'জিয়ো আড্ডা উইথ অনিন্দিতা সরকার' শোয়ে আজ অতিথি অভিনেত্রী দেবলীনা কুমার ও পরিচালক রাজর্ষি দে। ৭ জুলাই মুক্তি পাবে তাঁর ছবি ‘মায়া’। শেক্সপিয়ারের বিখ্যাত নাটক ‘ম্যাকবেথ’ অবলম্বনে এই ছবি পরিচালকের বহুদিনের স্বপ্নের ফসল। প্রথমবার সমকামী চরিত্রে দেখা যাবে দেবলীনাকে। কতটা পরিশ্রম আর রোমাঞ্চ লুকিয়ে আছে ছবি তৈরির নেপথ্যে, সেই কাহিনি শুনুন তাঁদের মুখেই।
প্রঃ ‘ম্যাকবেথ’কে কীভাবে বাংলায় আনলেন? ‘মায়া’র বিষয়টা কী?
রাজর্ষি দেঃ ‘ম্যাকবেথ’ করব অনেকদিন ঢরেই প্ল্যানে ছিলাম। কিন্তু ‘আবার কাঞ্চনজংঘা’ যখন হল তখন শ্যুটিং চলাকালীন সবাই এমন বন্ধু হয়ে গেল, অনেকটা পরিবারের মতো, ১৭ দিন একসঙ্গে থেকে শ্যুটিং করা ফুল টিমটাকে পরে খুব মিস করছিলাম। তখন প্ল্যানই করেছিলাম পরবর্তী ছবি যেটা করব সেটা এই এতজন কাস্ট নিয়েই করব, চেষ্টা করব ‘আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা’ টিমের অনেকে যাতে সেখানে থাকে। কিন্তু যেটা ভাবি সেটা সবসময় হয় না। শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, অর্পিতাকে রাখতে চেয়েছিলাম, ডেট ম্যাচ হয়নি। সেরকম অনেকগুলো জায়গা হয়নি। কিন্তু যেটা হয়েছে দেবলীনা ছিল আমার সঙ্গে।প্রায় অনেকগুলো কাজ ওকে ছাড়া প্রায় হয়নি। যে কটা কাজ করেছি। এবারে সেটা লিখতে লিখতে আমি মনে করলাম যে ফাইনালি ‘ম্যকবেথ’ কোথাও গিয়ে এটা লেডি ম্যাকবেথের গল্প, আমার পাঠ্য ছিল, সিএ সময় মনে হয়েছিল, সেই এলিজাবেথের সময়ে কোনও মহিলাকে যদি প্রধান চরিত্র করা হয় তাহলে দর্শক প্রতিক্রিয়া কী হবে সেটা ভেবেই হয়ত শেক্সপিয়র লেডি ম্যাকবেথকে নিয়ে কাজটা করেনি, ম্যাকবেথকে নিয়ে কাজটা করেছিলেন। আমার সব সময় মনে হত লেডি ম্যাকবেথই প্রোটাগনিস্ট আর ম্যাকবেথ তার অল্টার ইগো, তো সেটা করতে করতে আমার মনে হল এই গল্পে উইচরা খুব গুরুত্বপূর্ণ। উইচ এবং মহিলাদের আমি এমনভাবে পোট্রে করব যাতে তারা সমাজে রেবেল হয়ে ওঠেন। পাওয়ার স্ট্রাকচার ফাইনালি পুরুষদের হাত থেকে মহিলাদের হাতে চলে যাচ্ছে- এটা আমি সোশ্যিও পলটিক্যালিও বিশ্বাস করি এবং নিজের জায়গা থেকেও বিশ্বাস করি। এটা হয়ত আগামী দিনে খুব শিগগিরি ঘটে যাবে। তো সেই জায়গা থেকেই মায়া ভাবা এবং আমার অন্যান্য অভিনেত্রীদের মধ্যে এবারে সুদীপ্তা চক্রবর্তী, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় আছেন। কণীনিকার সঙ্গে আমার যখন চ্যানেলে চাকরি করতাম তখন ও একটা গুরুত্বপূর্ণ ছবি করেছিল, সেই সময় থেকে আমাদের ছবি করার প্ল্যান। কণি এই ছবিতে কাজ করল, আর বাংলাদেশ থেকে মিথিলা এই ছবিতে আছে। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করেছি।
প্রশ্নঃ দেবলীনা, তোমাকে নানারকম সিরিয়াস চরিত্রে দেখেছি, এই ছবিতে তুমি সমকামীর চরিত্রে অভিনয় করছ। খুবই চ্যালেঞ্জিং। যখন এ ধরণের চরিত্রের অফার পেলে তখন কী মনেছিল, কেন রাজি হলে আর অভিনয় করতে গিয়ে কেমন লাগল?
