বড় পর্দায় মুক্তি পেয়েছে অর্ঘ দীপ চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি ‘চিরসখা হে’। এই ছবি এক অন্য রকম সম্পর্কের ছবি। কেন্দ্রবিন্দুতে তিলোত্তমা আর ঈশান। সেই ভূমিকায় আছেন তনুশ্রী চক্রবর্তী আর ঈশান মজুমদার। এছাড়া আছেন বরুণ চন্দ, মিঠু চক্রবর্তী প্রমুখ। এই ছবিতে চরিত্র এক চিরকালীন ভালোবাসা। তবে এই ভালবাসা শুধু চেনা জানা মানব-মানবী সম্পর্ক নয়, ঘর ছাপিয়ে পথ আর পৃথিবীর কথাও বলে। শেখায় এক অন্য জীবন দর্শন।
জিয়ো আড্ডা উইথ অনিন্দিতা সরকার' শোয়ে আজ অতিথি টিম ‘চিরসখা হে’ তনুশ্রী চক্রবর্তী, অর্ঘ্যদীপ চট্টোপাধ্যায়, এবং ঈশান মজুমদার। ‘চিরসখা হে’র অজানা গল্প শুনুন তাঁদের মুখে।
প্রঃ ‘চিরসখা হে’ রবীন্দ্রনাথের গানের লাইন, এই নাম ভাবার পিছনে কী কারণ?
অর্ঘ্যদীপঃ নামটা ভাবার পিছনে নামের অর্থটা। চিরসখা মানে যে সখা চিরকালীন। সে বন্ধুত্ব, সম্পর্ক চিরকালীন। Beyond Timeline. এখানে যে সম্পর্কগুলঅকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সম্পর্কের যে বারাবরণে ছবিগুলঅ তৈরী সেখানে কোনও একটা নির্দিষ্ট সময়কে, মানুষকে বেঁধে রাখে না। ছাপিয়ে যায়। চিরসখা চিরকালীন। সেই বন্ধুত্ব আর ভালবাসার কথা বলা হয়েছে। তাই ছবির নাম ‘চির খা হে’। আর কবিগুরুর চেয়ে ভাল করে ভালবাসতে আর কে পারেন, তাই তাঁর লাইন থেকেই নেওয়া।
প্রঃ তনুশ্রী, তুমি তো এতো রকমের চরিত্র করেছ, এই চরিত্র তোমাকে কী বিশেষভাবে টেনেছিল যে তুমি ‘ইয়েস’ বলেছিলে?
তনুশ্রীঃ এই ছবিটার গল্প। সব ছবিই নিজের মতো ইউনিক। কিন্তু ছবির গল্প যদি আমাকে এক্সাইট না করে আমিও দর্শকদের এক্সাইট করতে পারব না। সেদিক থেকে এই ছবির গল্প খুব অন্যরকম। ছবির সঙ্গে দর্শক নিজেদের রিলেট করতে পারবে। সিচ্যুয়েশন দেখে ভাববে যে সে যদি সিচ্যুয়েশনে পড়ত কী করত। আর ছবির সিচ্যুয়েশনগুলোও আমাদের নর্মাল লাইফে খুব দেখা যায় না। আমাকেও রিলেট করেছিল। ছবির গল্প এই নিয়েই...
প্রঃ ঈশান, তুমি এই ছবিতে একেবারে অন্যরকম লুকে, এভাবে আগে কখনও তোমায় দেখা যায়নি। এটা কি অর্ঘ্যদীপের ভাবনা ছিল?
ঈশানঃ পুরোটাই অর্ঘ্যদীপের ভাবনা। ও যেভাবে আমাকে বানাতে চেয়েছে। কর্পোরেট লুক বা বনেদি বাড়ির ছেলে এভাবেই আমাকে দেখেছে মানুষ, এটা পুরোপুরি ভাঙতে চেয়েছিল ও। লুক, ম্যানারিজম সব কিছুই ও ডিজাইন করেছে।
প্রঃ তোমার চরিত্রটা ছকভাঙা মানুষের, যে চেনা শর্ত ভাঙতে ভালবাসে...
ঈশানঃ হ্যাঁ, ভীষণ ইম্পালসিভ। কিছু লোকজন আছে এই এটা করছে তো ওই ওটা করছে, উঠল বাই তো কটক যাই টাইপ। সেই ধরনের চরিত্র।
প্রঃ তনুশ্রীর সঙ্গে তোমার এই প্রথম, টলিউড একটা নতুন পেয়ার পেল?
