'জিয়ো আড্ডা উইথ অনিন্দিতা সরকার' শোয়ে আজ অতিথি টিম ‘আকরিক’, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, সহ প্রযোজক দীপক পারিক এবং পরিচালক তথাগত ভট্টাচার্য। আইসবার্গ ক্রিয়েশনস-এর প্রথম নিবেদন ‘আকরিক’ মুক্তি পাচ্ছে ৭ এপ্রিল। ছবির নাম রহস্য থেকে হিমাচলে শ্যুটিং-এর বিশেষ ঘটনা, আর কেনই বা এই ছবি বাংলার দর্শকদের অন্য পথে ভাবাবে, সেই কাহিনি শুনুন তাঁদের মুখে
প্রঃ ‘আকরিক’ নামটা ভীষণ ইউনিক, এরকম একটা নাম ভাবলে কেন?
তথাগত ভট্টাচার্যঃ যেহেতু সাবজেস্ট একটু অফবিট, যৌথ পরিবার, নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি, সিঙ্গেল পেরেন্টিং এই যে বাঙালি কমিউনিটিতে Disintegration হয়ে এসেছে এই প্রসেস মিলিয়ে ছবির ভাবনা। তাই নামটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেই জন্য আমার মনে হয়েছে ‘আকরিক’ একটু অন্য ধরনের নাম। এই নামে আগে কোনও বাংলা ছবি হয়নি।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তঃ তোমার কেন মনে হল যে ‘আকরিক’র সঙ্গে এই ‘Ore’এর ব্যাপারটা যায়?
তথাগত ভট্টাচার্যঃ তার কারণ হচ্ছে একটা প্রশ্ন আমরা করছি যে আমরা সিঙ্গেল পেরেন্টিং-এ এসে গেছি, জয়েন্ট ফ্যামিলি স্ট্রাকচার থেকে, আমরা কি শিকড় থেকে সরে গিয়েছি?
প্রঃ এই শিকড়ের কথা তুমি ছবির সংলাপেও বলেছ...
প্রঃ ঋতুদি, তুমি তো খুব বেছে বেছে ছবি করো, এই ছবির কোন ব্যাপারটা তোমায় বেশি টেনেছিল, তাই চরিত্রটা করতে রাজি হলে?
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তঃ প্রথমত, নতুন আইডিয়া আমার ভাল লাগে। নতুন পরিচালক, প্রযোজক- সব সময় মনে হয় যে আমি নতুনদের সঙ্গে কাজ করি। কিন্তু এই ছবির ক্ষেত্রে মনে হয়েছিল এটা খুব Relevant একটা বিষয়। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই ঘটনা বা পুরো কনসেপ্ট নিয়ে তথাগত যে কাজটা করেছে সেটা এমনই যে আমাদের প্রত্যেকের জীবনের সঙ্গে কোথাও না কোথাও গিয়ে আইডেন্টিফাই করতে পারি। এটা সমাজের জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছবি। ছবিটার সঙ্গে যখন যুক্ত হলাম ছবিতে অনেক ডায়লগ আছে যেগুলো মনে হয়েছে আমি আমার ছেলেকে এই কয়েকদিন আগেই এই কথাগুলো বলেছি। অনেকগুলো জায়গা আছে যেগুলো মনে হয় আরে আমিও তো এইভাবেই ভাবি।
প্রঃ দীপক, বাংলায় আঞ্চলিক ছবিতে হঠাৎ ইনভেস্ট করতে কেন ইচ্ছে হল? হিন্দি বা দক্ষিণের ছবিতে তো লাভ অনেক বেশি...
