‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ সিরিজে ‘লছমী’কে দেখে চিনতে পারেননি। নিজেই চমকে গিয়েছিলেন নিজেকে দেখে! সেন্ট জেভিভার্স কলেজের সোশিওলজির ছাত্রী কীভাবে হয়ে উঠলেন আজ টেলিভিশন দুনিয়ার জনপ্রিয় তারকা, সেই কাহিনি শুনুন অভিনেত্রী স্নেহা চট্টোপাধ্যায়ের নিজের মুখে
প্রঃ তোমার টলিউডে কত বছর হল?
স্নেহা চট্টোপাধ্যায়ঃ ১৫ বছর অভিনয়ে। তার আগে যদি খবর পড়া ধরি তাহলে ১৬-১৭ বছর হবে।
প্রঃ প্রথম কাজ কী?
স্নেহা চট্টোপাধ্যায়ঃ ‘এখানে আকাশ নীল’। ওই সিরিয়ালে আমার বন্ধু প্রিয়া একটা ক্যারেক্টার করত ‘মঞ্জুরী’। ওর পায়ে চোট লাগায় ও কাজটা ছেড়ে দেয়। সেই জায়গায় আমি ক্যারেক্টারটা করা শুরু করি। সেই শুরু, তারপর সুবর্ণলতা।
প্রঃ ১৫ বছর পর পিছনে তাকিয়ে কী মনে হয়? জার্নিটা কেমন ছিল?
স্নেহা চট্টোপাধ্যায়ঃ ইট ওয়াজ ওয়ান্ডারফুল। অনেক অনেক কিছু বলে টলিউড নিয়ে। কিন্তু আমি বলব আমার জার্নিটা সম্ভব হয়েছে টলিউডের মানুষদের জন্যই। আমার এখানে চেনা পরিচিত কেউ ছিল না। আমি শুধু জানতাম আমায় পারফর্ম করতে হবে। পারফর্ম্যান্সের মার নেই কখনও-এটা জানতাম। যে সমস্ত প্রোডিউসার ডিরেক্টরদের সঙ্গে কাজ করেছি তাঁরাই আমায় এগিয়ে দিয়েছে।
প্রঃ তোমার অভিনীত নেগেটিভ চরিত্ররা কেউ একরকম নয়, বিভিন্ন শেডের, গ্রে ক্যারেক্টারও আছে। নেগেটিভ আর গ্রে ক্যারেক্টারের থেকে কি পজেটিভ কোনও চরিত্র করতে ভাল লাগে?
স্নেহা চট্টোপাধ্যায়ঃ আমার সব রকম চরিত্র করতে ভাল লাগে। টেলিভিশনে যেটা হয়, তুমি একটা কোনও চরিত্র করে যদি পপুলার হয়ে যাও তাহলে সেই ধরনেরই অফার আসতে থাকে। আমারও তাই হয়েছিল। প্রথম ১০ বছর আমার কাছে কোনও চয়েস ছিল না, যেরকমভাবে চরিত্র এসেছে সেভাবেই করেছি। কিন্তু সচেত্ন সিদ্ধান্ত ছিল যে নেগেটিভ চরিত্র হলেও যেন সেগুলো আলাদা আলাদা ধরনের হয়। ‘সুবর্ণলতা’র থেকে ‘জল নূপুর’, ‘নকশি কাঁথা’ আলাদা। আর দ্বিতীয়ত নেগেটিভ চরিত্রকে যেভাবে কোট আনকোট ট্যাগ করা হয় আমি সেভাবে না করার চেষ্টা করি।
প্রঃ এখনও পর্যন্ত ফ্যানদের থেকে কীরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে?
স্নেহা চট্টোপাধ্যায়ঃ এখন দর্শকরা বুদ্ধিমান। তাঁরা জানেন ‘এটা অভিনয়’। আর নন ফিকশন শো করার জন্য ‘স্নেহা’ হিসেবে পরিচিতি ছিলই। শুধু একবার সাউথ সিটিতে এক ভদ্রমহিলা এসে বলেছিলেন ‘জুতো দিয়ে মারতে ইচ্ছে করে’। আমি বলেছিলেন ‘নো প্রবলেম, মারতেই পারেন’। এরকম কিমি.প্লিমেন্ট পেয়েছি। তবে পর পর নেগেটিভ করতে করতে মনে হল একটা অন্য কিছু ট্রাই করি। তারপর বিকেলে ভোরের ফুল’ ‘কুসুম দোলা’ হল।
প্রঃ তুমি সিরিয়াল-সিনেমা-সিরিজ তিন প্ল্যাটফর্মেই কাজ করেছ, ১-২-৩ ক রে সাজাতে বললে কোন তিনটে পরপর সাজাবে?
