জীবনের প্রথম ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ কীভাবে পেয়েছিলেন অভিনেতা রাণা মিত্র?

ছোটবেলায় নাটকের মঞ্চে থেকে অভিনয় জীবনের সূচনা হয়েছিল অভিনেতা রাণা মিত্রের। ধারাবাহিকে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করার সুবাদেই খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি। পাশাপাশি 'সিটি অফ জয়', 'বোম্বাইয়ের বোম্বেটে', 'মনচোরা'র মতো ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি। ‘টলিকথা’র আড্ডায় উপস্থিত হয়ে নিজের জীবনের অজানা গল্প শেয়ার করলেন অভিনেতা রাণা মিত্র।

প্র: নতুন বছর কেমন কাটছে আপনার?

রাণা মিত্র: অস্বাভাবিক জীবন কাটাতে তো কেউ ভালবাসে না বা কেউ চায়ও না। আর অতিমারীর সময় প্রত্যেককেই নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাই সব কিছু স্বাভাবিক হওয়ার পর সকলেরই ভাল লেগেছে। আমারও খুব ভাল লাগছে।

প্র: আপনার অ্যাক্টিং কেরিয়ার শুরু হয়েছিল 'প্রেম জোয়ারে'-এ কাজ করার পর। এরপর আপনি অনেক ধারাবাহিক ও সিনেমায় কাজ করেছিলেন। কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়ার পর আবার 'বোম্বাইয়ের বোম্বেট' ছবি দিয়ে ব্যাক করেছিলেন।

রাণা মিত্র: না ঠিক তাই নয়, আমি 'প্রেম জোয়ারে'তে অভিনয় করার আগেও অনেক সিরিয়ালে অভিনয় করেছিলাম। শুরুর দিকে পরিচালকদের দরজায় দরজায় ঘুরতে হয়েছিল কাজের জন্য। এভাবেই কাজ খুঁজতে হয়েছে। সিরিয়াল করতে করতে যখন খবর পেতাম কোনও ছবির জন্য অডিশন নেওয়া হচ্ছে, তখন সেখানে গিয়ে অডিশন দিতাম ছবি জমা দিতাম। সেভাবেই 'প্রেম জোয়ারে' ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলাম।

প্র: আপনি কি শুরু থেকেই চেয়েছিলেন অভিনেতা বা পরিচালক হবেন?

রাণা মিত্র: আমাদের ছোটবেলায় কোচিংয়ে পড়াশোনা হত। সেরকমই একটা কোচিংয়ে আমি পড়তাম। প্রতিবছর সরস্বতী পুজোর সময় সেখানে একটা ক্যালচারাল প্রোগ্রাম করা হতো। গান, বাজনা, নাটক সব কিছুই হতো সেখানে। একবার নাটক করবার আগে স্যার আমাকে বললেন, ‘আমরা নাটক করছি। তুই এবার নাটক করবি’। স্যারের কথা মতো 'রাইজিং অফ মুন' নামক একটা নাটকে অভিনয় করতে হয়েছিল আমাকে। প্রায় পা কাঁপতে কাঁপতে আমি নাটকটা করেছিলাম। আমাদের যারা সিনিয়র তারাও নাটকটা দেখতে এসেছিলেন। তারা বলেছিলেন, নাটকটাতে আমার অভিনয় বেশ ভাল হয়েছিলেন। তারপর পাড়াতে নাটক করতাম। এরপর নিজের শখেই গ্ৰুপ থিয়েটার জয়েন করেছিলাম আমি। পাড়ায় নাটক করতে গিয়েই কল্পনাদি'র সঙ্গে পরিচয় হয় আমার। তিনি আমাকে একটা বড় থিয়েটার গ্ৰুপে অভিনয় করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে আবার অন্য একটা থিয়েটার দলে অভিনয় করার সুযোগ পাই। তারপর আমি নিজেও একটা থিয়েটার দল তৈরি করেছিলাম। তার সঙ্গে সঙ্গে ছবি ও সিরিয়ালে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলাম।

প্র: সিরিয়ালে রাণাদা মানে নেগেটিভ চরিত্র। রিল লাইফের এই নেগিটিভ চরিত্রগুলোর থেকে আপনার রিয়েল লাইফের ডিফারেন্স কতটা?

