চাকরি ছেড়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে অভিনয় জগতে পা রেখেছিলেন তিনি। তপন সিনহার পরিচালনায় প্রথম ছবি। তবে শুধু বাংলা নয় হিন্দি ছবি 'কামিনে', 'বব বিশ্বাস', 'মেরি প্যারি বিন্দু'র মতো জনপ্রিয় ছবিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। জিয়ো বাংলার পর্দায় অপ্সরার সঙ্গে আড্ডায় নিজের জার্নির গল্প বললেন অভিনেতা রজতাভ দত্ত।
প্র: আপনার থিয়েটার থেকে সিনেমা জগতে প্রবেশ করার জার্নিটা কেমন ছিল?
রজতাভ: আমি যখন থিয়েটার শুরু করি তখন কখনও ভাবিনি যে পেশাদার অভিনেতা হবো। ১৯৯০-৯২ সাল পর্যন্ত একটা চাকরি করতাম। থিয়েটার কাজ করতে গিয়েই সিনেমায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। তপন সিনহা একবার আমার এক থিয়েটারের শো দেখতে এসেছিলেন। সেই শো দেখেই আমাকে 'উইল চেয়ার' ছবিতে কাজ করার সুযোগ দিয়েছিলেন তিনি। তারপর ১৯৯৫ সালে তিনি আমাকে ছোটদের একটি ছবিতে কাজ করতে বলেন। এই ছবি ছিল আমার জীবনের প্রথম বড় ছবি।
প্র: চাকরি ছেড়ে অভিনয় জগতে প্রবেশ করার সময় আপনার পরিবারের কেউ কী আপত্তি জানিয়ে ছিল?
রজতাভ: আমার বাবা মারা যান যখন, তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। এছাড়াও দাদা বাইরে চাকরি করতেন। আমার মা যে আমার সব নাটকের শো দেখেছেন এমন নয়। কিন্তু আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। সেই সময় মায়ের সাপোর্টটা না থাকলে আজ হয়তো এত কিছু করা সম্ভব হত না।
প্র: এখন পিছনে ফিরে তাকালে কী মনে পড়ে?
রজতাভ: আমার অভিনয়ের পেশাকে স্পেশ্যাল মনে হয় না। আমি এই কাজকে আর পাঁচটি কাজের মতোই মনে করি। আমি যদি কোনও একটা অফিসে কাজ করতাম তাহলে এতদিনে আমার রিটায়ারমেন্ট হয়ে যেত। এখানে শুধু এই রিটায়ারমেন্টটা নেই। এটাই তফাৎ।
প্র: আপনি মুম্বইতে অনেকগুলি কাজ করেছেন। সেখানে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
রজতাভ: হিন্দি ও ইংরেজি এই দুই ভাষায় আমি কাঁচা। তাই হয়তো আমার অভিনীত সবকটি চরিত্র বাঙালি। তবে অনেক বড় বড় পরিচালক ও প্রোডাকশান হাউসের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু হিন্দির ক্ষেত্রে সত্যিই আমার অসুবিধা হয়। এখনও নেটফ্লিক্সে দুটি প্রজেক্ট আসতে চলেছে আমার।
প্র: এখানে কাজ করা আর মুম্বইতে কাজ করার মধ্যে ফারাক কী রয়েছে?
রজতাভ: খুব একটা ফারাক নেই। কিন্তু বাংলায় খুব কম বাজেটের মধ্যে যে কাজ করার পদ্ধতি রয়েছে তা দেখে অবাক হয়েছেন বিদেশিরাও।
প্র: এখনও পর্যন্ত কতগুলো ছবিতে কাজ করেছেন আপনি?
রজতাভ: প্রায় ১৮৫ ছবিতে অভিনয় করেছি। এছাড়াও বহু টেলিফিল্মে কাজ করেছি। আমি যে সব ছবিতে অভিনয় করেছি তার ৬০ শতাংশ ছবিই বাণিজ্যিক ছবি। আর বাকিগুলো কনটেন্ট নির্ভর ছবি। তবে কমিক চরিত্রগুলি নিয়ে আমি একটু বেশি দুর্বল।
প্র: আপনাকে একটি কমেডি রিয়ালিটি শোতেও বিচারকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। ঐ শো নিয়ে আপনার কী অভিজ্ঞতা?
রজতাভ: দশ বছর ধরে এই রিয়েলিটি শো আমাকে একটা পরিচিতি দিয়েছে। তার থেকেও বড় কথা, যেহেতু দশ বছর ধরে চলেছে এই কারণেই আমাকে আরও ভালো করে চিনেছিলেন দর্শকরা।
প্র: অভিনেতা সুব্রত দত্তের প্রশ্ন- “রনিদা তুমি কীভাবে সিনেমায় অভিনয় করেও থিয়েটারে অভিনয় করার জন্য সময় বার করো?”
রজতাভ: সময় ভাগ করে নিলেই থিয়েটার ও সিনেমায় অভিনয় করা যায়। আসলে থিয়েটার হোক সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ-পুরোটাই অভিনয়। তাই কোনও সমস্যা হয় না। এখন আমরা থিয়েটার করে অর্থ উপার্জন করতে পারছি। কিন্তু এক সময় আমাদের নিজেদের টাকা খরচ করে আমরা থিয়েটার করেছি। এই জার্নিটাই আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। আমার জীবনের প্রত্যেকটা টার্নিং পয়েন্টের সঙ্গে থিয়েটার জড়িয়ে রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার আগে আমি পাঁচটি নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। সুব্রতকে এই প্রশ্নটি করার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
প্র: আপনি খাদ্যরসিক একজন মানুষ। আপনার পছন্দের ক্যুইজিন কী?
রজতাভ: কলাইয়ের ডাল, আলু, পেঁয়াজ, পোস্তো হোক বা চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল সুস্বাদু হলেই সেটা আমার পছন্দের হবে।
প্র: বিরিয়ানি কোনটা প্রিয় চিকেন না মটন?
রজতাভ: উৎপল দত্ত বলতেন, “চিকেন খাও কী করে ওর নিজের শরীরেই কিছু নেই”। মটন বিরিয়ানিই বেশি পছন্দ আমার।
প্র: নিজের ফ্রী টাইম কীভাবে কাটাও তুমি?
রজতাভ: ফ্রী টাইম সেভাবে পাই না। তবে ফ্রী থাকলে ওটিটিতে অজস্র কনটেন্ট তা দেখে শেষ করা যায় না। এছাড়াও গান শুনি, বই পড়ি, পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে যাই।
প্র: নেক্সট আপনাকে বড় পর্দায় কবে দেখা যাবে?
রজতাভ: আমার প্রায় সাত, আটটা ছবি কমপ্লিট হয়ে আছে। কিন্তু কবে রিলিজ কবে সেটা প্রোডিউসার ও পরিচালকরা বলতে পারবে।