পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ‘উৎসব’ ছবিতে অভিনয় তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা। সেন্ট জেভিয়ার্সে মাস কমিউনিকেশন ভিডিয়োগ্রাফির ছাত্র তখন, কীভাবে এসেছিলেন ছবির ভুবনে? সিনেমা-মিউজিক আর জীবনের গল্পে আজ টলিকথায় অতিথি রাতুল শংকর
প্রঃ তোমার সব কাজ, মিউজিক, বেদা সব নিয়ে কেমন চলছে?
রাতুল শংকর ঃ চলছে ভালই। মন্দ নয়। আড়াই বছরের বিশাল শাস্তি গেল। সেটা কিছুটা আমাদের নিজেদের দোষেও। তারপর আমরা শিখলাম। প্রচুর কষ্ট, প্রচুর প্রবলেম, সবের মধ্যে দিয়ে গিয়েও আমরা যারা স্টেজটাকে ক্রেভ করি সেই আড়াই বছরটা তাদের জন্য খুব কঠিন ছিল। এখন অনেক ইভেন্ট হচ্ছে। কাজ হচ্ছে। আশা করছি বছরটা ভাল যাবে।
প্রঃ ছোটবেলা থেকে পারফর্মিং আর্টের সঙ্গে যুক্ত, প্রচুর স্টেজ করেছ, মা-বাবার সঙ্গে কিন্তু মিউজিক তোমার ফার্স্ট লাভ, এটা নিয়ে কিছু বলো
রাতুল শংকরঃ এটা খুব ভেবেচিন্তে নেওয়া সিদ্ধান্ত নয়। আমার লাইফে সবই অ্যাক্সিডেন্ট। লাভলি, বিউটিফুল অ্যাক্সিডেন্ট । ভাগ্যিস সেগুলো হয়েছিল। এরকম ব্যাপার না যে ছোটবেলা থেকে ভেবে রেখেছিলাম মিউজিক নিয়ে পারসিউ করব, কিন্তু হয়ত অজান্তে মিউজিকটা বেশি টেনেছে। আর একটা কারণ আমার মামা আনন্দ শংকর। তিনি আমার আইডল, আইডিল। সেটার প্রভাব ছিল আর ভেবেছিলাম নাচটা আমার দ্বারা হবে না।
প্রঃ তুমি যেটা অ্যাক্সিডেন্ট বলছ, কিন্তু তুমি পার্কেশনিস্ট ছাড়াও ব্রিলিয়ান্ট অ্যাক্টর। সেটাও লাভলি অ্যাক্সিডেন্ট, তোমার ডেবিউ ফিল্ম ঋতুপর্ণ ঘোষের উৎসব এই ভাল অ্যাক্সিডেন্ট হল কী করে?
রাতুল শংকরঃ এটা খুব ইন্টারেস্টিং। তখন আমি কলেজে পড়ি। ছোৎবেলা থেকে যেহেতু মায়ের সঙ্গে প্রচুর শু টিং-এ যাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে সেই জন্য ডিটাচড করতাম। কারণ শুটিং-এর মতো বোরিং ব্যাপার একদম ভাল লাগত না। আমায় সিনেমা কখনও টানেনি। ঋতুতা মাকে ফোন করেছিলেন। বললেন একটা ছবি করছি। আমার ইচ্ছে রাতুল যদি অভিনয় করে তবে তোর জন্য একটা পার্ট আছে। মা বলল মাই কথা বলবে। আমি মুখের ওপর না বললে বাজে ব্যপার। আমায় বলতে আমি বলেছিলাম অভিনয় অসম্ভব! পাগল নাকি! আমি আবার প্রচন্ড হুজুগেও। তখন কলেজেও কী একটা রেজাল্ট বেরল। মুড ভাল ছিল একদিন ‘হ্যাঁ’ বলে দিলাম। আমার জীবনে এটা অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা। তখন মাস কমিউনিকেশন ভিডিওগ্রাফি পড়ছি সেন্ট জেভিয়ার্সে। ‘উৎসব’এ আমার চরিত্রটাও ওরকম ছিল। খুব এনজয় করেছি ঋতুদার সঙ্গে।
প্রঃ এখন কি ভাব? এরকম অফার যদি আবার আসে?
রাতুল শংকরঃ যারা আমায় খুব কাছের তারা জানে আমি কী সাংঘাতিক ইন্ট্রভার্ট। বাইরে থেকে বোঝা যায় না। আমার মামা যেমন আমার ইন্সপিরেশন তেমনি গুরুজী পন্ডিত তন্ময় বোসও। উনি না থাকলে আমি আজ এখানে বসে এটা বলতে পারতাম না। আমি যতটুকু ভাল যা হতে পেরেছি সেটা গুরুজী,বাবা-মা সবার জন্য। আমি গুরুজীকে কখনও টেনশন করতে দেখিনি। তিনি জীবনে যা অ্যাচিভ করেছেন তা তাকিয়ে থাকার মতো। সেই জায়গা থেকেও।
প্রঃ তোমার গুরুজী তন্ময় বোসের সঙ্গে ২২ বছর তালতন্ত্রে জড়িয়ে। প্রথম যখন বিদেশে বাজালে, ইন্ডিয়ান ক্ল্যাসিক্যাল আর জ্যাজ মিউজিকের যুগলবন্দী লাইভ এক্সপেরিয়েন্স কতটা থ্রিলিং ছিল?
রাতুল শংকরঃ তালতন্ত্র সাংঘাতিক থ্রিলিং অভিজ্ঞতা। ২২ বছর হয়ে গেল। প্রথম দিন থেকে থাকার সৌভাগ্য হয়েছে এটার মধ্যে থাকার। ঐ সময় প্রচুর জার্মান, ব্রাজিলিয়ন মিউজিশিয়ান আসতেন, সঙ্গে গুরুজী প্রচুর ফোক মিউজিক নিয়ে কাজ করছেন। চারপাষে যা দেখেছি অ্যাবসর্ভ করেছি। ছোটবেলা থেকে আমরা যতদিন বেঁচে থাকি এরকম অ্যাবসর্ভ করতে করতে শিখি । আমারও তাই হয়েছে। ফিউশন মিউজিক তালতন্ত্র আনন্দ শংকর পায়নিওর। এখন নিজে যদি কিচু করতে যাই ইন্টারেস্টিং লাগে।
প্রঃ কিছুদিন আগেই মা মমতা শংকর ফিল্মফেয়ার সম্মান পেয়েছেন ‘প্রজাপতি’ ছবির জন্য। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকে তুমি পোস্ট শেয়ারও করেছিলে
রাতুল শংকরঃ মা তো এটা পেলেনই। কিন্তু মাকে যাঁরা চেনেন জানেন মায়ের এগুলো নিয়ে কোনও আকাঙ্খা নেই। এক্সপেক্টও করেননি। তার ঠিক সপ্তাহ দুয়েক আগে মা সঙ্গীত নাটক একাদেমি সম্মান পান। নাচের জন্য রাষ্ট্রপতির হাত থেকে সম্মান নেওয়া সাংঘাতিক ব্যাপার।