ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী হওয়ার। মাত্র চার বছর বয়স থেকে 'বেঙ্গল মিউজিক কলেজ'-এ নাচ শেখা শুরু করেছিলেন তিনি। পরিচালক সুশীল মুখোপাধ্যায়ে ছবি দিয়ে তার অভিনয় জীবনের শুরু হয়েছিল। কাজ করেছেন বহু ধারাবাহিকেও। চলতি মাসেই বড় পর্দায় আসছে তাঁর অভিনীত পরবর্তী বাংলা ছবি 'বেলাশুরু'। অভিনেত্রীর নাম ইন্দ্রানী দত্ত। সম্প্রতি জিয়ো বাংলার আড্ডা উইথ অপ্সরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নিজের স্ট্রাগল ও জার্নির গল্প তুলে ধরেছেন ইন্দ্রানী দত্ত।
প্র: তোমার বড় হয়ে ওঠা কলকাতায়। স্কুলিংও কলকাতা থেকেই করেছ। ছোটবেলাটা কেমন ছিল?
ইন্দ্রানী: ছোটবেলাটা আমার ভালই ছিল। আমি এখন নাচ ও অভিনয় করি। এই সব কিছুর শখ ছোটবেলা থেকেই ছিল। বড় হয়ে আলাদা করে কিছু তৈরি হয়নি।
প্র: কখন বুঝলে যে তুমি নাচটা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাও?
ইন্দ্রানী: আমি যখন স্কুলে ভর্তি হইনি, মানে প্রায় চার বছর বয়স থেকে আমি নাচ শিখছি। আমার বাড়িতে মা, কাকা গান গাইতে পারতেন। তাই সব সময় একটা গান বাজনার পরিবেশ ছিল আমার বাড়িতে। আর যখন আমার বাড়িতে কেউ বেড়াতে আসতেন তখন আসর বসে যেত। কিন্তু সকলে যখন গান গাইতেন তখন আমি তাদের গানের তালেই নাচতাম। আমার নাচের প্রতি এই ভালোবাসা দেখেই হয়তো বাবা আমাকে নাচের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। আমি 'বেঙ্গল মিউজিক কলেজ'-এ নাচ শিখতাম। প্রায় সব ধরনের নাচই সেখানে শেখানো হতো। ওখানে আমি ফিফথ ইয়ার পর্যন্ত শিখেছিলাম। তখন আমি বাবার সঙ্গে ডোভার লেন কনফারেন্সে যেতাম নাচের অনুষ্ঠান দেখতে। সেই সময় ঠিক করেছিলাম কত্থক নৃত্য শিখব। তারপরেই 'বাণীচক্র'এ গুরু সুমিত্রা মুত্রের কাছে আমি শেখার জন্য ভর্তি হয়েছিলাম।
প্র: তুমি অভিনয়ে কীভাবে এলে?
ইন্দ্রনী: যখন ছোট ছিলাম তখন আমার পিসি, মাসিরা বলতেন শর্মিলা ঠাকুরের মতো গালে টোল পড়ে। কেউ বলত আমার চোখগুলো খুব সুন্দর। এই সব শুনেই মনে হয়েছিল বড় হয়ে আমিও নায়িকা হব। আমার এই ইচ্ছেটার কথা সকলেই জানতেন। তাই একদিন আমার মেকআপম্যান বললেন পরিচালক সুশীল মুখোপাধ্যায় নিজের ছবির নায়িকা খুঁজছেন। তুমিও ছবি দাও। তারপর সুশীলদা আমাকে সিলেক্ট করলেন।
প্র: তোমার নাচ আর অভিনয়ের মধ্যে ব্যালেন্স করো কীভাবে?
ইন্দ্রানী: মাঝে মাঝে মনে হয় ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’। মাল্টি টাক্সিং আমি করার কথা ভাবি, কিন্তু করতে পারি না। যখন আমি ডান্সের একটা রিহার্সাল করি তখন আমার মনে হয় ২৪ ঘন্টার দিনটা যদি ৪৮ ঘন্টার হত... কিছুতেই কমপ্লিট হচ্ছে না। শুধুমাত্র নিজের রিহার্সাল নয়, আমি যখন কোরিওগ্রাফি করছি তখন আমার সঙ্গে যারা নাচছেন তাদেরকেও দেখতে হয়। তাই মনে হয় এই সব কাজের জন্য অনেকটা সময় দরকার হয়। এই প্রফেশনে আসার পর আমায় কোন স্ট্রাগল করতেই হয়নি। কিন্তু আমার পরিবার খুবই কনজারভেটিভ। তাই বাড়িতেই বেশি স্ট্রাগল করতে হয়েছে আমাকে। পরিবারের কেউ চাইতেন না আমি ছবিতে অভিনয় করি। অভিনয়ের জীবনেও অনেকবার ব্রেক এসেছে, অনেক সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। এছাড়াও অনেক সমস্যা এসেছে। কিন্তু তাও আমি কাজ করে গিয়েছি। অনেকদিন পর আমার একটা নাচের শো দেখে আমাকে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘আর অভিনয়ে করবে না?’ তারপর আমাকে ওর অফিসে যেতে বলা হয়েছিল। তখনই আমি 'বেলাশেষে'-এর কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম।
প্র: তুমি বলেছ লাইফের অনেক সময় অনেক ভাল ভাল অপারচ্যুনিটি মিস করেছ। সেটা নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই তোমার?
