গর্ভাবস্থায় হাইপো ও হাইপার থাইরয়েড ধরা পড়লে তা কি মায়ের থেকে সন্তানের মধ্যেও ছড়িয়ে যেতে পারে? থাইরয়েড সমস্যা থাকলে বেবি প্ল্যানিং কতটা ঝুঁকির? গর্ভাবস্থায় থাইরয়েডের লক্ষণগুলো কী কী? গর্ভবতী মাকে কী ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে? বিস্তারিত জানালেন ডাঃ সোনালী মুখোপাধ্যায় ভট্টাচার্য্য (Dr. Sonali Mukherjee Bhattacharyya , MBBS Dip. G. O.)
ডাঃ সোনালী মুখোপাধ্যায় ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন, থাইরয়েড গ্রন্থি সকলের শরীরেই আছে। এই গ্রন্থি থেকে থাইরয়েড হরমোন নিঃসৃত হয়। সেই নিঃসরণ বেড়ে গেলে তা হাইপার থাইরয়েড, কমে গেলে হাইপো থাইরয়েড। এই দুই পরিস্থিতিই অস্বাভাবিক। তখন প্রয়োজন পড়ে চিকিৎসার। হাইপো আর হাইপার দুই ক্ষেত্রেই সমস্যা দেখা যায়। থাইরয়েড গ্রন্থির নিঃসরণ টি-থ্রি, টি-ফোর তার সঙ্গে যুক্ত যে অন্য হরমোনটি তার নাম টিএসএইচ মানে থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন। সেগুলির ওঠানামা হলে শরীরে অসুবিধা হয়। তার ফলে যিনি গর্ভবতী হতে চাইছেন তাঁর কিছু সমস্যা হতে পারে এবং গর্ভস্থ সন্তানেরও সমস্যা হতে পারে। কাজেই এটা জেনে রাখা দরকার যে থাইরয়েড হরমোনটি ঠিকঠাক কাজ করছে কি না।
এখন বিভিন্ন প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে যে শিশুকে যখনই গর্ভে পাচ্ছেন মা সেই সময়ই একটা পরীক্ষা করানোর দরকার আছে। এবং চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। এইভাবে যখন
প্রথমবার কোনও গর্ভবতী মা চিকিৎসকের কাছে আসেন তখন আন্টিনেটল চেকআপ করা হয়। তখনই কিছু কিছু চেকআপ রুটিন হিসেবে লিখে দেওয়া হয়। চিকিৎসককে প্রথমেই জানতে হবে মা হতে চাইছেন এমন মানুষের শরীরের ভিতরের আভ্যন্তরিন অবস্থা কেমন। তবেই পরবর্তী পদক্ষেপের উপদেশ দেওয়া ও চিকিৎসা সম্ভব হবে। সেইভাবে রুটিন চেকআপ করা হয় যখন তখন প্রথমেই কমপ্লিট হিমোগ্রাম, টিসিডিসি ইএসআর এবং টি থ্রি, টি ফোর টিএসএইচ থাইরয়েডের এই পরীক্ষা করা হয়। চিকিৎসকের কাছে জানা জরুরি হয় যে মায়ের থাইরয়েড হরমোন কিভাবে কাজ করছে শরীরে। তখনই ধরা পড়ে থাইরয়েড গ্রন্থির কোনও রকম অস্বাভাবিকতা আছে কি না।
প্ল্যাসেন্টা যার মাধ্যমে শিশু মায়ের শরীরের সঙ্গে যুক্ত থাকে জরায়ুর ভিতরে আটকে থাকে সেখানে কিছু আদানপ্রদান হয়। যার ফলে খাদ্যদ্রব্য মায়ের কাছ থেকে শিশুর কাছে আসে, গর্ভস্থ শিশুর মল মূত্র বর্জ্য তার মাধ্যমেই চলে আসে মায়ের দেহে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্ল্যাসেন্টা ফিল্টারের কাজ করে। কিছু ক্ষেত্রে প্ল্যাসেন্টা নিজেকে খুলে দেয় এই আদান প্রদানের ক্ষেত্রে। সেভাবে থাইরয়েড শিশুর শরীরে পৌঁছায়। যার জন্য যদি থাইরয়েডের কোনও তারতম্য থাকে রক্তে সেক্ষেত্রে শিশুর ব্রেনের গঠন ঠিকভাবে হয় না। স্নায়ু তন্ত্র কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমজোরি হয়ে পড়ে। সেই জন্য চিকিৎসকরা বলেন হাইপো বা হাইপার থাইরয়েড থাকলে সেটা তক্ষুনি চিকিৎসা করে সারিয়ে নেওয়া উচিত। নাহলে শিশুর ব্রেনের গ্রোথ ঠিক মতো হয় না। পরবর্তীকালে গিয়ে তার আইকিউ এবং বুদ্ধিমত্তার কোনও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সাবধানতা অবলম্বনের জন্য প্রথমেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। থাইরয়েড লেভেল প্রতি চার সপ্তাহ অন্তর মেপে দেখতে হবে। কেননা গর্ভবস্থাকে তিনভাগে ভাগ করা হয়। নয় মাসের মধ্যে তিন মাস করে যে তিনটে ভাগ সেভাবেই থাইরয়েডের একটা লেভেল ঠিক হয় স্বাভাবিক অস্বাভাবিকের। কম বা বেশি থাকলে ওষুধ দিয়ে ঠিক করা হয়। চার সপ্তাহ অন্তর দেখে ওষুধের মাত্রাও বাড়ানো কমানো হয়। এভাবে মা ঠিক থাকেন। থাইরয়েডের ভারসাম্যর তফাৎ হলে শুধু যে শিশুর সমস্যা হয় তা নয়,অনেক সময় গর্ভপাত, রক্তাল্পতার সমস্যা দেখা যায় মায়ের।
যদি হাইপো থাইরয়েড হয় তাহলে ক্লান্তি, ওজন বৃদ্ধি, গলা ভাঙা, চুল পড়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়।
হাইপার থাইরয়েড হলে খুব বেশি ঘাম, রক্ত চাপ বৃদ্ধির সমস্যা দেখা যায়। প্রি-টার্ম চাইল্ড, মিস ক্যারেজ, বা প্রসবের সময় এক্লাম্পসিয়ার মতো সমস্যা হয়। এই রকম লক্ষণ দেখা দিলেই সাবধান হতে হবে ও চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।