হিন্দি সিনেমা ও বাংলা সিনেমা জগতের পরিচিত মুখ সুব্রত দত্ত। 'ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা'তে অভিনয় ও নাটক নিয়ে পড়াশুনা শেষ করার পর 'কারভা' ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ আসে। তারপর 'তেভর','তালাশ', 'দ্য সকিন্স', 'মঙ্গল পান্ডে'র মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। হিন্দি ছাড়াও বাংলা ছবি 'উত্তরা', বৃষ্টি তোমাকে দিলাম', 'দোতারা', 'হর হর ব্যোমকেশ'-এর মতো ছবিতে তাকে দেখা গিয়েছে। সম্প্রতি জিয়ো বাংলার 'আড্ডা উইথ অপ্সরা' অনুষ্ঠানে নিজের সিনেমা আর জীবনের কথা জানালেন সুব্রত দত্ত।
প্র: 'ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা' থেকে মাস্টার্স কমপ্লিট করে আজ তুমি বলিউডে সিনেমা করছ। এই জার্নিটা তুমি কীভাবে ডেসক্রাইব করবে?
সুব্রত : আমি বাঁকুড়ায় থাকতাম। তখন আমি জানতাম যে অভিনয় শেখা যায়। আমার ধারণা ছিল যাদের দেখতে সুন্দর তারাই অভিনয় করার সুযোগ পান। তারপর বহরমপুর ওয়ার্কশপে গিয়ে বুঝতে পেরেছিলাম যে 'ইটস আ ক্রাফট'। তার যখন নাটক করা শুরু করলাম তখন একদিনে তিনটে আলাদা আলাদা নাটকের শো করতে হত আমাকে। এখন জানিনা করতে পারব কি না? কারণ থিয়েটার করা এখন প্রায় ছেড়েই দিয়েছি। তবে 'ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা'তে অভিনয় শিখেছিলাম বলেই আমি হিন্দি ছবিতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। 'ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা'তে আমি প্রফেশনাল অ্যাক্টার হিসেবে কাজ করতাম। যার জন্যে মাসে আট হাজার টাকা করে বেতন পেতাম। এছাড়াও শো করার জন্যেও টাকা পেতাম। আমার একটা নাটকের শো দেখেই পঙ্কজ বুতালিয়া 'কারভা' ছবিতে অভিনয় করতে বলেছিলেন।
প্র: 'কারভা'র পরেই তোমার প্রথম বাংলা ছবি 'উত্তরা' মুক্তি পেয়েছিল। এই নিয়ে কী বলবে তুমি?
সুব্রত: আসলে 'কারভা' ছবিটি আগে মুক্তি পেয়েছিল। কিন্তু 'উত্তরা'র শুটিং শেষ হয়েছিল 'কারভা'র আগেই। বিষয়ে হচ্ছে আমরা যখন ছবি করি তখন ভাবি না যে সেটা কমার্শিয়াল ছবি, বাংলা ছবি, হিন্দি ছবি এসব কিছু ভাবি না। শুধু ভাবি যে একটা রোল করছি এবং কত ভাল ভাবে চরিত্রটির চিত্রায়ন করতে পারব সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
প্র: তুমি বাঁকুড়ার ছেলে যে জুলজি নিয়ে ব্যাচেলার ডিগ্ৰির কোর্স করছিলে, সেখান থেকে 'ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা'তে এলে কীভাবে?
সুব্রত: আসলে বাঙালিদের স্বপ্ন থাকে ছেলেকে ডাক্তার হোক। সেই মতো আমিও ভেবেছিলাম ডাক্তার হব। কিন্তু আমি কী করব সেই নিয়ে একটা কনফিউশন তৈরি হয়েছিল। সেই সময় রবীন্দ্র নৃত্য শিখেছিলাম আমি। এমনকি রবীন্দ্র নৃত্যের প্রোগ্ৰাম করেছিলাম। তারপর একটা নাটকের ওয়ার্কশপ করেছিলাম আমি। সেখানে থেকেই শুরু হল আমার নতুন জীবন।
প্র: এটা কী সত্যি যে তুমি প্রথমে পরিচালক হতে চেয়েছিলে?
সুব্রত: আমি ভেবেছিলাম যে আমার মতো দেখতে একটা লোক কী করে... তাই থিয়েটার পরিচালনা করার কথা ভেবে ছিলাম। কিন্তু আমার শিক্ষকরা বলেছিল আমাকে অভিনেতা হতে।
প্র: তোমার 'তেভর','তালাশ', 'দ্য সকিন্স', 'মঙ্গল পান্ডে' মতো ছবিতে তোমার যে কো-অ্যাকটাররা ছিলেন তাঁদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
সুব্রত: এই ছবিগুলি ভাল চলেছিল। কিন্তু আমার স্বপ্নের চরিত্র এখনও পাইনি আমি। যেমন আমার বন্ধু নওয়াজউদ্দীন সিদ্দিকী ও পঙ্কজ ত্রিপাঠী 'গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর' ছবিতে একটি চরিত্র করেছে। আমি ছাড়াও অনেক ট্যালেন্টেড অভিনেতা রয়েছেন যার এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে চান।
প্র: পুরো লকডাউনে তুমি সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভ ছিলে, এছাড়াও ওয়ার্কআউট নিয়েও তুমি অনেক আপডেট দিয়েছিলে। তুমি সকলকে মোটিভেট করতেই এই কাজ করেছিলে?