দেবলীনা কুমারঃ যখন অভিনয় করব ভাবি তখন সব সময় একটা জিনিসই চেয়েছিলাম আমি যেন গাছ ধরে ঘুরে ঘুরে গান নাচ করি কিন্তু সেটা খুব একটা হয়নি, খুব কম ঘটেছে। আমি খুব থ্যাঙ্কফুল যে কিছু এমন এমন রোল পেয়েছি খুব অন্যরকমের ছোট বড় সব মিলিয়ে। রাজর্ষিদা’র ছবিতে রাজর্ষিদা সবসময় খুব অন্যরকম কিছু অফার করে। আমি কখনও জিজ্ঞাসা করিনি কী আছে। উনিই সব বলে দেন। তো এটা যখন জানতে পারি সমকামী চরিত্র শুনেই ভীষণ চ্যালেঞ্জিং লেগেছিল। এই ধরনের ‘আইডেনটিটি’ এখন অনেক সামনে আসছে কিন্তু আমরা যখন বড় হয়েছি সেই সময় মানুষের মধ্যে এতটা সচেতনতা ছিল না, সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন নিয়ে মানুষ এতটা ওপেন ছিল না। সেই জন্য এখন বেশ কিছু ট্যাবু রয়ে গিয়েছে। কাউকে দেখে এই ক্যারেক্টারটা করতে পেরেছি মাথায় এরকম কেউ ছিলনা। বেশিরভাগটাই রাজর্ষিদার হেল্প। আমার যে কো-পার্টনার হয়েছে আমার, রাতশ্রী ওর সঙ্গে টিউনিংটা আমার মনে হয় খুব ভাল জমেছিল। যখন ডাবিং করেছি তখন খুব এস্থেটিক্যালি বেরিয়েছে। কারণ বাঙালি দর্শকদের একটা লিমিট আছে এখনও মাইন্ডসেট অতটা তৈরি হয়নি সব চরিত্র দেখার জন্য। সেখান থেকে আমার মনে হয়েছে এই দুটো ক্যারেক্টার এস্থেটিক্যালি এসেছে অথচ তারা খুব এমপাওয়ারিং।
প্রঃ রাজর্ষি, আমরা তো জানি দেবলীনা ভীষণ ভাল ডান্সার, স্কুল আছে তুমি ওকে নাচের কোনও কিছুতে ভাবনি কেন এখনও পর্যন্ত?
দেবলীনা কুমারঃ ঠিক
রাজর্ষি দেঃ আমার সঙ্গে যখনই ওর কথা হয় ও এই যেটা বলল সেটা বলে। আচ্ছা আমরা এমন একটা ছবি করতে পারিনা যেখানে নায়িকাদের মতো দৌড়ে দৌড়ে গান গাইছি। কিন্তু আমার মনে হয় ওর মধ্যে একটা প্রচন্ড ইন্টেনসিটি আছে এবং ওকে দর্শক যেভাবে দেখে সেটা খুব ক্ল্যাসি এলেগেন্সের মধ্যে দেখে। যার ফলে আমি সব সময় চেষ্টা করেছি ওকে যে রোলগুলো অফার করব সেটা সিরিয়াস হোক। যদিও ‘আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা’ সেই অর্থে সিরিয়াস নয়, ও আসতে দর্শক খুব হেসেছে। কিন্তু ‘মায়া’তে ডেফিনেটিলি খুব সিরিয়াস এবং আমরা ার একটা ছবি করেছি ‘সাদা রঙের পৃথিবী’ সেটাতে আরও বেশি সিরিয়াস। সেটাতে আমার মনে হয় অভিনেত্রী হিসেবে সেটা রাও বেশি চ্যালেঞ্জিং আমার সঙ্গে কাজ করার হিসেবে।
দেবলীনা কুমারঃ এটা রাজর্ষিদা বলছে হয়ত পরিচালক হিসেবে একসঙ্গে এতগুলোও কাজ করে বুঝে গিয়েছে। আমার মা বলেন আমি আসল জীবনে যতটা হাসিখুশি ক্যামেরা সামনে বোধহয় ততটা সিরিয়াস রোলেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। প্রেম, রোম্যান্স এগুলো একটু কম আসে এক্সপ্রেশনের নিরিখে।
প্রঃ রাজর্ষি’র যতগুলো কাজ এখনও পর্যন্ত দেখেছি সবগুলোতে অলমোস্ট দেবলীনা, এটা অন্যদের কাছে একনম্বর প্রশ্ন, দু নম্বর ঈর্ষার জায়গা। এটা কেন? এটা কি তোমারা ভাল বন্ধু, নাকি বোঝাপড়া ভাল নাকি যখন কাজ নিয়ে ভাবিস তখন ওর জন্য কিছু একটা বেরিয়েই আসে?
রাজর্ষি দেঃ ‘কফিউইথ করণে’ দেখেছিলাম কর্ণ বলেন আমার কাছে প্রতিদিন সকালে একটা ফোন আসে যে ফোনটা আমাকে করিনা কাপুর করেন এবং সারাদিন ধরে গসিপ করি। আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, ইন্ড্রাস্ট্রিতে না খুব বন্ধু হয় না। আমি নর্মালি এত বছর থেকে দেখেছি বন্ধু ব্যাপারটা ইন্ড্রাস্ট্রির কলিগদের মধ্যে হয় না তাই কোন একটা অজানা কারণে ও খুব ভাল বন্ধু আর কমরেড হয়ে যায়। এমন না যে প্রতিদিন ফোন করে আমায় গসিপ করে, কিন্তু আমার যখন পেটটা গুড়গুড় করে, বা প্রচন্ড দরকারী কিছু বলতে হবে যেটা কাউকে বলতে পারব না ইন্ড্রাস্ট্রির গসিপ তখন ‘দেবু’কে ফোন করি। এটা উল্টোদিক থেকেও। মন খারাপ থেকে ভাল লাগা সব কিছু।
দেবলীনা কুমারঃ আমি কখনও বলিনি যে রাজর্ষিদা ওই ক্যারেক্টারটা আমাকে দাও। এটা কখনও হয়নি।
প্রঃ দেবলীনা তোমাকে সাইকেলিং করতে দেখা যায়, তার সঙ্গে তুমি ড্রাইভিং করো, তো কোনটা প্রিয়?
দেবলীনা কুমারঃ দ্যাখো, কলকাতার ভোর সকালে সাইকেলিংটা, সাতটার পর ভীষণ আনসেভ। আমরা যারা শখে চালাই এবং জোরে চালাই এটা এক্সারসাইজের পার্ট, তখন সাতটার পর সত্যি চালাতে পারিনা তখন গাড়ি। আমি গাড়ি চালাতেও খুব ভালবাসি।