জানেন এনার সাহার জীবনের টার্গেট কী?

মিষ্টি হাসি আর আদুরে মুখে মন জিতে নিয়েছেন দর্শকদের। বাংলা টেলিভিশনের দুনিয়ায় পা রাখেন একেবারে ছোট বয়সে। তারপর ছবিতে অভিনয়। বাংলার পাশাপাশি তাঁকে দেখা গিয়েছে বেশ কিছু জনপ্রিয় তেলেগু, মালায়লম ছবিতেও। এখন তিনি নিজেই ছবির প্রযোজক। অভিনেত্রীর নাম এনা সাহা। জিয়ো বাংলার ‘আড্ডা উইথ অপ্সরা’য় মন খুলে শেয়ার করলেন নিজের জীবনের নানা অজানা গল্প।

প্র: তুমি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বা টেলিভিশনে অভিনয় করার কথা কখন ভেবেছিলে। ছোটবেলা থেকেই কী প্ল্যান ছিল?

এনা: আমি সাত বছর বয়স থেকে অভিনয় করা শুরু করেছিলাম। ইচ্ছা বা ডিসিশন কোনওটাই সেই সময় নেওয়ার মতো আমার বোধ ছিল না। যখন আমি বুঝতে শিখলাম ততদিনে ক্যামেরার সামনে অভিনয় করাটা আমরা অভ্যেসে পরিণত হয়েছিল। তারপর আসতে আসতে আমি ফিল্ম, টেলিভিশন সাপোর্টিং চরিত্রে অভিনয় করা শুরু করি। তারপর লিড রোলে। আর এখন আমি প্রোডিউসার।

প্র: তোমার জঁনার কী?

এনা: আমি কোনও জঁর নেই। আমি জঁনারে বিলিভ করি না। তবে দর্শক হিসেবে আমার কমেডি ছবি ও অ্যাকশন ছবি দেখতে ভাল লাগে। কিন্তু অভিনেতা হিসেবে আমার নতুন কাজ করতে ভাল‌ লাগে।

প্র: তুমি তো অনেক প্রোডাকশন হাউজে কাজ করেছ। এখন তোমার নিজের প্রোডাকশন রয়েছে। প্রোডিউসর হিসেবে এমন কী নতুন করতে চাও তুমি?

এনা: ঠিক প্রথম দিনেই আমার প্রোডাকশন হাউজে যারা কাজ করেন তাদের সবাইকে একটা কথাই বলেছিলাম যে, আমার প্রোডাকশন হাউজে কখনও এমন হবে না যে কেউ বড় স্টার বলে তাকে বেশি প্রেফারেন্স দেওয়া হচ্ছে আর কেউ ছোট বলে তাকে কম পাত্তা দেওয়া হচ্ছে। আমরা কোনও নিউ কামারদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার হোক এটা চাই না। কারুর জন্যে বেশি কিছু করতে না পারো তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করো না। আমার হাউজের টিম মেম্বাররাও এই নিয়ম মেনে চলে।

প্র: তোমার কী মনে হয় এখন বাংলার প্রোডাকশন হাউজগুলোতে একটা কর্পোরেট কালচার তৈরি হয়েছে?

এনা: একটা প্রোডাকশন হাউজ মানেই তার একটা অফিস থাকবে। সেখানে স্টাফসরা থাকবে। তাই একটা রুল অ্যান্ড রেগুলেশনও থাকবে। এরকম তো হবে না যে তুমি ক্রিয়েটিভ বলে যখন খুশি আসবে যখন খুশি চলে যাবে। কোনও কাজেই এমনটা হয় না। তাই একটা নিয়ম তো মেনে চলতেই হবে।

প্র: তুমি যখন প্রোডাকশন হাউজ শুরু করলে তখন কী কী চ্যালেঞ্জ ফেস করতে হয়েছিল তোমাকে?

