তিনি বাংলা গানের জগতে এই সময়ের মুখ। বাংলা গান ও রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত নাম। নবীন এবং প্রবীণ দুই প্রজন্মের সচেতন শ্রোতার কাছে সমান কাছের। গানের আবেদনে মুগ্ধ করেন। রবীন্দ্রনাথের গানের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ছবির গানেও তিনি আছেন। বাংলা ছবি 'ফিস্টার সেন', 'বাই বাই ব্যাঙ্কক', 'আমার আমি', 'বিলু রাক্ষস'-এর মতো ছবিতে গান গেয়েছেন। ইনি গায়িকা জয়তী চক্রবর্তী। ৫ মে মুক্তি পেয়েছে তার নতুন গান 'আমার কন্ঠ হতে'। সম্প্রতি জিয়ো বাংলার পর্দায় গায়িকা জয়তী চক্রবর্তী।
প্র: আমরা আপনার কন্ঠে রবি ঠাকুরের গান আগেও শুনেছি। তোমার নতুন গান 'আমার কন্ঠ হতে' গানটির সম্পর্কে কী বলবেন?
জয়তী: 'আমার কন্ঠ হতে'র কনসেপ্টটা 'রাগের আলোয় রবি' থেকে নেওয়া। 'রাগের আলোয় রবি' অ্যালবামটি হয়তো সকলের ভালো লেগেছিল। তাই জন্যে এই গানটি নিয়েই মানুষের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। এই মোক্ষম সময় এই কাজটি করতে পেরে আমরা নিজেরাও খুব খুশি। গানটি রিলিজের পর থেকেই ট্রেন্ডিংয়ে ছিল। এটা আমাদের জন্য একটা অত্যন্ত আনন্দের খবর। কারণ এই সময় মানুষকে গান শোনানোর জন্য রীতিমতো কসরত করতে হয়। কিন্তু এই গানটি খুবই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে গ্ৰহণ করেছে, এটা ভেবে খুব ভাল লাগছে। প্রত্যুষদা এই গানটি অ্যারেঞ্জ করেছেন, জয় নন্দী তবলা ও খোল বাজিয়েছেন। আমরা গৌতম বসুর স্টুডিয়ো ভাইব্রেশনে গানের রেকর্ডিং করেছি।
প্র: প্রত্যুষদা আর আপনার যুগলবন্দী দেখা গিয়েছে এই গানে। প্রত্যুষদার সঙ্গে কাজ করে কতটা খুশি হয়েছেন?
জয়তী: আমি প্রায় পনেরো বছর কাজ করেছি প্রত্যুষদার সঙ্গে। আমি ভীষন কমফোর্টবল প্রত্যুষদার সঙ্গে। প্রত্যুষদার সঙ্গে কাজ করে প্রত্যেকবারই কিছু না কিছু শিখতে পারি।
প্র: আপনার কী মনে হয় রবি ঠাকুরের গান নিয়ে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে কোনও চেতনা রয়েছে?
জয়তী: চেতনা রয়েছে কী না এটা বলা খুব কঠিন। এটা সত্যি মাপতে যাইনি কখনও। তবে এটা সত্যি যে এই জেনারেশনর বুদ্ধি অনেক বেশি। কিন্তু বোধের জায়গা একটু কম। কারণ যে ভাবনা নিয়ে রবীন্দ্রনাথকে আমরা বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করি, সেটা এই জেনারেশনের কাছে আমি খুব একটা আশাও করি না। আর আমার আশা করায় কিছু যায় আসে না। কিন্তু একটা জিনিস ঠিক যে রবীন্দ্রনাথের গান যারা গাইছেন তারা চেষ্টা করছেন প্রত্যেক শ্রোতাদের মধ্যেই যেন এই গানের গ্ৰহণযোগ্যতা তৈরি হয়। আর এটা সত্যিই হচ্ছে। আমি অন্যদের কাছ থেকেও ফিড ব্যাক পেয়েছি যে এখন ইয়ং জেনারেশন ভীষনভাবে রবীন্দ্রনাথের গান শোনে।
প্র: আপনি এক্ষুনি ‘ট্রেন্ডিং’ শব্দটা ব্যবহার করেছ। ‘ট্রেন্ডিং’ শব্দটাকে কতটা মানেন?
জয়তী: আমি বিশ্বাস করি বটে। আমার মনে হয় ট্রেন্ডিংয়ের সঙ্গে মানুষের শোনাটা ডিরেক্ট লিঙ্কড। এটার সঙ্গে ভিউয়ারশিপের কোনও সম্পর্ক নেই। যেটা মানুষ সবচেয়ে বেশি বেশি শুনছে সেটাই ট্রেন্ডিংয়ে থাকে। তাই ট্রেন্ডিং শব্দটিকে অবিশ্বাস বা অস্বীকার করার কোনও প্রশ্ন নেই।
প্র: আমরা জানি এই সময়ে দাঁড়িয়ে রবি ঠাকুরের গান মানেই জয়তীদির গান। রবীন্দ্রনাথকে আপনার জীবনে আপনি কী কী ভাবে পেয়েছেন?
জয়তী: এন্ড অফ দ্য ডে আমরা প্রত্যেকেই সাধারণ এক মানুষ। তাই আমাদের নামের আগে তকমাটা লাগান মানুষরা। সুতরাং আমারা এখানে সাধারণ মানুষ ছাড়া আর কিছু না। সেলিব্রেটি ভাব থেকে বাইরে বেরিয়ে ভাবলে নিজে আমি সাধারণ আর পাঁচজন মানুষ ছাড়া আর কিছু ভাবি না। জীবনের নানা ওঠা পড়ার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ সত্যিই পরতে পরতে জড়িয়ে গিয়েছে। আর এই ওঠা পড়ার মাঝে যে মানুষটা আবার বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছে, সেই মানুষটি হলেন আমার রবীন্দ্রনাথ।
প্র: আগে সিডি, ক্যাসেড-এর মাধ্যমে শুধু মাত্র অডিয়োটা শুনতাম। এখন অডিয়ো, ভিডিয়ো দুটোই চাইছে মানুষ। এই চেঞ্চটা আপনি কীভাবে অ্যাকসেপ্ট করেছেন?
জয়তী: এই কারণেই আমাকে তোমার মতো রোগা হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এখন ভিডিয়োতে দেখনদারিটা একটা বিরাট ফ্যাক্টর হয়ে গিয়েছে। তবে সময়ের সঙ্গে বা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা একটা বিরাট বড় ক্ষমতা। সেই ক্ষমতাটা না থাকলে পিছিয়ে পড়তে হবে। এই সময় দাঁড়িয়ে মানুষের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম শুধু কানে শোনা নয়, চোখ দেখাও। নিজের প্রেজেন্সটাকে বদলে একটু প্রেজেন্টেবল করার চেষ্টা করা হয়েছে।