Jiyo Adda- 'জিয়ো আড্ডা উইথ অনিন্দিতা সরকার' শোয়ে আজ অতিথি অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এবং লেখিকা শ্রীময়ী পিউ কুণ্ডু।
একক নারীর বেঁচে থাকা আর অধিকারের লড়াই সব সময় কঠিন। তিনি যদি মা হন তখন লড়াইটা হয়ে যায় আরও কঠিন। সংসার, সমাজ কখনও কখনও আবার পরিবার। বাঁধা আর বিপন্নতার কাঁটা কিছু কম নয়। অপরিসীম শক্তি আর জেদ নিয়ে তবু লড়ে যান তাঁরা। নিজের এবং সন্তানের নিরাপত্তা, ভবিষ্যৎ, জীবনযাত্রা সবটাই নিজের শক্ত কাঁধে। বিপন্নতা চেনা কিন্তু তাদের গল্পগুলো ভিন্ন। কতটা কঠিন একক মায়ের লড়াই? কীভাবে প্রতিকূলতা সামলান তাঁরা? ‘স্টেটাস সিঙ্গেল’ কমিউনিটি তাঁদের প্ল্যাটফর্ম। এই কমিউনিটি ছড়িয়ে আছে দেশের আরও আটটি শহরে। দুবাই এবং ব্রিটেনেও আছেন তাঁরা। কমিউনিটির ফাউন্ডার শ্রীময়ী পিউ কুন্ডু। সমাজে মেয়েদের ঘুড়ে দাঁড়াবার লড়াই আর অনুপ্রেরণার কাহিনি শুনুন তাঁদের মুখে
প্রঃ শুধুমাত্র একটা মেয়ে হয়ে জন্মালাম আর তাকে বলা হল একটা বয়সের পর বিয়েটাই আল্টিমেট, সেই জায়গায় ‘সিঙ্গেল স্টেটাস’-এর চিন্তাটা কোথা থেকে এল, এই বিষয়টা কেন বেছে নিলে?
শ্রীময়ী পিউ কুণ্ডুঃ আমার মা সিঙ্গেল ছিলেন। বাড়ির একমাত্র মেয়ে ছিলেন। স্বামী হারানোর পর বাপের বাড়ি চলে আসেন। যোধপুর পার্কে বাড়ি। আমি আমার মাকে বলি আমরা এক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রিভিলেজড। অনেকে এই সাপোর্টটা পায় না। আমি পুরোপুরি আমার দিদার কাছে মানুষ। মা লরেটো হাউসে পড়াতেন। সন্ধেবেলা টিউষন দিতেন। দাদু হার্টের পেশেন্ট ছিলেন। আমার জন্মদাতা পিতাকে হারাই। তিনি ছিলেন স্কিজোৎফ্রেনিয়ার রোগী। মাকে দেখেছি অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক বিয়ের অনুষ্ঠানে সব কিছু করছে, কিন্তু যাওয়া মানা, তাই দূরে। একজন মেয়ে সে অবিবাহিতা, বিধবা তার ছায়া পর্যন্ত অশুভ, অপয়া বলা হয়। বিয়ের অনুষ্ঠান, সিঁদুর খেলা এসবে অংশ নিতে পারবে না। একধারে দূরে দাঁড়িয়ে। আমাদের দেশে ম্যারিটাল স্টেটাসের ওপর একটা বিভাজন হয়। স্বামীর যখন মৃত্যু হয় মেয়েদের জীবন থেকে যেন সব রং চলে গেল এমন ধারনা দেওয়া হয়। এটা অনেক সম্প্রদায়েই।
আমার মায়ের স্ট্রাল আমার কাছে ইন্সপিরেশন। আমার মা সমাজকর্মী ছিলেন। ‘নারী সেবা সংঘ’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্যা। আমার নিজের ২৫ বছর বয়সে এনগেজমেন্ট ভেঙে যায়। আমি বাঁচতে চাইনি এত খারাপ লেগেছিল। আমি নিজে মিডিয়ায় এডিটর ছিলাম। কাজের জগতেও দেখেছি বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে। ৭০ শতাংশ মহিলা সিঙ্গেল মাদার। কিন্তু আমাদের দেশে ৪৩ শতাংশ বাড়ি মহিলাদের আয়ে চলে। তবে প্নেক বদল এসেছে। মেয়েরা স্প্যার্ম ব্যাঙ্ক থেকে নিয়ে সন্তান নিচ্ছে। এই যে বদল াসছে বদলের দায় কিন্তু আমাদের নিতে হবে।
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ঃ আমরা বলি বদল আসা দরকার কিন্তু ভাবি অন্যকেউ করবে।
প্রঃ স্বস্তিকা, তোমার খুব ছোট বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। তারপর একটা ফেজ। তোমার কী মনে হয় বদল আনতে বাড়ির শিক্ষা, সমর্থনটাও লাগে?
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ঃ বাড়ির শিক্ষা, বড় হওয়া, সাপোর্ট সব লাগে। যখন কলেজে পড়ি আমার বাবা আমাকে একটা কথাই বলেছিল, ‘স্বাবলম্বী হওয়াটা সবচেয়ে বেশি জরুরী’। বিয়ের জন্য নয়, মেয়েদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হওয়াটা খুব দরকার। বাবা হোক, বন্ধু হোক, ভাই হোক তাদের ওপর নির্ভর করলে তোমাকে তাঁদের অনুযায়ী জীবন যাপন করতে হবে। আমার ব্যক্তিগত ক্রাইসিস বা পরিস্থিতির জন্য নয়। বাবা এটা বলেননি কোন পথে আমি চলব। আমি পড়াশোনা করতে করতে কাজ করেছি। তারপর এই পেশাই আমার মূল হয়ে উঠল।। অভিনয় প্যাশন হয়ে ওঠার আগেও নিজের রোজগারের জায়গা হয়ে ওঠা অনেক বেশি দরকার।
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ঃ কারুর কাছে হাত পাতপে হলে তোমায় প্রত্যেকটা জিনিসের জন্য কৈফিয়ত দিতে হবে টাকাটা কীসের জন্য চাইছ। ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি মেয়েদের হাতে বেশি পয়সা দিতে নেই। দিলে তারা বিগড়ে যায়।
শ্রীময়ী পিউ কুণ্ডুঃ মেয়েরা এখনও শপিং করে ব্যাগ লুকায়। এমনকি তারা ওয়ার্কিং হলেও...
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ঃ ছেলেরা পাব, রেস্তোরাঁ, অ্যালকোহলে যে টাকাটা খরচ করে তারা তো মনেই করে না তারা এটার জন্য অ্যানসারেবল। তাদের জিজ্ঞাসা করাও হয় না। এগুলো বছরের পর বছর হয়েই আসছে। মেয়েদের অনেক বেশি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। আমরা যদি মনে করি এটা বদলানো দরকার সেটা আমাদেরই করতে হবে।