ঘরে-বাইরে জয়া

অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করেছেন বলিউড, টলিউড ও দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। তবে অভিনয় জীবন শুরু হওয়ার আগে তিনি ছোটবেলার সময়টা কাটিয়েছেন গুয়াহাটিতে। ভারতনাট্যম পাশাপাশি শিখেছেন অভিনয়। তাঁকে অভিনেত্রী হিসেবে প্রথম পরিচিতি এনে দিয়েছিল 'কাহানি ঘর ঘর কি' সিরিয়াল। জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর নাম জয়া শীল ঘোষ। সম্প্রতি জিয়ো বাংলার অনুষ্ঠান 'আড্ডা উইথ অপ্সরা'য় এসে নিজের জীবনের গল্প বললেন অভিনেত্রী।

প্র: তোমার ছোটবেলার সময়টা আসামে কেটেছে। কেমন ছিল তোমার ছোটবেলার সময়টা?
জয়া: ছোটবেলার সময়টা সবার কাছেই স্পেশ্যাল। গুয়াহাটি শহর আমার কাছে সব সময় প্রিয়। ওখানকার মানুষদের আমি খুব ভালোবাসি। ছোটবেলা থেকেই আমার মা-বাবা আমাকে সব কাজের ক্ষেত্রেই সাপোর্ট করেছে। আমার বাবা ছিলেন ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটর আর মা হাউস ওয়াইফ। গুয়াহাটিতে থাকাকালীন আমি 'বিহু' শিখেছিলাম। আমি একমাত্র মেয়ে যে বেস্ট 'বিহু' ড্যান্সারের অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। বাবা খুব খুশি হয়েছিলেন। 'বিহু' ছাড়াও 'ভারতনাট্যম'। অভিনয় শিখেছিলাম গুয়াহাটি থেকেই।

প্র: নাচ আর অভিনয়ের মধ্যে তুমি ব্যালেন্স করো কীভাবে?
জয়া: এটা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব না। তবে আমার যতটা কাজ করার ছিল আমি সেটা করতে পারিনি। কারণ সেই সময়টা আমি আমার ফ্যামিলিকে দিয়েছি। আমার মা শিখিয়েছেন ফ্যামিলি ইম্পর্টেন্ট। কিন্তু আমি রিগ্ৰেট করি না কারণ আমি মনে করি সব কিছুর একটা সময় থাকে। তবে নাচ নিয়ে অনেকটা সময় দিয়েছি আমি। অন্যদিকে ছবিতে অভিনয় করেছি খুব কমই। খুব বেছে বেছে কাজ করেছি আমি। এখন আমি নিজেই শর্ট ফিল্ম প্রযোজনা করছি। আমার প্রোডাকশন হাউজের নাম ‘জয়া শীল ঘোষ প্রোডাকশন’।

প্র: 'কাহানি ঘর ঘর কি'তে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল তোমার?
জয়া: হঠাৎ করেই এই সিরিয়ালে কাজ করার সুযোগ এসেছিল আমার কাছে। তবে এটা ঠিক যে 'কাহানি ঘর ঘর কি' করার পরেই দর্শক আমাকে চিনেছিলেন। কিন্তু সিরিয়ালের শুটিং করার সময় আমার হিন্দি অ্যাকসেন্ট নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। তাই প্রথম এপিসোড ডাব করাতে হয়েছিল। তারপর অবশ্য আর ডাব করাতে হয়েনি। কিন্তু সিরিয়ালে অভিনয় করাটা খুবই কঠিন কাজ। তাই একজন অভিনেত্রী হিসেবে আমি স্যাটিসফাই হতে পারিনি।

প্র: তুমি বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে, বলিউডে ও তেলেগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক কাজ করেছ। তিন জায়গায় কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
জয়া: তিন জায়গায় কাজ করার অভিজ্ঞতাই আলাদা ছিল। কিন্তু আমার মনে হয়েছে সাউথ ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি হল সবচেয়ে প্রফেশনাল। ওরা আর্টিস্টদের সম্মান দেন। সেই সময় সাউথের জনপ্রিয় নায়ক বিক্রম, প্রভুদেবা ও শিবরাজ কুমারের সঙ্গে কাজ করেছিলাম আমি। এখনও সাউথে গেলে আমাকে চিনতে পারেন ওখানের মানুষ। অন্যদিকে বলিউডের ‘এক্সকিউজ মি’ ছবিতে কাজ করেছিলাম আমি। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ‘উত্তরা’ ছবি দিয়ে আমার পথ চলা শুরু হয়েছিল। সেই ছবির জন্যে অনেক অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছিলাম। আমার মনে হয়ে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে বহু থটফুল মানুষ রয়েছেন। অনেক ধরনের কাজেই বাঙালিরা এগিয়ে। অসমীয়া ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও আমি কাজ করেছি।

