রিউমাটিক ফিভার বা বাত জ্বরে ছোটোরা বেশ ভোগে। রিউমাটিক ফিভার আসলে কী? প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কি দেখা যায় এই রোগ? বিস্তারিত জানালেন রিউমাটোলজিস্ট ডাঃ সোমক কুমার দাস (Dr. Somak Kumar Das, Rheumatologist)
ডাঃ সোমক কুমার দাস জানিয়েছেন, রিউমাটিক ফিভার ইনফেকশন ও ইমিউনিটির এক ধরনের অসুখ।
আগে বলা হয় এই রোগ ‘গরীব মানুষের রোগ’। বিশেষ করে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে, গ্রাম ও শহরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেষে মানুষ করে তাদের মধ্যে বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকে গলায় সংক্রমণ হয়। এই সংক্রমণ অনেক সময় বোঝা যায় না। চিকিৎসকের কাছেও যায় না। সেরেও যায়, কিন্তু পরে দেখা যায় গাঁটে গাঁটে ব্যথা। এমনকি হার্টের সমস্যা নিয়েও তারা চিকিৎসকের কাছে আসে। এই রোগ হার্টে প্রভাব ফেলে। এটাই এই রোগের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক। গাঁট, হৃদযন্ত্র, ত্বক, এমনকি মস্তিষ্কও।
গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া থেকে হয়। গলা, চামড়ার সংক্রমণ থেকে হয়। ৫-১৫ বছরের বাচ্চাদের সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এই রোগের তিনরকম ভাগ আছে। অ্যাকিউট রিউমাটিক ফিভার তার মধ্যে প্রথম। এই রোগ গলায় সংক্রমিত হয়। গলা ব্যথা হয়ে হয়ত সেরেও গেল, এরকম ঘটনার তিন সপ্তাহ পরে হঠাৎ করে দেখা যায় গাঁটে গাঁটে ব্যথা শুরু হয়। তারপর হাঁটু, কাঁধ, কনুই এগুলো ফুলে যায়। অসম্ভব ব্যথা হয়। একটার পর একটা জয়েন্টে ছড়িয়ে যায়। এই ধরনের জয়েন্ট পেনকে বলা হয় মাইগ্রেটারি আর্থারাইটিস। যেহেতু এক গাঁট থেকে আর এক গাঁটে ঘুরে বেড়ায় ব্যথা, এটাই অ্যাকিউট রিউম্যাটিক ফিভার। এই অবস্থাতে চিকিৎসা করা হলে রোগ সারানো সম্ভব। বেশিরভাগের সেরেও য্যা। কিন্তু যাদের ধরা পড়ে না তাদের পরে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আর এক ধরনের রিউমাটিক ফিভারে একই সমস্যা বারে বারে হয়। তখন হার্টে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। পাঁচভাবে এই রোগ হতে পারে। যে ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে এই রোগ হয় তা বহু পুরনো। এখনও পর্যন্ত বোঝা যায়নি ব্যাকটেরিয়া থেকে হার্টের ক্ষতি হয় নাকি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ক্ষতি হয়। তবে হার্টের ক্ষতির মাত্রাটা থাকে বেশ বেশি। হার্টে জল জমতে পারে। হার্ট ফুলে যেতে পারে। হার্টের পেশির ক্ষতি হতে পারে। হার্ট ব্লক হতে পারে। এমনি হার্টের ভালভও নষ্ট হয়ে যেতে পারে আস্তে আস্তে।
৫-১৫ বছরের শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। রেকারেন্ট রিউমাটিক ফিভার এই রোগটি সবচেয়ে বেশি ৩০ বছরের উর্ধে দেখা যায়। কিন্তু তারপর এই রোগ হোয়ার কথা সেভাবে শোনা যায়নি।
ছোটবেলায় ইনফেকশন সহজে বোঝা যায় না। সেই ছোটবেলায় হওয়া সংক্রমণ পরে হার্টের অসুখ, স্ট্রোকের মতো সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
গাঁটে গাঁটে ব্যথা, হাত পা ফোলা, হাঁপানি, জ্বর, চামড়ায় র্যাশ, দানা দেখা দেয়। হার্টের সমস্ত ধরনের রোগ, ব্রেন স্ট্রোক সব কিছুই হতে পারে। শিশুদের সাধারণ সমস্যা থেকে গলা ব্যথা, সর্দি কাশি হয়েই থাকে। কিন্তু বোঝার উপায় থাকে না এটা ভাইরাস থেকে হচ্ছে না ব্যাকটেরিয়া থেকে হচ্ছে। কিন্তু গলা ব্যথা যদি বারবার হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত । সাধারণ কিছু টেস্ট আছে তার মাধ্যমে বোঝা যাবে সংক্রমণ হয়েছে কিনা। তবে আগে আমাদের দেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব যেমন হত এখন তার চেয়ে অনেক কমে গিয়েছে।
রোগের ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার। প্রাথমিক অবস্থায় যদি ধরা পড়ে ও সঠিক চিকিৎসা হয় তাহলে রোগটি সাধারণ। বাড়ির চারপাশ ও সংলগ্ন এলাকা পরিষ্কার রাখা, স্বাস্থ্যকর পরিবেষে বাস, গলা ব্যথার মতো লক্ষণ দেখা গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। শুরুতেই ধরা পড়লে সাধারণ চিকিৎসায় সেরে যায়। পেনিসিলিন ইঞ্জেশন দেওয়া হয় চিকিৎসায়।
কম বয়সে ধরা পড়লে ৫ বছর বা ২১ বছর পর্যন্ত দেওয়া হয়। কারুর যদিই হৃদযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাদের রোগ ধরা পড়ার পর টানা ১০ বছর দেওয়া হয় পেনিসিলিন। তিন সপ্তাহ ছাড়া ছাড়া।
কারুর যদি হার্টের ভালভ ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে তাঁকে এই ইঞ্জেকশন ৪০ বছর পর্যন্ত বা অনেক সময় সারাজীবন দেওয়া হতে পারে ক্ষতি এড়াতে।