বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনা কতটা জরুরি? কীভাবেই বা তা সম্ভব? জিয়ো বাংলার সাথে কথা বললেন স্পেশাল এডুকেটর ছবি নাথ…
Highlights:
১। স্পেশাল বাচ্চাদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনা কীভাবে সম্ভব?
২। এডুকেশন সেন্টারে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়?
৩। সামাজিক বাধার মোকাবিলা করা কীভাবে সম্ভব?
বাচ্চা স্বাভাবিক কিনা এটা কীভাবে বোঝা সম্ভব?
যদি কোন ছোট বাচ্চার চোখের সামনে রঙিন বল এপাশ থেকে ওপাশ ঘোরানো হয়, আর তাতে যদি বাচ্চাটি স্বাভাবিক ভাবে রিঅ্যাক্ট করে, অর্থাৎ চোখ মেলে উত্তেজিত ভাবে তাকায়। তার অর্থ হল, বাচ্চাটি অন্ধ নয় বা তার চোখের কোনও সমস্যা নেই।
বধির বা কানে কম শোনা বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও, হাতে তালি বা ঝুনঝুনি দিয়ে নাড়ানাড়ি করলে যদি বাচ্চাটি আওয়াজ শুনে তাকায় তবে তার সেই বিষয়ে কোনও সমস্যা নেই।
বাবা-মায়ের ভূমিকা কতটা এই বিষয়ে?
বাবা-মায়ের এক্ষেত্রে সচেতন হওয়া খুব জরুরি। জন্মের কিছু মাস পর থেকেই যদি শিশুদের লক্ষ করা যায় তবে খুব সহজেই সমস্যা বুঝতে পারা যায়। তারা ঠিক মতো হাসছে-কাঁদছে বা তাদের ব্যবহার কেমন, এটা খেয়াল করতে হবে। সচেতন থাকলে প্রাথমিক স্তরেই সমস্যা চিহ্নিত করা সম্ভব হবে এবং তার ফলে সেটা ভালোভাবে সামলানো যাবে। অন্যথা বাচ্চার বয়স ৩-৪ বছর বয়স হয়ে গেলে বাচ্চাদের সঠিক কেয়ার নেওয়া সম্ভব হবেনা।
এছাড়াও আই ডি বাচ্চারা (Intellectual disability) যারা সেরিব্রাল পালসি রোগে আক্রান্ত হয়, তারা সঠিকভাবে হাঁটতে পারে না। বাবা-মা যদি বাচ্চার সমস্যা চিহ্নিত করতেই অনেক বছর কাটিয়ে দেয়, তবে সমাধান খুঁজতেও অলস্য আসবে।
বাচ্চারা কী এডুকেশন সেন্টারে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়?
এমন বাচ্চারা কখনই সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়না। কিন্তু তারা যাতে নিজেদের কাজটুকু করতে পারে, অর্থাৎ তারা জীবনের মূলস্রোতে কিছুটা যাতে মিশতে পারে, সেই চেষ্টাই করে এই স্কুল বা সেন্টারগুলো।
সব বাচ্চাকে দেখলে বোঝাও সম্ভব হয় না যে তাদের মধ্যে ডিসএবিলিটি রয়েছে। তাদেরকে সাধারণভাবে সুস্থ স্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু ডিসএবিলিটির যদি সঠিক সময় সঠিক যত্ন নেওয়া যায়, তবে বাচ্চাদের বিকাশ অনেকটা স্বাভাবিক হয়।
এছাড়াও যে বাচ্চারা সঠিকভাবে শুনতে বা বলতে পারেনা তাদের একমাত্র কমিউনিকেট করার মাধ্যম হচ্ছে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ। পড়াশোনা, নাচ, যোগা ইত্যাদি সবকিছুতে তারা অনেকটা পারদর্শী হয়ে ওঠে। এমনকি তারা এমন অনেক কাজ করতে পারে যেটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক বাচ্চারাও সহজে করতে পারে না। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক বাচ্চা এবং ডেফ এন্ড ডাম বাচ্চাদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে অনেক সময় দেখা গেছে, ডেফ এন্ড ডাম বাচ্চারা অনেক বেশি পারদর্শী ও উন্নত এই বিষয়ে।
স্পেশাল এডুকেটর টিচার কতটা সাহায্য করতে পারে?
শিক্ষিকারা যেহেতু পারদর্শী হয়। তাই বাচ্চাদেরকে শেখাতে অনেক সুবিধা হয়। সাধারণ বাচ্চাদের তুলনায় ডেফ এন্ড ডাম্ব বাচ্চারা কোন কাজ করার ক্ষেত্রে অনেক বেশি আগ্রহী হয়, ফলে তারা শিখতে পারে বেশি।
সামাজিক বাধার মোকাবিলা করা কীভাবে সম্ভব?
সমাজের দিক দিয়ে কঠোর কথা এবং তাচ্ছিল্যই একটি স্পেশাল বাচ্চার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতিকর। যদি বাচ্চাটিকে ছোটবেলা থেকেই বোঝার চেষ্টা করা হয় ও সাহস যোগানো হয়, তাহলে তারা ভয় কম পাবে এবং জীবনে অনেক এগিয়ে যেতে পারবে।
স্পেশাল বাচ্চারা কি স্বাভাবিক সমাজে মিশতে পারে?
তাদেরকে পার্ক বা যেকোনো জনসমাবেশে নিয়ে যেতে হবে, যাতে তারা সমাজের সাথে সহজে মিশতে পারে। এছাড়া অন্যান্য বাচ্চারা তাদেরকে কটু কথা বললে বাবা-মায়ের তাদেরকে বোঝানো উচিত যে, সবাই তোমরা বন্ধু। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক বাচ্চা ও স্পেশাল বাচ্চাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করালেও স্পেশাল বাচ্চাদের মনোবল বৃদ্ধি পাবে এবং তারা ধীরে ধীরে সমাজের মূলস্রোতে ফিরতে পারবে।
স্পেশাল বাচ্চাদের অভিভাবকদের জন্য কিছু বিশেষ পরামর্শ -
১। স্পেশাল বাচ্চা বলে অভিভাবকদের মনোবল হারানো যাবেনা।
২। স্পেশাল বাচ্চাদের অবহেলা করা উচিত নয়।
৩। তাদেরকে বিভিন্ন স্পেশাল প্রতিষ্ঠান ও স্কুলের সাথে যুক্ত করতে হবে।
দর্শকদের কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি,
স্বাভাবিক বাচ্চারা কী স্পেশাল বাচ্চাদেরকে বুঝতে সক্ষম?
স্বাভাবিক বাচ্চারা প্রাথমিকভাবে স্পেশাল বাচ্চাদেরকে বুঝতে চায় না কিন্তু সেক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ তাদেরকে সহবত শিক্ষা দিতে হবে।
চাকুরিজীবী দম্পতির বিশেষভাবে সক্ষম বাচ্চা কীভাবে সামলাবে?
এই ক্ষেত্রে তাদেরকে চাকরির পাশাপাশি বাচ্চার প্রতি বিশেষ কেয়ার নিতে হবে। এছাড়াও স্কুল বা স্পেশাল সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করলে তাদের কাছ থেকে বিশেষ সাহায্য পাওয়া যাবে।