুদ্রের জল যেহেতু নোনা হয় তাই সেটা আমাদের চামড়ার পক্ষে ক্ষতিকারক। সমুদ্রের জল কানে ঢুকলে কানের পর্দা তো বটেই কানের বাইরের ক্যানালেও বালি জমে একটা স্কিন রিয়েকশন দেখা দেয়।

কানে এই সমস্যা দেখা দিলে, কান ভারী হয়ে যাবে এবং কানে ব্যথা করবে।

সুইমিং পুলের জল:

সুইমিং পুলের জল ক্লোরিনযুক্ত হয়। এটি স্কিনের পক্ষে ভালো নয়। প্রত্যেক সুইমিংপুলেই সেটি একটি বিশেষ মাত্রায় ব্যবহার করা হয়, তৎসত্ত্বেও বাচ্চাদের জন্য এটি খারাপ।

কানে এই সমস্যা দেখা দিলে কানে জ্বালা করবে এবং ফাংগাল ইনফেকশন দেখা দেবে।

কানের বাইরের অংশ খোলা হলেও কানের ভেতরের অংশ পর্দা দিয়ে বন্ধ থাকে। সুতরাং জলের মাধ্যমে ফাঙ্গাস বা ব্যাকটেরিয়া যদি কানের মধ্যে প্রবেশ করে তবে সেই বন্ধ জায়গায় সেটি বাড়তে থাকে। ফলে কানে ইনফেকশন দেখা দেয়। এই ইনফেকশন কানের পর্দাকেও ছিদ্র করে দিতে পারে।

পুকুরের জল:

পুকুরের জল বেশিরভাগ সময় পরিষ্কার হয় না। দৈনন্দিন ব্যবহারের ফলে এই জলে সবসময়ই ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস থাকে। এটি জলের সাথে কানে ঢুকে গেলে ইনফেকশন হবে।

বাড়ির জল :

বাড়িতে ব্যবহৃত জল সব সময় খাওয়ার যোগ্য হয় না। অনেকের বাড়িতেই খাওয়ার জল এবং স্নানের জল আলাদা হয়। সেক্ষেত্রে জলের ট্যাঙ্ক যদি অপরিষ্কার থাকে তবে কলের মাধ্যমে সেই ব্যাকটেরিয়াগুলি বের হয় এবং সেই জল যদি স্নান করার কাজে ব্যবহৃত হয় তবে, ফাংগাস ইনফেকশন দেখা দেবে।

কানে জল ঢুকে গেলে কী করা উচিত?

প্রথমত, কানে জল ঢুকে গেলে বেশিরভাগ সময় তা নিজে নিজে বেরিয়ে যায়।

কিন্তু তাও যদি জল না বেরোয় তবে, কানের চারিপাশ ভালো করে মুছতে হবে এবং কানের লতি নিচের দিকে টান দিয়ে কান ঝাড়া দিতে হবে।

কিন্তু কানের ক্যানাল বেঁকে থাকার কারণে অনেক সময় এই পদ্ধতিতেও জল বেরোয় না। তখন যেকোনো ইয়ারবার্ড বা কান খোঁচানোর পরিষ্কার কাঠি নিয়ে  কানের মধ্যে হালকা করে ঢুকিয়ে রাখতে হবে। কারণ এই কাঠিগুলোর মাথায় তুলো দেওয়া থাকে, যা জলকে শোষণ করতে সাহায্য করে।

ইয়ারবার্ডস কি কানের পক্ষে ক্ষতিকারক?

ইয়ারবার্ডস সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে না জানলে তা কানের পক্ষে অনেক সময় ক্ষতিকারক প্রমাণিত হয়।

প্রথমত, নিম্নমানের ইয়ারবার্ড ব্যবহার করলে তা কানের মধ্যে থেকে যেতে পারে। কানে ঘাম হওয়ার ফলে সেই ইয়ারবার্ডটি কানে থেকে যেতে পারে।

দ্বিতীয়ত, ইয়ারবার্ড কানের অনেক ভিতরে ঢুকে গেলে তা কানের পর্দায় ফুটো করে দিতে পারে।

তৃতীয়ত, কানে অনেক বেশি পরিমাণে ময়লা থাকলে ইয়ারবার্ড দিয়ে কান পরিষ্কার করতে গেলে ময়লাটি কানের আরও ভিতরে ঢুকে যেতে পারে।

ফলে কানে বেশি পরিমাণে ময়লা জমার আগেই কিছুদিন অন্তর অন্তর কান পরিষ্কার করা উচিত।

বাচ্চাদের কানে জল ঢুকলে কি করা উচিত?

এক বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের কান থেকে পুঁজ বেরোনোর সমস্যা হয়। এর কারণ হল, মা তাকে সঠিকভাবে দুধ পান করাতে পারছে না অর্থাৎ শুয়ে বাচ্চাকে দুধ পান করাচ্ছে।

কানের পেছনের দিক একটা হলো স্পেস থাকে। সেই হলো স্পেস থেকে একটা টিউব নাক অবধি গিয়ে থামে। এই টিউবটি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সোজা থাকে। ফলে শুয়ে দুধ খাওয়ানোর সময় কিছুটা দুধ যদি থেকে গড়িয়ে নাক দিয়ে ঢোকে তখন সেটি কান অবধি চলে যায় এবং কানের পর্দায় একটি ইনফেকশন তৈরি করে।

এই কারণেই ব্রেস্ট ফিডিং করানোর সময় বাচ্চাকে সামান্য বসিয়ে মাথাটা হালকা উঁচু করে ব্রেস্ট ফিডিং করানো উচিত।

বাচ্চাদেরকে বাথটবে বসিয়ে স্নান করানোর ক্ষেত্রেও কান হাত দিয়ে আড়াল করে স্নান করানো উচিত। তবেও যদি এই কারণে কানে জল ঢুকে যায় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

ডাক্তার হালকা ওষুধ এবং এয়ার ড্রপ দিলে প্রায় ৭ দিনের মধ্যে সমস্যা মিটে যায়।

দর্শকদের প্রশ্ন:

কানে জল ঢুকে গেলে কী বড় সমস্যা হতে পারে?

বড় সমস্যা বলতে ওটোমাইকোসিস। ফাংগাল ইনফেকশন একটি জায়গায় হলে সেটি বারবার হতে পারে। এটি কানের পক্ষে ক্ষতিকারক কারণ, ৫০ শতাংশ কেসে এটি কানের পর্দা ফুটো করে দিতে পারে।

ফাংগাস ইনফেকশন হলেই কান চুলকাবে এবং কানে ব্যথা হবে। এক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

কানের ফাঙ্গাস রিমুভ করে দিলে কানে আর ক্ষতি হয় না।

এছাড়াও ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন হতে পারে। এক্ষেত্রেও কান ফুলে যায় এবং কানে প্রচন্ড ব্যথা হয়। বিশেষভাবে, বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন খুব ক্ষতিকারক।

ছোট বাচ্চার কানের সমস্যা কীভাবে বোঝা সম্ভব?

আড়াই বছর বাচ্চার কানের সমস্যা হলে সে কানে ব্যথা বলে বোঝাতে পারে। কিন্তু তার থেকে ছোট বাচ্চার হলে সে বারংবার কান টানবে এবং কানে হাত দিতে থাকবে। এক্ষেত্রেও তাড়াতাড়ি সমস্যা চিহ্নিত করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...