তনুশ্রীঃ ঠিক ওইরকম না হয়ত, তুমি সিনেমাটা দেখলে বুঝতে পারবে এখানে প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের একটা ভালবাসার সম্পর্ক আছে। ছবিতে আম৮ই যে বাচ্চাগুলোকে পড়াই, যারা স্কুলে আসে তাদের সঙ্গে একটা ভালবাসার সম্পর্ক আছে। আমার বান্ধবী, ঈশানের জ্যেঠুর , মায়ের, বাড়ির সহকারী তার সঙ্গেও একটা সম্পর্ক আছে। প্রত্যেকটা মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক। দু’জনেঈ পার্ট প্লে করছে।
অর্ঘ্যদীপঃ জুটিটাকে ‘পেয়ারিং’ না বলে ‘কেমিস্ট্রি’ বলা যায়।
প্রঃ অর্ঘ্যদীপ, অনেকদিন পর আবার একটা ছবি নিয়ে ব্যাক করলে, এতটা ব্যাপ কেন?
অর্ঘ্যদীপঃ আমি নিজেকে একটু ভাঙতে চেয়েছিলাম। আমি থ্রিলার ধরনের ছবি করেছি, সেখানে মিস্ট্রি থাকবে, সেইদিক থেকে ‘চিরসখা হে’ আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ, আমি ধাঁচের ছবি করেছি সেই ধাঁচের নয় কিন্তু আমার সিগনেচার টাচগুলো থাকবে অবশ্যি। আমি এই ব্রেকটা নিতে চেয়েছিলাম কারণ আমি ভাবছিলাম এবার অন্যরকম কিছু করা সম্ভব কি না। তারপর কোভিদ এলো। ‘চিরসখা’ অরিজিন্যালি কোভিদের সময়ের যখন আমরা সবাই ঘরে আটকে। প্রত্যেকে যা চাইছিলাম সেটা পাচ্ছিলাম না। ভালবাসার মানুষকে কাছে পাচ্ছিলাম না। সব জায়গায় খারাপ খব। সেই রকম একটা জায়গা থেকে ভালবাসার আকাঙ্খা তৈরী হয়। সেই ঈমোশনাল জায়গা থেকে ‘চিরসখা হে’ তৈরী। এই সাইকোলজিটা আমাদের সবার খুব পরিচিত হলেও ছবির ক্ষেত্রে আমার কাছে একেবারে নতুন। এই সাইকোলজিটা নিজে অ্যাডপ্ট করার জন্য বিরতি নেওয়া।
প্রঃ ছবির গান তো হিট!
প্রঃ গান যখন তৈরী হচ্ছে তখন ইউনিটেই অলরেডি হিট করে গিয়েছিল। ‘চিরস্খা’তে খুব সচেতনভাবে চেষ্টা করা হয়েছে গান যাতে গল্পের চরিত্র হয়ে ওঠে। সেভাবেই গান তৈরী হয়েছে। সৌম্য ঋত খুব ভাল কাজ করেছে। সৌম্য ঋত ও দুর্ণিবার ওদের দুজনের জীবনে এই গান ল্যান্ডমার্ক হয়ে থাকবে। নচিকেতা, মেখলা দাশগুপ্তও অসাধারণ। চারটে গান চার প্যাটার্নের।
প্রঃ তোমাদের ছবির পুরো শ্যুটিংটাই তো পাহড়ে?
তিনজনেইঃ হ্যাঁ…
প্রঃ ‘চিরসখা’ হে করতে গিয়ে পাহাড়ে শ্যুটিং-এ কী পেলে? কেমন অভিজ্ঞতা?
তনুশ্রীঃ আসলে লোক শন এত ভাল। শ্যুট হয়েছে মিরিকে। একদিন গানের শ্যুট চলার সময় শিলাবৃষ্টি এলল। এই লোকেশন আগে কখনও সিনেমার পর্দায় দেখা যায়নি। খুব ভাল মোমো পাওয়া যায় ওখানে। ছোট ছোট ট্যুরিস্ট প্লেস। আমাদের ছবিতে ব্যাকগ্রাউন্ড খুব বড় একটা রোল প্লে করছে।
প্রঃ দর্শকদের কী বলবে?
তনুশ্রীঃ ছবিটা রিলিজ হয়ে গেছে। প্লিজ হলে গিয়েদেখুন। এঈ ছবিটা সবার সঙ্গে দেখার মতো ভালবাসার ছবি, আর আমাদের জানান।
অর্ঘ্যদীপঃ কদিন আগে দোল গেছে। ভালবাসার থেকে রঙ্গিন আর কিছু হয় না। এই ছবিটা ভালবাসা আর বন্ধুত্বের গল্প। একটা স্নিগ্ধ সম্পর্কের গল্প সবাই মিলে দেখে আসুন…
ঈশানঃ ভালবসুন। ভালবাসতে শেখান। আর যদি দুটোঈ করতে চান, তাহলে চিরসখা দেখে আসুন।