মফস্বলের এক ছেলে। একদিন স্বপ্ন দেখেছিল মিঠুন চক্রবর্তীর মতো অভিনেতা হবে। তবে স্বপ্নটাকে শুধু স্বপ্নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেনি সে। সেদিনের সেই ছেলেটাই আজ বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির পরিচিত মুখ ‘অভিনেতা বিশ্বনাথ বসু’। টলিপাড়া থেকে দর্শকদের দরবার তাঁকে কে না চেনে! সিনেমার দুনিয়ায় কাটিয়ে ফেলেছেন তেইশটা বছর, অনেকগুলো দিন। সময় বদলালেও বদলায়নি মফস্বলের সেই ছেলেটা। আজও সে মাটির মানুষ গ্ৰামের মানুষ, বন্ধুবান্ধব ও পরিবারকে নিয়ে হাসিখুশি থাকতেই ভালোবাসে সে। মন খোলা ও প্রাণবন্ত এই অভিনেতা শেয়ার করলেন নিজের অভিনয় জীবনের জার্নির কাহিনী 'জিয়ো আড্ডা উইথ অনিন্দিতা সরকার' অনুষ্ঠানে।
প্র: মফস্বল থেকে এসে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করা। কেউ চেনা নেই, তাও নিজের জায়গা তৈরি করা। এই জার্নিটা কেমন ছিল?
বিশ্বানাথ বসু: আমি এক সময় দেশের বাড়িতে শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখতাম অভিনেতা হওয়ার। আমার বাড়িতে সবাই চাকরি করতেন। সেখান থেকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করা আর ছন্দ ভাঙা জীবন। তাই ব্যাপারটা ভাবলে আমার এখন অবাক লাগে। তখন স্বপ্ন ছিল মিঠুনদা'র মতো ছবি করব। আমি স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়ার জন্য ব্যারাকপুরের এসেছিলাম। সেখানে একটা ভাড়া বাড়িতে থাকতাম আমরা। সেখানে একটা কমন বাথরুম ব্যবহার করতে হত আমাকে। মা বলেছিল তুই থাকতে পারবি তো? দেশের বাড়ি ছাড়ার পর আমার মনে হয়েছিল একটা বিরাট বড় স্রোত চলে গিয়েছে। তারপর কলকাতায় আসার পর আমার দেখা হয় পল্লব ঘোষের সঙ্গে। তাকে আমি বলেছিলাম, আমি খুব ভাল অভিনয় করি এমনটা নয়, কিন্তু যা চলছে সেটা আমিও পারব। এটা বলার পর দাদা শুভাশীষদা, নচিকেতা ও সুভাষ বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিল। তারপর ১৯৯৯ সালে আমি প্রতিদিন পেপার দেখতাম আর জানতাম কোথায় শ্যুটিং চলছে। আর খবর পেলে চলে যেতাম সেখানে।
প্র: আমাদের সময় অনলাইনে এতো অপশন ছিল না অডিশন দেওয়ার?
বিশ্বনাথ বসু: সেই সময় 81-স্টুডিয়োতে ঢোকাই যেত না গাড়ি না থাকলে। আমি নিজে অপেক্ষা করতাম কখন সাগ্নিক ও সুমন বন্দোপাধ্যায় বাইক নিয়ে আসলে আমি স্টুডিয়োতে ঢুকতে পারতাম। গাড়ি না থাকলে তখন ঢুকতে দেওয়া হতো না। সেই সময় বুম্বাদা, তাপস পাল, চিরঞ্জিতদাকে চোখের সামনে দেখার সুযোগ পেয়েছি। আমার ইন্সস্পিরেশন ছিল খরাজদা, শুভাশীষদা, চন্দনদা, শান্তিলালদা, কুণালদা। এরাও খুব সাধারণ ঘরের ছেলে-মেয়ে ছিল। কিন্তু যখন রুদ্রনীল ঘোষ আর কাঞ্চন মল্লিকে দেখলাম তারাও অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। কাঞ্চনের জনপ্রিয়তাকে আমি আজও হিংসে করি। ওর সাফল্য দেখেই আমার মনে হল, আমিও পারবো। তারপর আমি বুম্বাদা, দেব, জিৎ সবার সঙ্গে কাজ করেছি।
প্র: আমার মনে হয় টলিউডে এমন কোনও হিরো নেই যার সঙ্গে তুমি কাজ করোনি?
বিশ্বনাথ বসু: আমি শুধু টলিউডের নয়, বাংলাদেশের সাকিব খান, আরফিন শুভর মতো তারকাদের সঙ্গে ছবি করেছি। ওড়িশার সিদ্ধান্তের সঙ্গে কাজ করেছি। এছাড়াও আমি বহু পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি। তার মধ্যে রবি কিনাগী রয়েছে মৈনাক ভৌমিক, রাজা চন্দর নাম রয়েছে।
প্র: তুমি টেলিভিশনে অভিনয় করছ, ছবিতে অভিনয় করছ, গান করো। কিন্তু তোমার পছন্দের জায়গা কোনটা?
বিশ্বানাথ বসু: স্কুলের স্যারদের দেখে খুব অবাক লাগত। একজন স্যার ৪০ বছর ৩৫ বছর চাকরি করছে। তারা কী বোর হয় যায় না? যদিও ছাত্র-ছাত্রী তো বদলে যায়। আমার বেশিদিন কিছু ভাল লাগে না। তবে গান নিয়ে এক সময় কেউ জানত না। কিন্তু ধীরে ধীরে জেনেছে। আমি সব কিছুই মনের খুশিতে করেছি। অনেক মন খারাপ নিয়েও কাজ করেছি কিন্তু তার অনেক প্রাপ্তিও হয়েছে। এটার সব সময় মাথায় রেখেছি যে আমাকে অনেকটা দিন থাকতে হবে। তাই যেটা করব সেটা ১০০ শতাংশ দিয়ে করব।
প্র: তুমি অনেক চরিত্র করেছ। কিন্তু এখনও কী এমন কোনও চরিত্রের খিদে রয়ে গিয়েছে যেটা তুমি করতে চাও?
বিশ্বনাথ বসু: ধর একটা মর্গের ডোম ছেলের জন্মদিনে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চাইছে কিন্তু এক নেতা তাকে একটা বডি আগে ছাড়ার জন্য বার বার বলছে। তার কষ্টটাও তো বোঝা উচিত। এই ধরনের চরিত্র আমি করিনি। এছাড়াও একটা সুটেট-বুটেট মানুষ যাকে আমি চিনি না। তার চরিত্রটাও আমি করিনি। এমন অনেক চরিত্র রয়েছে যা আমি আগে করিনি।
প্র: তুমি এমন মাটি মানুষ হয়েই থাক। তাই তোমাকে সবাই এত ভালবাসে।
বিশ্বনাথ বসু: আমি না কিছুতেই পারলাম না। আমি বুঝতেই পারলাম না যে নিজেকে কীভাবে পরিবর্তন করে নিতে হয়। আমি দেশের বাড়ির সকলের সঙ্গে আড্ডামারি, কলকাতা শহরের কত বন্ধুবান্ধব রয়েছে। কলেজ জীবনের বন্ধুরা, ব্যারাকপুরের বন্ধুরা। আমি এদের সকলকে নিয়ে বাঁচতে চাই।