ফাঙ্গাল ইনফেকশনের সমস্যায় ছোট থেকে বড় সকলেই ভোগেন। কিন্তু এই সমস্যা কেন দেখা দেয়? হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ফাঙ্গাল ইনফেকশনের ক্ষেত্রে কতটা সাহায্য করে? এই নিয়ে পরামর্শ দিলেন বি.এইচ.এম.এস কনসালটেন্ট হোমিওপ্যাথ ডঃ পল্লব হালদার (Dr. Pallab Haldar) ...
ফাঙ্গাল ইনফেকশন কেন হয়?
এটি একটি স্কিন টু স্কিন প্রবলেম। অর্থাৎ, এটি একজনের ত্বক থেকে অন্যের ত্বকে খুব সহজে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও আমরা যেহেতু খুব জনবহুল এলাকায় থাকি, তাই ছত্রাক সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি থাকে।
বাস, ট্রেন, অটো, প্রভৃতি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট-এ প্রতিনিয়ত যাতায়াত, এছাড়াও একসাথে অনেকে বসবাস করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দূরত্ব বজায় না রাখলে, এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ফাঙ্গাল ইনফেকশনের লক্ষণগুলি কী কী?
এই ইনফেকশন হলে চুলকানি এবং র্যাশ দেখা দেয়। এবং সেটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে যেতে থাকে।
এটি কী একটি মারণ রোগ?
সুপারফিসিয়াল ফাঙ্গাল ইনফেকশন মারণ রোগ নয়। কিন্তু এটি সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপনের বিরুদ্ধে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। প্রচন্ড পরিমাণে চুলকানি এবং ইরিটেশন হওয়ার ফলে কাজে ফোকাস করা যায় না।
ফাঙ্গাল ইনফেকশন এর ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি কতটা কার্যকরী?
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার সমস্ত ধরনের রোগের ক্ষেত্রেই কার্যকরী। অনেক পুরাতন ট্রিটমেন্টে হিসেবে কিছু অ্যান্টিফাঙ্গাল ট্রিটমেন্ট করা হয়। কিন্তু ট্রিটমেন্ট বন্ধ করে দিলেই সেটি আবার হয়। কিন্তু হোমিওপ্যাথি ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রে, সম্পূর্ণ ট্রিটমেন্টের সাহায্যে রোগটিকে মূল থেকে নির্মূল করে দেওয়া হয়।
ফাঙ্গাল ইনফেকশন রোগটি অনেক সময় বাইরে থেকে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। তাই প্রাথমিক স্তরে আমাদের সাধারণ ইমিউন সিস্টেম রোগটিকে আইডেন্টিফাই করতে পারেনা। তাই শুধুমাত্র বাহ্যিকভাবে ট্রিটমেন্ট যথেষ্ট নয়। ভিতর থেকে ফাংগাল ইনফেকশনের মূল রোগের চিকিৎসা করতে হবে। আর সেটা হোমিওপ্যাথিক ট্রিটমেন্টের সাহায্যেই সম্ভব।
এই রোগ দেখা দিলে অনেকে বাজার থেকে নিজের মত ওষুধ কিনে ব্যবহার করে। সেক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে চুলকানি থেকে আরাম পেলেও, জীবাণু সম্পূর্ণভাবে নির্মূল হয় না। ফলে এই রোগ আবার দেখা দেয়।
কী কী সর্তকতা অবলম্বন করলে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়ার প্রবনতা কমে যায়?
ফাঙ্গাল ইনফেকশন কমানোর জন্য পার্সোনাল হাইজিন মেইনটেইন করা খুব প্রয়োজন। একজনের ব্যবহৃত জিনিস অন্যজন ব্যবহার করলে এই রোগ দেখা দেয়। ফলে সেটিকে বাদ দিতে হবে।
এছাড়াও, কারোর যদি এই রোগ হয়, তবে তার জামাকাপড় আলাদাভাবে পরিষ্কার করা উচিত এবং রোদ্দুর বা গরম জলে ব্যবহৃত কাপড় ধোয়া জরুরী। নিজের একই জামাকাপড় বারংবার না ধুয়ে ব্যবহার করা যাবে না। এই বিষয়গুলি ফাঙ্গাল ইনফেকশনকে অনেক বাড়িয়ে দেয়। ফলে খুব ঢিলাঢালা ও পরিষ্কার, সুতির জামা-কাপড় পড়তে হবে।
তবে এই সংক্রমণের চিকিৎসা করবার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভীষণভাবে জরুরী। অনেকে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হলে নিজেরাই মার্কেট থেকে লোকাল ওষুধ কিনে ব্যবহার করে। এর ফলে স্বাভাবিক স্তরে চুলকানি কমলেও, জীবাণুটা শরীরে থেকেই যায়। গোড়া থেকে নির্মূল হয় না।
ফাঙ্গাল ইনফেকশন হলে কী করা উচিত?
এই সমস্যা যারই দেখা দেবে, প্রথমেই মনে রাখতে হবে, তার থেকে যেন অন্য কারোর শরীরে না ছড়ায়। পার্সোনাল টাচ এড়িয়ে চলতে হবে। একের ব্যবহার করা জিনিস অন্যজনের ব্যবহার করা যাবে না এবং ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে কোন ওষুধ বা মলম ইউজ করা উচিত না।
দর্শকদের প্রশ্ন:
বাচ্চাদের ফাঙ্গাল ইনফেকশন হলে কী করা উচিত?
বাচ্চাদের স্কিন খুব মোলায়েম হয়। তাই তাদের যদি এই ইনফেকশন হয় তবে সেটা তাদের জন্য খুব খারাপ। তারা ঠিক করে ঘুমাতে পারেনা এই কারণে। এক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। এছাড়াও, বাড়িতে বাচ্চার জামাকাপড় আলাদা ভাবে পরিস্কার করতে হবে ও যদি একবার একটা জামা বাচ্চাকে পড়ানো হয় তবে সেটা সেই দিনেও আর পড়ানো যাবে না, জামা বার বার বদলাতে হবে। আর ফাঙ্গাল ইনফেকশনের জায়গাটাকে যতটা সম্ভব শুকনো রাখতে হবে।