প্র: বিক্রমদার সঙ্গে আলাপ হল কীভাবে? কীভাবে প্রেমে পড়লে তোমরা?
জয়া: আমাদের দেখা হয়েছিল একটা শর্ট ফিল্মের শুটিং সেটে। অন্য টিপিক্যাল বাঙালি ছেলেদের মতো নয় বিক্রম। যেটা আমার খুবই ভালো লেগেছিল। প্রথমে বিক্রমের একটা গান শুনে আমার ওর উপর ইন্টারেস্ট এসেছিল। তাছাড়াও একটা মিউজিক্যাল শোতে ওকে পারফর্ম করতে দেখেছিলাম আমি। সেখানে ওর ব্যবহার আমার খুব ভালো লেগেছিল। তারপর ঠিক এক মাস পরেই আমাকে প্রপোজ করেছিল আমাকে। আমি ‘হ্যাঁ’ বলেছিলাম। তারপর ছয় মাস পরেই আমাদের বিয়ে হয়। এখন আমাদের দুটি সন্তান রয়েছে।

প্র: তুমি তোমার কাজ ও ওয়ার্কের মধ্যে ব্যালেন্স কিভাবে করো?
জয়া: আমি আমার কাজ ও পরিবার দুটোকেই ভালোবাসি। তাই হয়তো দু জায়গাতেই ব্যালেন্স করতে পারছি। কিছু প্রজেক্ট আমি করতে পারিনি পরিবারকে সময় দিতে গিয়ে। কিন্তু পরিবারকে সময় দিতেই হবে। কারণ তোমার শেষ বয়সে পরিবারই তোমার সঙ্গে থাকবে।

প্র: তুমি রেসেন্টলি নিজের প্রোডাকশন হাউস শুরু করেছ। তাহলে এবার তুমি কীভাবে এগিয়ে যেতে চাও? ফিউচার প্ল্যান কী?
জয়া: ভাল গল্প নিয়েই আমি কাজ করতে চাই। নতুনদের সুযোগ দিতে চাই। তবে আমি চাই প্রযোজকরা এগিয়ে আসুক আমাদের এই কাজে সাহায্য করার জন্যে। আমরা ভাল কাজ করতে চাই।

প্র: এখনকার জেনারেশন খুব তাড়াতাড়ি ফেম পেতে চায়।তাদের তুমি কী বলবে?
জয়া: এভাবে শর্টকাটে সব ফেম পাওয়া যায় না। তুমি যদি তোমার কেরিয়ারে অনেক বেশি সময় পর্যন্ত ধরে রাখতে চাও তাহলে তোমার ক্র্যাফট সম্পর্কে জানতে হবে। তোমার ক্র্যাফটকে রেসপেক্ট করতে হবে। আমার মনে হয় একটা ছবি হিট হওয়াই সব কিছু নয়। তারপর কী হবে সেটাও ভাবতে হবে। তার জন্যে তোমাকে নিজের ক্র্যাফট সম্পর্কে পড়াশোনা করতে হবে। বিশেষ করে যারা সিনেমায় অভিনয় করতে চাও তাদের অবশ্যই থিয়েটার করতে হবে।

এবার র‌্যাপিড ফায়ার রাউন্ডে অভিনেত্রী জয়া শীল ঘোষ।


প্র: কলকাতা না গোহাটি?
জয়া: গোহাটি।

প্র: তুমি ফুডি না নন-ফুডি?
জয়া: আমার সব ধরনের ভাল খাবারই খেতে ভাল লাগে।

প্র: তুমি লেজি পারসন না অ্যাকটিভ পার্সন?
জয়া: আমি দুটোই নয়। কিন্তু প্রত্যেকদিন যা কাজ করা সব ঠিকঠাক করেনি।

প্র: নাইট আউল নাকি আর্লি রাইজার?
জয়া: আমি সকালে তাড়াতাড়িই উঠি। তবে লেট নাইট হলে একটু দেরি করে ঘুম ভাঙে।

প্র: ফিচার ফিল্ম অন বিগ স্কিন না ওটিটি?
জয়া: ফিচার ফিল্ম। সিনেমা আমার কাছে অবশ্যই একটা আলাদা এক্সপিরিয়েন্স।

প্র: টি-পার্সন নাকি কফি-পার্সন?
জয়া: নট বোথ। চা ও কফি দুটোই খাই না।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...