সুব্রত: আমি ভাবিনি যে এতো বড় একটা লকডাউন হবে। তখন এক দেড় মাস পর আমি দেখছিলাম যে আমার মধ্যে একটা লেথার্জি চলে আসছে। তাই ফেসবুক লাইভে আমি যোগা শেখাতে শুরু করেছিলাম। তখন আমি দেখছিলাম পঙ্কজ ত্রিপাঠী, কমল সালানা, পিযুষ মিশ্র ছাড়াও আমার অনেক বন্ধুই আমার সেই লাইভ দেখতেন। আমার ফিট থাকার জন্য যা দরকার তাই দেখাতাম লাইভে। তবে শুটিংয়ের চাপে এত কিছু করা হয়ে ওঠে না।
প্র: তুমি খাবার রান্না করতে ভালোবাসো। কিন্তু বাইরে গিয়ে কোন ক্যুইজিন খেতে ভালোবাসো?
সুব্রত: আমি থাই ফুড খেতে খুব ভালোবাসি। মালবারী ফুডের যে প্রিপারেশন আছে সেটাও আমার খুব পছন্দের। তবে আমি নরম্যালি ঘরের খাবারই খাই।
প্র: তুমি খাওয়াতে কতটা ভালোবাসো?
সুব্রত: নাটক যখন পরিচালনা করি সব আর্টিস্টদের আমিই রান্না করে খাওয়াই।
প্র: তুমি কী করে অ্যাকটিং, ওয়ার্কশপ ও রান্নার কাজ করো?
সুব্রত: না এখন আমি এখন সব ছবিতে অভিনয় করি না। খুব বেছে বেছে কাজ করছি। কারণ ছোট চরিত্রে টাকা বেশি পেলেও পর্দায় ১০ মিনিটের বেশি তোমাকে দেখতে পাওয়া যাবে না। আমার যে ছবিগুলি এখন কমপ্লিট হয়েছে সেই প্রত্যেকটিতেই আমাকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে।
প্র: তুমি বাঁকুড়ার ছেলে হয়ে হিন্দি বলতে কীভাবে শিখলে?
সুব্রত: আমি 'ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা'তে গিয়ে হিন্দি শিখেছিলাম। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমি ৯০% আয়ত্ত করতে পেরেছি। তবে কেউ যদি হিন্দি শিখতে চায় তাহলে সে উর্দু শায়েরি শুনতে পারে। তাহলে হিন্দিটা খুব সহজেই শিখে নেওয়া যাবে। একজন অভিনেতা হিসেবে নিজেকে সব সময় আপডেট করতে হবে। না হলে দর্শক বোর হয়ে যায়।
প্র: তুমি এখন এতো বড় স্টার তাও তোমার কোনও ম্যানেজার নেই কেন?
সুব্রত: না ম্যানেজার ছিল। কিন্তু আমি দেখলাম তারা যে সব ছবির আমার জন্য নিয়ে আসছে তাতে অভিনয় করে আমার কিছু লাভ হচ্ছিল না।
প্র: বলিউডে তোমার ক্রাশ কে?
সুব্রত: টাব্বুর অভিনয় খুব ভাল লাগে। কম বয়সে মাধুরী দীক্ষিতকেও ভাল লাগত। আর ছোটবেলায় রেখাজী।
প্র: কোন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে তোমার বেস্ট লেগেছে?
সুব্রত: আমার রামগোপাল ভার্মাকেই বেশি পছন্দ। কারণ প্রায় সব ধরনের ছবিই করেছেন উনি। তাছাড়াও ওঁর বোঝানোর যে ভঙ্গি তা সম্পূর্ণ আলাদা। যে কোনও লোককেই স্টার বানাতে পারেন।
প্র: এমন কোনও বলিউড অভিনেতা রয়েছে যাকে দেখে তুমি সত্যিই মেসমেরাইজ হয়ে গিয়েছ?
সুব্রত: আমির খানকে আমার খুব ভাল লাগে। কারণ আমির খান যখন ছবি করেন তখন নিজের চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার জন্য খুব পরিশ্রম করেন। তবে অভিনেতা হিসেবে আমার প্রিয় ইরফান খান।
প্র: সেটে সবচেয়ে বেশি ট্যানট্রামস কে দেখান?
সুব্রত: রানী মুখার্জী। রানী মুখার্জী যদি রেগে যান তাহলে তাকে শান্ত করা খুব মুশকিলের। তবে বিনা কারণে রেগে যান না।
প্র: সবচেয়ে পাংচুয়াল কে?
সুব্রত: বোম্বেতে সলমন খান ছাড়া সকলেই পাংচুয়াল।
প্র: সবচেয়ে আন্ডার রেটেড অ্যাকটার আর ওভার রেটেড অ্যাকটার কে?
সুব্রত: আন্ডার রেটেড আমি। ওভার রেটেড অনেকেই আছেন।
প্র: তোমার পুরো জার্নিতে তোমার ফ্যামিলি রিয়্যাকশানটা কেমন ছিল?
সুব্রত: ফ্যামিলি রিয়্যাকশান খুব ভাল। আমার মেয়ে আমার অ্যাকটিং খুব পছন্দ করে। আমার ভাইরাও এখন অভিনয় করছে। তবে আমার সিনিয়র যারা এখনও নাটক করছেন তাদের যতটা সম্ভব সাহায্য করি। বাঁকুড়ার মানুষও আমাকে খুব ভালোবাসেন।