'মানুষ অমানুষ' ছবি দিয়ে অভিনয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল। 'টান' ছবিতে অভিনয় করার জন্য জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি। প্রায় ২৫ বছরের বেশি অভিনয় জীবন। 'টান' ছবির জন্য পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কার। দেবলীনা এখনও পর্দার ম্যাজিক। পর্দার বাইরেও দেবলীনা দরদী মানুষ। রাস্তার অসহায় সারমেয়দের জন্য তিনি কাজ করেন। জীবনকে তিনি দেখেন একেবারে অন্য চোখে। ঘরে-বাইরে কেমন মানুষ দেবলীনা? 'আড্ডা উইথ অপ্সরায়' একান্ত আড্ডায় নিজের পথ চলার গল্প বললেন দেবলীনা...শুনলেন অপ্সরা...
প্র: প্রথমেই তোমার থেকে জানতে চাই, তুমি তো নাচের মধ্যে ছিলে; সেখান থেকে অভিনয়ের হাতে খড়ি কীভাবে হল?
দেবলীনা: অভিনয়ের হাতেখড়ি হয়েছিল আমার মায়ের হাত ধরে। মায়ের স্কুলেই আমি নাচ শিখতাম। আমার গুরুর নাম শ্যামলী মল্লিক। নৃত্য নাট্য দিয়েই আমার অভিনয় শুরু হয়েছিল। এছাড়াও আমি ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন কবিতার অনুষ্ঠানে যেতাম। তখন কবিতাপাঠের সময়ও অভিনয় করতে হত, সেটাই মা আমাকে শেখাতেন। সেই তখন থেকেই আমার অভিনয় শেখা শুরু হয়। এখনও আমার অভিনয় কোনও ভুল হলে কী করে আরও বেটার করা যায় সেটা বলে দেন মা।
প্র: তোমার একটা ডান্স গ্ৰুপ ছিল। অ্যাক্টিং করতে এসে কী নাচ কন্টিনিউ করতে পারছ?
দেবলীনা: নাচ ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না। নাচ আমার প্রথম প্রেম। আমি ভেবেছিলাম আমার প্রফেশন হিসেবে নাচটাকেই বেছে নেব। কিন্তু আমার মাধ্যমিকের পর আমার মেজ পিসি একটা বিউটি কনটেস্টের ফর্ম ফিলাপ করে আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সেখানে আমি উইনার হয়েছিলাম। তার আরও একটি বিউটি কনটেস্টে ফার্স্ট হয়েছিলাম। তারপরেই অভিনয় করার জন্য ডাক পাই। আমার প্রথম ছবি 'মানসী'। কিন্তু তার আগে মায়ের স্টুডেন্ট হিসেবে আমি কিছু প্রজেক্টে কাজ করেছি। 'প্রবাহ' নামে একটি প্রজেক্টে কাজ করার পর আমি অভিনয়কেই নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম।
প্র: তোমার প্রথম ছবি ছিল 'মানুষ অমানুষ', পুরোনো সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে তোমার কী মনে হয়?
দেবলীনা: এই বিষয়ে নিয়ে একমাত্র বলতে পারবেন দীপকদা(চিরঞ্জিত চক্রবর্তী)। দীপকদা ও বৌদি দুজনেই আমার খুব কাছের মানুষ। আমাদের প্রোডাকশানের হয়ে অনেকগুলি কাজ করেছেন তিনি। দীপকদা আমাকে সেই সময় দেখেছিলেন। দীপকদা এখনও আমার খুব বন্ধু। তবে আমার মনে হয় বয়সে সঙ্গে সঙ্গেই আমার ম্যাচিওরিটি বেড়েছে। যার ফলে জীবনটা এখন আমার কাছে অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে।
প্র: আমরা জানি তুমি একজন ডগ লাভার। এই সম্পর্কে তোমার থেকে জানতে চাই
দেবলীনা: আমি বরাবরই পশুপাখি ভালোবাসতাম। তবে সব সময় নিজে ডগ রেসকিউ করার সময় পাই না। তাই আমার চেনা একটি অ্যানিম্যাল হসপিটাল রয়েছে। সেখানে এক কাকু আছেন, ওঁকেই আমি ফোন করে বলি রেসকিউয়ের জন্য। তবে তথাগতর সঙ্গে বিয়ের পর আমরা দুজনেই রেসকিউ করা শুরু করেছিলাম।
প্র: তোমার এখন কত জন ছানা রয়েছে?
দেবলীনা: আপাতত বাড়িতে তিন জন রয়েছে। আর আমার পাড়াতে রয়েছে চুয়াল্লিশ জন। যার মধ্যে দুটি ছাগল আছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল ঐ ছাগল দুটি মাংস ভাত খায়।
প্র: আমরা শুনেছি তোমার একটা ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। তোমার কী এই চ্যানেলটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে?
দেবলীনা: এটাও ঐ লকডাউনের সময় আমি খুলে ছিলাম। তখন সারা দিন বাড়িতেই থাকতাম তাই ভাবলাম এই চ্যানেলটা শুরু করি। সাধারণত কিছু বিষয় নিয়ে নিজের মতামত রাখতেই আমি চ্যানেল শুরু করেছিলাম। তবে ট্রাভেল ভ্লগ রয়েছে। অনেক দিন হয়ে গেল আমার ভ্লগ আসেনি। আমার চ্যানেলের দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই খুব তাড়াতাড়ি আসতে চলেছে নতুন ভ্লগ। একটা নতুন সারপ্রাইজ থাকছে নতুন ভ্লগে।
প্র: কী সারপ্রাইজ থাকছে?
দেবলীনা: আমার সঙ্গে আরও একজনকে দেখা যাবে ড্যান্স পারফর্মেন্সে। সেটাই সারপ্রাইজ!
