সদ্যজাত শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত, নেপথ্যে প্রধান ভূমিকায় কি জিন? ক্যানসার মুক্তির একমাত্র উপায় কি সার্জারি? কর্কট রোগ নিয়ে ভুল ধারণা ভাঙতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? ৭ নভেম্বর ক্যানসার সচেতনতা ও প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ক্যানসার সাবধানতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন সার্জিক্যাল ও অনকোলজিস্ট ডাঃ অর্ঘ্য বসু
ক্যানসার নিয়ে এখনও মানুষের প্রচুর ভয়। তা যে সবটা অমূলক এমন নয়।
ডাঃ অর্ঘ্য বসু জানিয়েছেন ক্যানসার এমন একটা রোগ যা নিয়ে রোগের থেকে রোগের মিথ অনেক বেশি। ক্যানসার যতটা ভয়ঙ্কর, মানুষ আরও ভয়ঙ্করভাবে তার ব্যাপারে ধারণা গড়ে তোলে। ক্যানসার হলেই যেন মৃত্যু। রোগীর আর বাঁচার কোনও আশা নয়। ব্যাপারটা কিন্তু আদপে তা নয়। ক্যানসার সেরে যায় যদি সঠিক সময়ে ক্যানসার ধরা পড়ে, রোগী সঠিক চিকিৎসকের কাছে যায়। এবং সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা হয়। ক্যানসারের ৪ টি স্টেজ হয়। কিন্তু যদি সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা হয় তাহলে স্টেজ থ্রি পর্যন্ত সেরে যায়। ক্যানসার অলওয়েজ হ্যাজ অ্যানসার। ক্যানসার হয়েছে মানেই রোগে ভুগে কষ্ট পেয়ে মারা যাবে এমন দিন আর নেই। তার জন্য চাই সকলের মধ্যে সচেতনতা।
ক্যানসার লম্বা একটা চিকিৎসা। অনেক সময় চিকিৎসা পদ্ধতিতে নিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষা চালাতে গিয়ে অনেক সময় শুরুর সময় নষ্ট হয়। ক্যানসার সারা শরীরের যে কোনও জায়গায় হতে পারে। যে অঙ্গে হবে সেই অঙ্গের কিছু লক্ষণ থাকে। মুখের ক্যানসার হলে মুখে ঘা দেখা দিতে পারে। জিভে ব্যথা, নাড়াচাড়া করতে না পারা, গলার ক্যানসার, কণ্ঠ নালীতে ক্যানসার হলে দেখা যায় গলার স্বরটা ভেঙে যায়, কাশি হলে তার সঙ্গে রক্ত। ফুসফুসে ক্যানসার হলে কাশির সঙ্গে রক্ত ওঠে। ভীষণ ওজন কমে যেতে থাকে। রোগী খেতে পারছে না। খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। দুর্বলতা। অন্ত্রে ক্যানসার হলে পেটব্যথা, ব্রেস্ট ক্যানসারে লাম্প দেখা যায়। লিউকোমিয়া রক্তের ক্যানসারে প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। লিম্ফোমাতে সারা শরীরে কিছু গ্ল্যান্ড দেখা যায়।
ক্যানসার একাধিক কারণে হতে পারে। খাদ্যভ্যাস, ধূমপান, তামাক ব্যবহারের অভ্যাস এসবই ক্যানসারের কারণ। পেশার পরিবেশও ক্যানসারের কারণ হতে পারে। সেভাবেই বংশগতি বা জিনও ক্যানসারে বড় ভূমিকা নেয়। ক্রোমোজমের অসংগতি ক্যানসারের সম্ভাবনার অনুঘটক। সকলের ক্রোমোজমেই কিছু না কিছু অসংগতি দেখা যায়। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে তা ক্যানসার হয়ে ওঠে। এই তফাতের কারণ পরিবেশ। লিউকোমোয়া, লিম্ফোমা, রেটিনোব্লাস্টোমা শিশুদের এই ধরনের ক্যানসার দেখা যায়। এগুলো বেশিরভাগ জেনেটিক।
যে কোনও রোগ থেকে সেরে ওঠার থেকেও ভাল তাকে প্রতিরোধ করা। নেশা, ধূমপান থেকে দূরে থাকা, সঠিক জীবনযাত্রা মেনে চলা রোগ সচেতনতার মূল কথা। অপারেশন করলে ক্যানসার ছড়িয়ে যাবে, বায়োপসি করলে ক্যানসার ছড়ায় বড় ভুল ধারণা। ক্যানসার চিকিৎসায় সার্জারি ছাড়া আর কোনও অপশন নেই এ ধারণা ৩০ বছর আগে প্রচলিত ছিল। তারপর চিকিৎসা শাস্ত্রের বহু উন্নতি হয়েছে। অপারেশন, কেমো এবং রেডিয়েশন এই তিন শব্দ সবাই জানেন। এছাড়াও আরও বিকল্প আছে যা দিয়ে ক্যানসারের মোকাবিলা করা যায়। ইমিউন থেরাপি, হরমোন থেরাপি, ডায়রেক্টেড থেরাপির সুযোগ রয়েছে।