দীপক পারিকঃ দেখুন, আইসবার্গ ক্রিয়েশনের এটাই প্রথম ছবি। তারও আগে থেকে আমি কন্টেন্ট ক্রিয়েৎ করি, তো আমার মনে হয়েছিল রিজিওন্যাল স্পেসের চাহিদা অনেক বেশি, ার যত সিনেমা বানানো হোক মেইনস্ট্রিমে হিন্দি, ইংরেজি অনেক বেশি। তাই এমন কিছু চাই যেটা অন্যরকম। সেই অন্যরকম তখনই আসবে যখন এমন বিষয় বাছা হবে যেটা নিয়ে আগে কাজ হয়নি। পরিবারে Disintegration যেটা বাঙালি কমিউনিটিতে সবচেয়ে প্রথমে শুরু হয়েছিল-এমন একটা বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলতে পারি। আর একটা মেসেজ আমরা দর্শকদের দিতে চাই। আমরা এটা বলছি না যে জয়েন্ট ফ্যামিলি ভাল বা নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি ভাল, দর্শকই ঠিক করে নেবে কোন ধারণা ভাল। রিজিওন্যাল ল্যাঙ্গুয়েজের সবচেয়ে ভাল ব্যাপার হল কমিউনিটির কিছু হলেই একে অপরের পাশে দাঁড়ায়। এটা আমাদের সবে শুরু। এমন ছবি আমরা আরও করব।
প্রঃ এই প্রশ্নটা দুজনকেই, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত আর ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
তথাগত ভট্টাচার্যঃ ঋতুদি যদি না করত তাহলে হয়ত ছবিটা এই মুহূর্তে করতাম না। কারণ আম ওঁর সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলাম। ভিক্টরদার সঙ্গে আগেও কাজ করেছি। ২০০১ সালে রিলিজ হয়েছিল আমার প্রথম ছবি ‘অন্তর্ঘাত’। মুখ্য চরিত্রে ছিলেন ভিক্টরদা। তাই তাঁর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা আছে। ভিক্টরদাকে বাংলা ছবিতে ফিরিয়ে আনার কথা যে সবাই বলছে এটা আমার কাছে কমপ্লিমেন্ট। হিরো হিসেবেই তিনি ফিরছেন। কিন্তু ঋতুর সঙ্গে এটাই আমার প্রথম কাজ। ডিরেক্টর যদি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড উইনার সুপারলেটিভ অ্যাকট্রেসের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পায় সেটা চ্যালেঞ্জিং। সেই জন্যই এটা আমার কাছে ভীষণ ভাল একটা অভিজ্ঞতা।
এছাড়া আর একটা পয়েন্ট আছে, সেটা কো-ইন্সিডেন্টসও হতে পারে। আমাদের ফ্যামিলিতে কিন্তু ঋতু আগেও কাজ করেছেন। আমার দাদা আর্য ভট্টাচার্য বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর পরিচালনায় ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’ নামে একটা ছবি প্রযোজনা করেছিলেন যেটা ‘স্বর্ণকমল’ পুরস্কার পেয়েছিল। সেই সময় থেকে আমার সঙ্গে আলা, আমি মনে করি এই কাজটা একটা রি-ইউনিয়ন।
দীপক পারিকঃ আমাদের জন্য তো প্রথম কাজ। ঋতুদির সঙ্গে প্রথম কাজের অভিজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ম্যাজিকের মতো!
প্রঃ তোমরা মনে হয় কোভিদটা তখন সবে শুরু হয়েছে সেই মুহুর্তে শ্যুট করেছিল, সেই সময়টা কঠিন ছিল।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তঃ ইনফ্যাক্ট, তথাগতর সঙ্গে তখন আলোচনা চলছিল শ্যুটিংটা কীভাবে হবে। একটা ডেট আটকে গেল। তারপর কোভিদ যখন একটু কম তখন নতুন ডেট নিয়ে ও বলল। আমি তথাগতকে বললাম সেকেন্ড ওয়েভ আবার আসছে আমাদের ভাবতে হবে। হঠাৎ শ্যুটিং করতে গিয় যদি কিছু হয় সেটা ডিজাস্টার।
তথাগত ভট্টাচার্যঃ সেই সময় প্রযোজকের সাপোর্ট খুব পেয়েছি। সব সময় পাশে থেকেছেন।
দীপক পারিকঃ একটা টিম এফোর্ট। কেউ পিছিয়ে গেলে ছবি অসুবিয়াধায় পড়ত।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তঃ আই উইল অলসো টেক দিস অপারচ্যুনিটি টু থ্যাঙ্ক টু দীপক অ্যান্ড অশোকজী। বিকজ দে অলসো ফেল্ট ভেরি স্ট্রংলি অ্যাবাউট দিস ফিল্ম। ওঁরা আন্তরিকভাবে মনে করেছেন ছবিটা হওয়া উচিত। ছবির প্রতি বিশ্বাস রেখেছেন, সঙ্গে থেকেছেন। প্রযোজক হিসেবে। সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
তথাগত ভট্টাচার্যঃ একটা কথা বলব, ‘আকরিক’ ভীষণভাবে কমার্শিয়াল ছবি। যাতে ছবিটা সবাই সপরিবারে দেখতে পারে সেভাবেই ছবিটা বানিয়েছি। সফট ন্যারেটিভ হিসেবে। সাবজেক্ট অফবিট কিন্তু ট্রিটমেন্ট সফট, তাহলেই মানুষকে ছুঁতে পারবে।
প্রঃ এই ছবির মিউজিকও ভাল হয়েছে…
তথাগত ভট্টাচার্যঃ মিউজিকের ক্ষেত্রে বলতে চাই একটা থিম সং আছে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের তিনটে ব্যবহার করেছি। যেহেতু বাঙালি কালচারের ওপর ছবি তাই রবীন্দ্র সঙ্গীতের ব্যবহার। বাংলার ট্র্যাডিশন নিয়ে কথা বলি তাই রবীন্দ্র সঙ্গীত মাস্ট। অনেকদিন পর বাংলা ছবিতে দর্শক রবীন্দ্রসঙ্গীত এভাবে পাবে।
প্রঃ ঋতুদি, তোমায় তো ভীষণ সুন্দর লেগেছে…
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তঃ হ্যাঁ, আমি লুকটা চেঞ্জ করেছি। এই ছবিতে আমার অ্যাটিটিউড, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, এক্সপ্রেশন অনেক চেঞ্জ করেছি। পরিচালক চেয়েছিলেন আমার চুলটা কার্লড হোক। কস্টিউম, কালার স্ক্রিনিং হোক।
তথাগত ভট্টাচার্যঃ ওঁর রোলটা মর্ডান, সিঙ্গেল মাদার, ভিক্টরদা ট্র্যাডিশনাল। এক্সপ্রেশন, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ সবেতেই এই ব্যাপারটা ধরে রাখার চেষ্টা করেছি।
প্রঃ দর্শকদের কী বলবে?
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তঃ দর্শকদের একটা কথাই বলতে চাই ৭ এপ্রিল ২০২৩ আমাদের প্রতীক্ষিত ছবি ‘আকরিক’ আসছে। আমি এবং আরও অনেক বিশেষ মানুষকে আমরা এই ছবিতে পেয়েছি। স্পেশ্যালি ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি চাইব দর্শকরা এই ছবিকে সাপোর্ট করুক। আমি আশা করব আপনারা সবাই মিলে ছবিটা সুপারহিট করবেন।
দীপক পারিকঃ ‘আইসবার্গ ক্রিয়েশন’স এর প্রথম ছবি ‘আকরিক’। আমরা খুব সংবেদনশীল একটা বিষয় নিয়ে কাজ করেছি। সকলেই কোথাও না কোথাও কোনও না কোনওভাবে নিজেদের মেলাতে পারবেন। মিল খুঁজে পাবেন। এই ছবির সবেচেয়ে ভাল বিষয় আপনি পুরো পরিবারের সঙ্গে দেখতে পারবেন।
তথাগত ভট্টাচার্যঃ আমরা খুব অনেস্টলি ছবিটা বানিয়েছি। সবার দেখার মতো ছবি। ৭ এপ্রিল প্রেক্ষাগৃহে আসছে। ছবিটা আপনার ভাল বা খারাপ লাগতে পারে। কিন্তু এই ছবিকে কোনওভাবেই এড়িয়ে যেতে পারবেন না।