প্র: লকডাউনের সময়টাকে তুমি কতটা কন্সট্রাক্টিভলি ইউজ করতে পেরেছ?
দেবলীনা: ইউটিউব চ্যানেল ও আমার পোষ্যদের নিয়েই সময় কেটে যেত। তবে লকডাউনের আগে আমি গ্যাস জ্বালাতেও পারতাম না। কিন্তু এই লকডাউনে রান্না করা শিখেছি। এখন আমি সব ধরনের খাবার রান্না করতে পারি।
প্র: 'টান' নামে একটি ছবিতে তুমি অভিনয় করেছ। এই ছবির জন্যে তুমি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছ। সেই ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
দেবলীনা: ‘টান’ ছবিতে সম্পূর্ণ বাঙাল ভাষায় কথা বলতে হয়েছে আমাকে। এটার জন্য শঙ্করদার সাহায্য নিয়েছিলাম। আমার মামার বাড়ি বাঙাল, আমার বাড়ি ঘটি। বাংলাদেশের বিখ্যাত উপন্যাস 'জল বেশ্যা'র উপর ভিত্তি করেই এই ছবি নির্মিত হয়েছিল। 'টান’-এ কাজ করেছিলাম বলেই এখন যে কোনও বাঙালভাষী চরিত্র আমি খুব সহজেই অভিনয় করতে পারি। এই ছবিতে রাজেশদা'র সঙ্গেও অভিনয় করতে পেরে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম।
প্র: ছোটপর্দা ও বড়পর্দা দু’জায়গায় কাজ করেছ তুমি। তোমার কী মনে হয় কোনটাতে তুমি বেশি আর্টিস্টিক ফ্রিডম পাও?
দেবলীনা: আর্টিস্টিক ফ্রিডম ডিপেন্ড করে পরিচালকের উপর। পরিচালক কতটা ফ্রিডম দেবে তার উপর নির্ভর করে। ‘আর্টিস্টিক ফ্রিডম’ কাকে বলে আমি সেটা বুঝেছিলাম রবি ওঝার সঙ্গে কাজ করে। এছাড়া প্রোডাকশন টিমও আমাকে এই বিষয়ে সমর্থন করেছিল। তবে বড় পর্দায় কাজ করলে তার একটা আর্কাইভ ভ্যালু থাকে। যেটা প্রত্যেক অভিনেতারই খুব দরকার। কিন্তু বড় পর্দার পরিচালকরা ও প্রযোজকরা মনে হয় আমাকে খুব একটা পছন্দ করে না। কারণ আমাকে বড় পর্দায় কাজ করার জন্য ডাকা হয় না।
প্র: তোমার যে এত সময় ধরে শুটিং করতে হয়, কীভাবে টাইম ম্যানেজ কর তুমি?
দেবলীনা: হ্যাঁ, যখন আমি কাজ শুরু করেছিলাম তখন অনেকক্ষণ শুটিং করতে হত। কিন্তু এখন আমাদের সময় বাঁধা হয়ে গিয়েছে, তাই সমস্যা হয় না। এছাড়াও এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে একদিন ছুটি থাকলে তখন খুব ভাল লাগে।
প্র: ছুটির দিন কীভাবে দিন কাটাও?
দেবলীনা: সিনেমা দেখার চেয়ে বেশি আনন্দ আর কোন কিছুতেই হয় না। তাই চেষ্টা করি সিনেমা দেখার। তবে সিনেমাহলে গিয়ে সিনেমা দেখতে সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে আমার। এছাড়াও মা আর বন্ধুদের সঙ্গে ডেটে বেরতে, রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেতে ভাল লাগে আমার। সব কিছুই যেন ঐ একদিনের মধ্যে করে নিতে ইচ্ছে করে আমার।
প্র: ৯ বছরের ম্যারেড লাইফ। এখন তুমি সম্পূর্ণ একটা সিঙ্গেল লাইফ লিড করছ। কোন লাইফটা তোমার প্রিয় ছিল?
দেবলীনা: আমি ৯ বছর তথাগতর সঙ্গে এক ছাদের তলায় কাটিয়েছি। সেটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ৯ বছর। কিন্তু একটা মানুষ কখনই সিঙ্গেল থাকে না। তথাগতর আগে আমার প্রিয় বন্ধু ছিল মা। এখনও আমার প্রিয় বন্ধু মা। আমি এখন আমার পুরো আইডেন্টিটিটা পাশে দেখতে পাই। সবাই হয়ত বলবে সেলফ লাভ। এখন কিন্তু একা থেকেই অনেক কিছু শিখছি। যেমন- হরস রাইডিং, লাঠি খেলা। এছাড়াও ছবি পরিচালনায় হাত দিতে চলেছি। তাই নিজের সঙ্গে থাকার মজা সবচেয়ে বেশি।
প্র: তোমার আপকামিং প্রজেক্টগুলো কী কী?
দেবলীনা: এখন 'ত্রিশূল' চলছে। আপকামিং প্রজেক্টগুলো মধ্যে 'ভটভটি' এবছর মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। 'মেমরিএক্স' যেটার আগের বছর কাজ শুটিং করেছিলাম। এটাও এবছর আসার কথা।
প্র: ছুটির দিনে বাড়িতে চিল করা, ক্যাফেতে চিল করা নাকি রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া?
দেবলীনা: ক্যাফেতে চিল করা।
প্র: নাইট আউট নাকি আর্লি রাইজ?
দেবলীনা: নাইট আউট।
প্র: কফি অর টি?
দেবলীনা: কফি।
প্র: ডার্ক চকলেট ওর মিল্ক চকলেট?
দেবলীনা: ডার্ক চকলেট।
প্র: মুভি, ওটিটি না টিভি সিরিজ?
দেবলীনা: মুভি।