এনা: আমাদের প্রথম ছবি 'এসওএস কলকাতা' যখন তৈরি হয়েছিল। তখন যা বাজেট ধরা হয়েছিল তার দ্বিগুণ খরচ হয়েছিল। আমি সেই সময় বুঝতে পেরেছিলাম ব্যবসার সময় ইমোশনাল হয়ে না ভেবে প্র্যাকটিক্যালি ভাবতে হবে।

প্র: ওয়েব সিরিজ ও সিনেমা কোথায় অভিনয় করা তোমার কাছে বেশি চ্যালেঞ্জিং?

এনা: আমার মনে হয় ওয়ার্কিং ইন ফিল্ম ইজ মোর চ্যালেঞ্জিং। ওয়েব সিরিজের ক্ষেত্রে রিলিজের চাপটা খুব কম থাকে। কিন্তু সিনেমার রিলিজের সময় অনেক চাপ থাকে। একটা সিনেমা বানাতে যদি ১০০ শতাংশ এফোর্ট দিতে হয়। তাহলে তার মধ্যে ৬০ শতাংশ এফোর্ট দিতে হয় হল রিলিজের সময়।

প্র: তোমার কী মনে হয় ছবি প্রোডিউজ করা বেশি চ্যালেঞ্জিং না অভিনয় করা?

এনা: ছবি প্রোডিউজ করাই বেশি চাপের। কারণ ছবির শুটিং শুরু হওয়ার আগে থেকেই পরিচালক ও সঠিক গল্প সিলেক্ট করতে হয়ে তাদের। সকলের কাজের উপর নজর রাখা যেন কারুর কোনও ভুল না হয়। এই সব কিছুই করতে হয় প্রোডিউসারকে। সব সময় খুব সতর্ক থাকতে হবে।

প্র: তোমার ছবি 'চিনে বাদাম'-এর সাংবাদিক সম্মেলনে তুমি খুব ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলে। সেটা সম্পর্কে তুমি কী বলবে?

এনা: আমরা চেষ্টা করি রোবটের মত কাজ করবার। কিন্তু আমরা সকলেই মানুষ। তাই আমার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছিল। ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম।

প্র: ইন্ডাস্ট্রিতে থাকলে মন ভাঙাটা স্বাভাবিক। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ইন্ডাস্ট্রির নতুন প্রজন্মের অনেকেই এই মন ভাঙার পর আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। তুমি কী বলবে এই বিষয়ে?

এনা: একটা কথা বলবো, মা আমাকে ছোটবেলায় বলেছিল তুমি অন্যদের থেকে যেটা আশা করছ সেটা তুমি অন্যদের জন্য করো 'কার্মা উইল গিভ ইউ ব্যাক'। এছাড়াও মা আমাকে আরও একটা কথা বলেছিল যে, সবাইকে যতটা তুমি ভালোবাসছো তার থেকে আর একটু বেশি নিজেকে ভালোবাসতে হবে। তুমি যদি নিজেকে বাঁচাও তাহলেই অন্যকে তুমি সাহায্য করতে পারবে। ডিপ্রেশন সবার হয়। আমি নিজেও ডিপ্রেশনের ওষুধ খেয়েছি। তাই গিভআপ করলে চলবে না। তোমার লাইফের সঙ্গে আরও অনেকের লাইফ জড়িয়ে রয়েছে। যাদের তোমার থেকে অনেক অনেক অ্যাক্সেপ্টেশন রয়েছে।

প্র: তোমাকে আমরা পর্দায় দেখছি। কিন্তু যখন তোমার আগের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে তখন কেমন লাগে?

এনা: আমার খুব ভালো লাগে। ভালো ভালো ঘটনা যেমন ঘটেছে তেমনি কারণ ছাড়া অনেকে খারাপ ব্যবহার করেছে। যেগুলো এখনও মনে আছে।

প্র: কাকে ডেট করছ তুমি?