ইন্দ্রানী: নট রিয়েলি। আমি ভাবি না। আমি খুব ভাগ্যে বিশ্বাসী। আমার ভাগ্যে যেটা ছিল আমি সেটাকেই হান্ড্রেড পার্সেন্ট দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
প্র: পরপর তিনবার তুমি মহিষাসুরমর্দিনীতে ‘মা দুর্গা’র ভূমিকায় অভিনয় ও পারফর্ম করেছ। এই এক্সপিরিয়েন্সটা কেমন ছিল?
ইন্দ্রানী: খুব ভাল। প্রথমবার যখন মা দুর্গার ভূমিকায় অভিনয় করেছি, তখন আমার মেকআপ নিয়ে সেভাবে কেউ ভাবেনি। মা দুর্গার যে হেভি লুকটা দরকার সেটা ঠিক ছিল না। কিন্তু তাও কাজের অনেক প্রশংসা এসেছিল। তবে দ্বিতীয়বার আর তৃতীয়বার যখন আমি মা দুর্গার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম তখন আমার লুকটা ঠিক ছিল। অনেক রকম ভাবে মা দুর্গার লুকটা তুলে ধরা হয়েছিল।
প্র: তোমার মেয়ে এখন বড় হয়ে গিয়েছে। তার সঙ্গে কীভাবে সময় কাটাও তুমি?
ইন্দ্রানী: এখন আমার মেয়েও খুব ব্যস্ত। আমি যখন সিরিয়াল করছিলাম তখন ওর সঙ্গে রাতেই শুধু দেখা হত। সারা দিনে খুব একটা টাইম পেতাম না। শুধু ফোনেই কথা হত আমাদের। তাই মনটা খুব খারাপ হয়ে যেত। তখন যেমন খুব ব্যস্ত ছিলাম যার জন্য ওকে আমি টাইম দিতেই পারতাম না। ও বলতো, ‘মাম্মা তুমি বোঝো না’। এখন ও খুব ব্যস্ত আমি এখন অনেকটাই ফ্রি কিন্তু আমিও বুঝতে চাই না। এখন ওর লন্ডনে একটা ছবির শুটিং চলছে তাই যখন প্যাকআপ হয় তখনই আমি ওকে ফোন করতে পারি।
এবার কয়েকটা ফাস্ট কোয়েশ্চেনের উত্তরে অভিনেত্রী ইন্দ্রানী দত্ত।
প্র: ফুডি অর অ্যা নন ফুডি?
ইন্দ্রানী: ফুডি।
প্র: বিরিয়ানি নাকি চাইনিজ?
ইন্দ্রানী: মায়ের হাতের রান্না।
প্র: ওয়ার্কহলিক নাকি ল্যেজি পার্সন?
ইন্দ্রানী: বোথ। যখন যেমন দরকার লাগে। কাজ থাকলে করি। আর যখন কাজ থাকে না তখন ল্যাদ খাই। তবে হ্যাঁ, সব সময় আমি কাজ নিয়েই চিন্তা করি।
প্র: আর্লি রাইজার না নাইট আউল?
ইন্দ্রনী: আর্লি রাইজার নই। কিন্তু খুব লেটেও ঘুমাই না। তবে পার্টি বা ক্লাবিং করার জন্য লেট হয় এমন না। কাজ শেষ করতেই লেট হয়।
প্র: টেলিভিশন, ওয়েব সিরিজ না ফিল্মস?
ইন্দ্রনী: অফকোর্স ফিল্মস। সিলভার স্ক্রিনের অল্টারনেটিভ কিছু হতে পারে বলে আমার মনে হয় না। আমি সব সময় হলে গিয়েই ছবিটা দেখতে ভালোবাসি।
প্র: তোমার আপকামিং প্রজেক্টগুলো কী কী?
ইন্দ্রনী: 'বেলাশুরু' রিলিজ হচ্ছে। আরও একটা ছবির শুটিং শুরু হবে। তাছাড়া একটা নতুন ডান্সের প্রোডাশন মাথার মধ্যে সেট করে ফেলেছি। কিন্তু এখনও সেটা স্টার্ট করতে পারিনি। বিফোর পুজো এটা আমি লঞ্চ করতে চাই।