ভাইরাল ভিডিয়ো চোখ খুলে দিয়েছিলঃ রায়তী

‘শেষপাতা’র আবিষ্কার ‘দীপা’। থিয়েটারের মঞ্চে তিনিই অপ্রতিরোধ্য অভিনেত্রী ‘নূরজাহান’। ভীষণ ভাল গান করেন। একসময়ের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক কীভাবে হয়ে উঠলেন থিয়েটার আর সিনেমার ‘রায়তী’ সেই গল্প শোনাতে ‘টলিকথা’য় আজ অতিথি অভিনেত্রী রায়তী ভট্টাচার্য

প্রঃ থিয়েটার থেকে যদি শুরু ধরা হয় তাহলে অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছে কি প্রথম থেকেই ছিল তোমার?

রায়তী ভট্টাচার্যঃ আমার যেটা মনে হয় মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে নায়িকা হওয়ার ইচ্ছে কোন মেয়ের থাকে না। একটা সুপ্ত ইচ্ছে ছিল যেটা জানতাম যে কোনওদিন হবে সম্ভব হবে না। ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় বাবাকে একবার আস্ত করে বলেছিলাম, ‘আমার না অ্যাক্টিং বেশ ভাল্লাগে...’ বাবা শুনে সঙ্গে সঙ্গে বলেছিল, ‘লাইনটা খারাপ, ভাল না...’। তখনই বুঝে গিয়েছিলাম ওসব হবে না। কখনও ভাবিনি যে সত্যি সত্যি হয়ে যাব।  

প্রঃ অভিনেত্রী হওয়ার আগে তোমার একটা অন্য প্রফেশন ছিল। সেটা বেশ অনগোয়িং প্রফেশন…

রায়তী ভট্টাচার্যঃ আসলে আমার পড়াশোনা BHSM। হোমিওপ্যাথি মেডিকেল। আমি সেটা পাশ করেছি এবং সেই অর্থে আমি হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। প্র্যাকটিসও করেছি একসময়। উত্তর কলকাতার একটা এনজিওতে বসতাম। রোগীও হত। কিন্তু একটা সময় থিয়েটারের চাপ বাড়তে লাগল। মিনার্ভা জয়েন করেছি তখন। একদিন শোয়ের আগে হঠাৎ এক রোগী ফোন করে বলল, ‘ডাক্তারবাবু যে ওষুধটা খেয়েছিলাম ওটা খেয়ে না আমার বেড়েছে...এখন তাহলে কী করব আমি?’। ফার্স্ট বেল পড়ে গিয়েছে ততক্ষণে। আমার ফোনটা আর সুইচড অফ করা হয়নি। আমি তখন ভাবছি আমি কী করব? আমার ক্যারেক্টার নিয়ে ভাবব নাকি ওষুধ?

সেদিনই ঠিক করলাম দু নৌকায় পা দিয়ে চলা যাবে না, একটা বেছে নিতে হবে।আর প্রফেশনাল প্র্যাকটিস করি না। তবে বন্ধুরা ছাড়ে না। তাদের মাঝেমধ্যে ওষুধ দিই।   

প্রঃ স্টেজ আর সিনেমার পর্দার ওপারে ‘রায়তী’ কেমন?

রায়তী ভট্টাচার্যঃ ‘রায়তী’ ঠিক যে কেমন রায়তী সেটাই এখনও খুঁজে যাচ্ছে। যে অভিনয় করি সেগুলো খুব এক্সট্রোভার্ট হয়ত বা রিলস দেখেও লোকে ভাবে কিন্তু বেসিক্যালি আমি সেটা নয়। আমি ভীষণ ইন্ট্রোভার্ট। মানুষজন খুব একটা পছন্দ করি না। বন্ধুবন্‌ধব খুব কম। আর নিজের ভিতর থাকতে ভালোবাসি। কিন্তু পারফর্ম করতে প্রচন্ড ভালোবাসি। পারফরম্যান্সের সময় আমি অন্য মানুষ। তখন অন্তর্মুখী ভাবটা কেটে যায়। এই নেচারের জন্য লোকে ভুলও বোঝে।  

প্রঃ লকডাউনের সময় তোমার একটা ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি নিয়ে। কী বলবে?  

রায়তী ভট্টাচার্যঃ আমার এখনও মনে হয় আমি তখন একদম ঠিক বলেছিলাম। এরকম কথা আরও বেশি করে বলা উচিত। ওই ভিডিয়ো কান্ডের পর আমি সমাজটাকে বুঝতে শিখেছি। তার আগে অবধি ভাবতাম আমরা খুব উন্নত। কিন্তু ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পর মনে হল একই জায়গায় আছে সমাজ। শুধু ওপর থেকে চকচকে। আমার সারকাজমটাকে নিতে পারে না। ভিডিয়োটা আমার চোখ খুলে দিয়েছিল।  

প্রঃ ‘শেষপাতা’র শ্যুটিং-এর অভিজ্ঞতা কেমন?

রায়তী ভট্টাচার্যঃ শ্যুটিং-এর অভিজ্ঞতা ভীষণ ভাল। অতনুদা খুব গোছানো ডিরেক্টর। তাঁর ইউনিটটাও ওরকমই গোছানো। আমার নিজের অভিনয়ের ক্ষেত্রে খুব সুবিধা হয়েছিল ওঁর সঙ্গে কাজ করতে। কমিউনিকেশনের সমস্যা হয়নি। উনি যেটা চেয়েছেন মনে হয় আমি দিতে পেরেছি। কো-অ্যাক্টর হিসেবে বিক্রম ছিল। যাকে নিয়ে আমার বেশ টেনশন ছিল। ও অলরেডি স্টার। সবাই চেনে। কেমন হবে অভিজ্ঞতা। কিন্তু বিক্রম খুব ভাল। অনেক হেল্প করেছে আমায়। একটা বেশ ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল ওর সঙ্গে। ফলে যে ক্টা দিন কাজ করেছি খুব আনন্দ করে কাজ করেছি।

প্রঃ  তোমার আপকামিং কী কী আসছে?

রায়তী ভট্টাচার্যঃ এই মুহূর্তে ক্যামেরার কাজে কথাবার্তা চলছে, কিন্তু সেগুলো বলতে পারব না। থিয়েটারে ‘নূরজাহান’র শো চলছে। আর ‘ইন্দুবালা’..।।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...