স্নেহা চট্টোপাধ্যায়ঃ আমি ১-২-৩ সাজাই না কারণ তিনটের ফরম্যাট অনেক আলাদা। সিরিয়াল সব সময় আমার কাছে স্পেশ্যাল। আমায় লোকে চেনে টেলিভিশনের জন্য। ছবি-সিরিজের কাজ করেছি টেলিভিশনে কাজ করার জন্যই। সিনেমা, থিয়েটার , সিরিজ নিয়ে অভিনেত্রী হিসেবে সব ময় মনে হবেই আলাদা আলাদ প্ল্যাটফর্মে কাজ করি। সিনেমায় সুযোগ খুব পেয়েছি। যেটুকু কাজ করেছি আমার শেখা হয়েছে যে অভিনয়ের মাপ পালটে যায়। সিরিজেও এক। আমি ভাবতেই পারিনি ‘ইন্দুবালা’য় এরকম হবে! এট ভাল সাড়া পেয়েছি যে আমি মাঝে মাঝে ভাবতেই পারছি না ‘ এটা কি আমার সঙ্গে হচ্ছে’! আমি ভাবতেই পারিনি ‘লছমী’ চরিত্রের জন্য মাআয় বলা হবে। আমি প্রচন্ড খুশি। মোর দ্যান হ্যাপি!
প্রঃ কেমন ছিল শ্যুটিং-এর অভিজ্ঞতা?
স্নেহা চট্টোপাধ্যায়ঃ অসাধারণ! এক তো হল দেবালয় ভীষণ ইম্প্রোভাইজ করে কাজ করে, সেটা আমার খুব ভাল লেগেছে। মার্ভেলাস টিম! আর থার্ড ইম্পর্ট্যান্ট শুভশ্রী। দুরন্ত অভিনেত্রী! অভিনয়ের মাপ ওর কাছ থেকে ফ্রেম টু ফ্রেম শেখার মতো!
প্রঃ তোমার পছন্দের চরিত্র কোনটা, যেটা তুমি প্লে করেছ এর মধ্যে?
স্নেহা চট্টোপাধ্যায়ঃ আমার অনেক পছন্দের চরিত্র আছে। ‘সুবর্ণলতা’। ‘জলনূপুর’র ‘ভূমি’। ‘বিকেলে ভোরের ফুল’র ‘ভালদিদি’। থিয়েটারে ‘রাই’ বলে একটা ক্যারেক্টার করি। পিএস ভালোবাসা বলে আমাদের দল ফোর্থবেল থিয়েটারে একটা নাটক হয়। ‘ইন্দুবালা’ তো কুবই ভাল। ‘বিসমিল্লা’য় চরিত্রটা দারুণ লেগেছিল। বাঙাল ভাসা আমি বলতে পারি, কিন্তু সেটা কোনওদিন কোনও কাজে ব্যবহার করতে পারব সুযোগ খুঁজছিলাম।
প্রঃ এরকম কোনও চরিত্র আছে যেটা অন্য কেউ আগে করেছে কিন্তু তোমার করার ইচ্ছে
স্নেহা চট্টোপাধ্যায়ঃ এরকম অনেক আছে, সেগুলো আমি বলতেই চাই না (হাসি)
প্রঃ শুনেছি তোমার এক্টা দারুণ মজার প্রেমের কাহিনি আছে…
স্নেহা চট্টোপাধ্যায়ঃ আমার বর গিটার শেখাতে এসেছিল। আমি গিটার টিচার খুঁজছিলাম। আমার এক বন্ধু আমায় বলল ‘ ওকে চিনি, তুই শিখবি কিনা’ আমি ব্লেছিলাম শিখব কিন্তু বকাঝকা না করলেই হল। বকাঝকা করা টিচার একেবারে পছন্দ করি না। গিটার টিচার গিটার যেদিন শেখাতে এলো বিকেলবেলায় প্রপোজ করল। আজও গিটারের একটা কর্ডও বাজাতে পারি না আমি। আমাদের বিয়ে প্রেম মিলিয়ে ১৭-১৮ বছর হয়েও গেল।
প্রঃ আমাদের দর্শকদের কী বলবে?
স্নেহা চট্টোপাধ্যায়ঃ আগামী দিনে যাই কাজ করি না কেন আমায় প্লিজ সাপোর্ট করবেন। সাপোর্টের মানে এই নয় যে আমার খারাপটা বলতে পারবেন না। সোশ্যাল মিডিয়ায় সবাইকে পাওয়া যায়। আমি ফলোও করি। আজ যা কিছু হতে পেরেছি সেটা দর্শকদের জন্য। ভাল-খারাপ সবটাই জানাবেন। ‘লছমী’কে এত ভালবাসা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ!