আপনার শিশুকে কোন বয়সে কী খাওয়াবেন, কী খাওয়াবেন না?

আপনার শিশুকে কোন বয়সে কী খাওয়াবেন, কী খাওয়াবেন না? শিশু স্কুলে যেতে শুরু করলে খ্যাদ্যাভ্যাসে অনিয়ম দেখা যায় অনেকসময়, সেক্ষেত্রে টিফিনে কী ধরনের খাবার রাখা উচিত? শিশুর খাওয়াদাওয়া ও সেই সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত জানালেন ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান, সার্টিফায়েড ডায়াবেটিক এডুকেটর মনীষা দত্ত ঘোষ, (Manisha Dutta Ghosh, Clinical Dietitian, Certified Diabetic Educator)

৬ মাস বয়সের পর থেকে কোন খাবার খাওয়া উচিত বাচ্চাদের। এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, অনেক সময় দেখা যায় ৬ মাস বয়সের আগেই অভিভাবকরা শিশুদের বাইরের খাবার খাওয়াতে শুরু করেন। এটা একেবারেই বন্ধ করা দরকার। খেয়াল রাখতে হবে যে ভিটামিনগুলো যেন ঠিক করে পায়। এই বয়সে অনেক সময় দেখা যায় শুধু সিদ্ধ ভাত দেওয়া হচ্ছে শিশুকে। সবজি তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। তবে একটু গাজর, আলু সেদ্ধ, বিনস দেওয়া যেতেই পারে। একটা কথা খুব শোনা যায়- "আমার বাচ্চা সবজি খায় না" আর "আমার বাচ্চা মাছ খায় না"- প্রোটিন- ভিটামিন ঘাটতি কিন্তু তখন থেকেই শুরু হয়। ডিম না খেলে হবে ক্যালসিয়াম ঘাটতি। মায়েদের উদ্দেশ্যে বলার বাচ্চারা কিন্তু আগে থেকে জানে না যে কোনটার স্বাদ কোনটা। তাই বাচ্চা না খেতে চাইলেও গল্প বলে বলে তাকে এগুলো খাওয়ানো যেতেই পারে। তাহলে মনে হয় এধরনের সমস্যা হবে না।

অনেক বাচ্চা মাছের আঁশ গন্ধ পছন্দ করে না। মাছটাকে একটু ভেজে ঝোল করে দিন ভাতের সঙ্গে মেখে। দুপুরে ভাত খাওয়ার সময় মাছ দিতে চেষ্টা করুন। জ্যান্ত বা বাজার থেকে আনা টাটকা মাছ দিন ফ্রিজে রাখা মাছের পরিবর্তে। প্রতিদিন মাছ খেতেই হবে। শর্ট মিল সিস্টেমে খাওয়ানো উচিত। বাচ্চা খেতে না চাইলে জোর করে খাওয়ানো ঠিক নয়। যখনই বাচ্চা আর খেতে চাইবে না তখনই থেমে যাওয়া উচিত। আবার খানিকটা সময় পর তাকে খাওয়াতে হবে।

আধ ঘন্টা থেকে দু' ঘন্টা বিরতিতে খাওয়াতে হবে। আগের রেখে দেওয়া খাবারের পরিবর্তে ভাগে ভাগে খাওয়াতে হবে। ৬ মাস থেকে ৩ বছরের বাচ্চাদের দেখা যায় মুখে খাবার রয়েছে আর সে খাবারটাকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আসলে এই বের করে দেওয়া খাবার তার কাছে বাড়তি। শিশুর বাড়তি ওজন সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। কারণ শিশুর বাড়তি ওজন ভবিষ্যতে একাধিক সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে।

প্রতিদিন একটা করে ফল খাওয়া উচিত। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত তাহলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। দুপুর ও রাতে খাওয়ার সময় প্রোটিন খাওয়া উচিত। মিড মর্নিং -এ ডিম, দুপুরে মাছ, ডিনারে বোনলেস চিকেন দেওয়া যায়। রাতে যদি মাছ, মাংস ডিম না খায় তাহলে দুধ খেতে পারে। নুডলস, প্যাকেট কেক, বিস্কুট থেকে দূরে থাকা উচিত। বিশেষ করে ক্রিম বিস্কুট। তার বদলে রুটি তরকারি, বিট গাজরের তরকারি খেতে পারে। বিট খেতে না চাইলে বিটের রুটি বানিয়ে দিতে পারেন।

বাচ্চাকে খাওয়াতে খাওয়াতে ফোন দেখা- এটা বন্ধ করতে হবে। সে জায়গায় ছড়া আসুক, গল্প আসুক, সুকুমার রায় আসুক- বাচ্চা এমনিই আগ্রহ পাবে। ১২ বছর বয়সে গিয়ে যে জেদটা বাচ্চারা দেখায় সেটা কিন্তু ৬ মাস বয়সেই তৈরী হয়ে যাচ্ছে। শিশুর জ্ঞান হতে শুরু করলেই বোঝাতে হবে। ফোন দেখতে দেখতে খেতে গিয়ে খাবার সময় বাচ্চা বুঝতেও পারে না সে কী খাচ্ছে, তাতে পুষ্টিও ব্যাহত হচ্ছে। এটা বন্ধ করা দরকার। সকলের সঙ্গে খেতে বসাতে হবে। এটা থেকে নিজে খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হবে। ছোটরা খেতে না চাইলে আগে বড়দের ঠিক হতে হবে

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...