রাণা মিত্র: প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই কিন্তু ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট শেড রয়েছে। এটাতে কারুর দোষ নেই। আসলে সিরিয়াল তো অনেক কম সময়ের মধ্যে শ্যুট হয়। তাই এত কম সময়ের মধ্যে ভাবা যায় না যে আমাকে কোন চরিত্রটাতে করলে কেমন লাগবে। আর দর্শক যেহেতু আমাকে এই চরিত্রে অ্যাকসেপ্ট করেছেন তাই এটাই বার বার করতে বলা হয়।

প্র: কোনও দিন কি রাস্তায় আপনাকে এই নেগিটিভ চরিত্রে অভিনয় করার জন্য কথা শুনতে হয়েছে?

রাণা মিত্র: আমার দেখা হলেই সকলে জানতে চায়, আপনি এমন খারাপ খারাপ চরিত্র করেন কেন? আমি বলি, আমি করি না আমাকে দিয়ে করায়। তারপর তারা বলেন যে আমার অভিনয়টা তাদের সত্যিই খুব ভাল লাগে। এর বেশি আর কিছু পাওয়ার থাকে না আমাদের। আমার কাছে এটার সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমার মনে হয় একটা পজেটিভ ক্যারেক্টার তখনই পজেটিভ হয় যখন যখন নেগিটিভ ক্যারেক্টার থাকে।

প্র: আপনি এখন অ্যাক্টিংয়ের পাশাপাশি পরিচালনাও করছেন। আপনার কী মনে হয় কোনটা বেশি কঠিন অভিনয় করা নাকি পরিচালনা করা?

রাণা মিত্র: আমার মতে দুটোই সমান ভাবে কঠিন। প্রকৃত অর্থে অ্যাক্টিং করতে হলে একজন অ্যাক্টরের যা প্রিপারেশন নিতে হয়, সেটা যথেষ্ঠ যথেষ্ঠ কঠিন। আর ডিরেক্টরের কাজটাও কঠিন। তুল্য মূল্য বিচারে যাবো না কিন্তু ডিরেক্টরের দায়িত্ব বেশি থাকে। কারণ তাকে সকলকে নিয়ে কাজ করতে হয়। তবে ডিরেক্টর সব সময় চান একজন সুঅভিনেতার সঙ্গে কাজ করতে। সুঅভিনেতা বলতে এখানে জনপ্রিয় অভিনেতার বলছি না, এমন অভিনেতার কথা বলছি যে অভিনয়টা নিয়ে ভাবে। কীভাবে কাজটা করতে হবে? কেন করতে হবে? কিসের জন্য করতে হবে? এই ব্যাখাটা যদি থাকে অভিনেতার জানা থাকে তাহলে সেই রকম একজন অভিনেতার সঙ্গে কাজ করতে ভাল লাগবে পরিচালকের।

প্র: আপনাকে গত বছরে অনেক ধারাবাহিকে দেখা গিয়েছিল। আর কী কী নতুন প্রজেক্ট উপহার দিতে চলেছেন আপনি?

রাণা মিত্র: বেশ কিছু ছবিতে কাজ করার কথা রয়েছে। আর সবে একটা সিরিয়ালে কাজ শুরু করেছি। যার নাম 'গাঁটছড়া'। আরও কিছু সিরিয়ালে কাজ করার কথা চলছে। এছাড়াও অন্য ধরনের কিছু কাজ কর্ম করার কথা ভাবছি। দেখা যাক কী হয়। বোধহয় খারাপ কিছু হবে না, ভালই হবে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...