এনা: আমার কাজকে। এখন আমার কাছে আমার কোম্পানিটাই সব কিছু। জীবনে কিছু টার্গেট রয়েছে যেগুলি পূরণ করার পরেই আমি এই সব নিয়ে ভাবব।

প্র: ভবিষ্যতে কী প্ল্যান আছে সংসার করার?

এনা: হ্যাঁ নিশ্চয়ই। সকলের মতো আমিও বিয়ে করতে চাই। গুছিয়ে সংসার করতে চাই। আমার সব সময় মনে হয় একজন ভালো মা হওয়ার। অন্তত তিনটে সন্তানের মা হতে চাই আমি। তবে এখন না। আগে আমি কাজটা ভালো করে করতে চাই। তারপর জমিয়ে সংসার করব।

প্র: তুমি সাউথের ছবিতে কাজ করেছ। সেই এক্সপেরিয়েন্সটা কেমন ছিল?

এনা: আমি একটা তেলেগু সিনেমা ও দুটো মালায়লম ছবি করেছি। প্রত্যেকেটা ইন্ডাস্ট্রির কালচার ও কাজ করার ধরন আলাদা। তার মধ্যে মালায়ালম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বাজেট আমাদের মতোই হয়। কিন্তু ওদের কাজ শুরুর আগে যে হোম ওয়ার্কটা হয় সেটা আমাদের থেকে বেশি। তবে তেলেগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সব কিছুই অনেক বড় মাপের হয়। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে বলিউডের থেকেও বড়। আর ওদের দর্শকরা খুব কানেক্টেড।

প্র: তোমার আপকামিং প্রজেক্টগুলো কী কী?

এনা: আমার দুটো ফিল্ম শুটিং হয়েছে। একটা ‘মাস্টার মশাই আপনি কিছু দেখেননি’, আর অন্যটি হল ‘ডাক্তার কাকু’। দুটো ছবিতেও অনেক বড় কাস্টিংসরা রয়েছে। তবে এছাড়াও একটা ছবির অ্যানাউন্সমেন্ট হবে।

এবার র‌্যাপিড ফায়ার রাউন্ডে অভিনেত্রী এনা সাহা।

প্র: তুমি কী ফুডি?
এনা: হ্যাঁ।

প্র: তোমার প্রিয় ক্যুইজিন কী?
এনা: আমার বাঙালি খাবার খেতে ভালো লাগে।

প্র: লং ড্রাইভ না লং ওয়ার্ক?
এনা: দুটোই আমার পছন্দের।

প্র: তোমার ফেভারিট পাস টাইম?
এনা: এখন আর পাস টাইম পাই না। তবে পাস টাইমে বই পড়তে, ভাই বোনদের সঙ্গে আড্ডা মারতে ভালো লাগে।

প্র: টি পার্সন না কফি পার্সন?
এনা: টি।

প্র: রেনি ওর সানি ডে?
এনা: কাজ না থাকলে রেনি। আর কাজ থাকলে সানি।

প্র: ফেভারিট ডেট স্পট?
এনা: লং ড্রাইভ যেতে যেতে ডেট করতে পারলে আমার ভাল লাগবে।

প্র: সোশ্যাল মিডিয়ার পিছনে তুমি কত সময় দাও?
এনা: দু’ঘন্টার বেশি সময় দিই না।

প্র: কোন পরিচালকের সঙ্গে তুমি কাজ করতে চাও?
এনা: সঞ্জয় লীলা বনশালি আর রোহিত শেট্টি।

প্র: তোমার ড্রিম ম্যান যে হবে তার কী কী কোয়ালিটি থাকবে?
এনা: প্রথমত, তাকে সাহসী হতে হবে। দ্বিতীয়ত, সে কখনও গিভ আপ করবে না। তৃতীয়ত, তাকে অনেক গ্ৰাউন্ডেড হতে হবে। চতুর্থত, ভীষণ আন্ডার স্ট্যান্ডিং। পঞ্চমত, তাকে আমার ফ্যামেলিকে অ্যাকসেপ্ট করতে হবে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...