'বৌ হারালে বৌ পাওয়া যায়, মা হারালে মা পাওয়া যায় না' এই সংলাপটি আজও জনপ্রিয়। তবে শুধু সংলাপটি নয়, যিনি এই সংলাপটি বলেছিলেন অর্থাৎ অভিনেতা চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীও সমানভাবে জনপ্রিয়। অভিনয়ের পাশাপাশি সঞ্চালনা ও পরিচালক হিসেবেও তিনি জনপ্রিয় নাম। সম্প্রতি জিয়ো বাংলার 'আড্ডা উইথ অপ্সরা' অনুষ্ঠানে জীবনের গল্প তুলে ধরলেন অভিনেতা চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী।
প্র: আপনার নাম দীপক চক্রবর্তী সেখান থেকে চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী। এই ট্রান্সফরমেশনটা বা নাম পরিবর্তনটা কেন?
চিরঞ্জিৎ: পচা ছবি করার জন্যে। যে সব বাংলা ছবি আমরা করেছি সেই সবগুলোই পঁচা ছবি। সেই জন্য একটা অন্য নাম নেওয়া উচিত ছিল। আমি আর্কিটেকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্টুডেন্ট। আমার বাবা বিখ্যাত শিল্পী কার্টুনিস্ট,পেইন্টার শৈল্য চক্রবর্তী। বিরাট সেলিব্রেটি ছিলেন তিনি। আমি কাজ করেছি সত্যজিত রায়ের সঙ্গে, মানিক দার সঙ্গে। আমার অ্যাম্বিশন ছিল ভালো ছবি তৈরি করার। পরিচালক হওয়ার। সেই সময় আমি আর মিঠুন স্ক্রিপ্ত নিয়ে প্রোডিউশারের খোঁজতে বেরতাম। মিঠুনের ইচ্ছা ছিল হিরো হওয়ার আমার ইচ্ছা ছিল পরিচালক হওয়ার। কিন্তু একদিন আমি হিরো হওয়ার অফার পাই। তখন সেটা আমি অ্যাকসেপ্ট করি। আমার মনে হয়েছিল আগে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করা শুরু করি। তারপর আমার পক্ষে খুব সহজ হবে। আমার তো ইচ্ছা ছিল পরিচালক হওয়ার কিন্তু আনফর্চুনেটলি এটাতে এত সাকসেসফুল হয়ে গেলাম যে এটাই আমার কেরিয়ার হয়ে গেল। তারপর আমি কিন্তু আর সেরকম কোনও প্রোডিউশার পেলাম না যাকে দিয়ে 'পথের পাঁচালি' মতো ছবি বানানো যায়। তখন সব প্রোডিউশার আমার থেকে কমার্শিয়াল ছবিই চাইছে। নামী লোক যদি কোনও ছবি বানায়ে তাহলে সবাই ছবির প্রশংসা করবে। কিন্তু অন্য কেউ বানালে মানুষ ভুল ধরবে। তাই পারসেপশনটার জন্যেই আমি ভেবে ছিলাম যা ভুল হবে তার দায় চিরঞ্জিৎ নিতে কিন্তু দীপককে নিতে হবে না। এই কারণেই চিরঞ্জিৎ নামটা দেওয়া হয়েছে।
প্র: তখনকার বাংলা ছবি আর এখনকার ছবির মধ্যে যে পরিবর্তনটা এসেছে। সেটার সম্পর্কে আপনি কী মনে করেন?
চিরঞ্জিৎ: আসলে ওয়ার্ল্ড ফিল্ম একদমই পাল্টায়নি। মাসের আই কিউ হচ্ছে একটা আট বছরের শিশুর আই কিউ। সেই জন্য 'আর আর আর'-এর মতো ছবি চলে। তখনো 'হেরা ফেরি', তার আগে 'সোলে' হয়েছে। আমাদের এখানেও কমার্শিয়াল সেটআপের ছবি হয়ে আসছে। কিন্তু মাঝে আমরা হঠাৎ ইন্টালেকচুয়াল হয়ে গেলাম। এটাই চেঞ্জ। আমারাই এই পরিবর্তন এনেছি। এই পরিবর্তন এনে আমরা নিজেদের মতো কিছু ছবি বানাতে শুরু করলাম। যেগুলো গ্ৰামের সাধারণ মানুষ অ্যাবসুলেটলি রিফিউজ করল। যেমন- কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের 'শব্দ' একটা অসম্ভব ভালো ছবি। সাধারণ গ্ৰামের মানুষ এই ছবি রিলেট করতে পারবে না। এটাই হল আধুনিক বাংলা ছবির সমস্যা। আমাদের সময় বাংলা ছবি আবার রমরমিয়ে চলতে শুরু করেছিল। আমি প্রায় ২৫ হাউজ ওপেন করেছিলাম সেই সময়। এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চলে এসেছে। কিন্তু তাতে ছবির বাজার যায়নি। আগের বাংলা ছবিতে স্টার ছিল এখন তারাও নেই। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির শেষ স্টার হল দেব আর জিৎ।
প্র: আপনি নিজেও অনেকগুলি ছবির প্রোডাকশন ও ডিরেক্টর করেছ। সেই অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
চিরঞ্জিৎ: খুব ভালো অভিজ্ঞতা ছিল। পর পর সাতটা ছবি হিট দিয়ে ছিলাম আমি। যার মধ্যে আমার 'ভয়' ছবিটা অনেকগুলো অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল।
প্র: সৃজিতের মুখোপাধ্যায়ের 'চতুষ্কোণ' ছবিতে আপনি কাজ করেছিলেন। তার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
চিরঞ্জিৎ: খুব ইন্টারেস্টিং। আমি তখন ভোটে জিতেছি প্রথমবার। এম.এল.এ হয়েছি। সৃজিত আমাকে ফোন করে বললো আমাকে একটা রোল করতে হবে ওর ছবিতে। আমি বললাম স্ক্রিপ্তটা শোনা। আর স্ক্রিপ্তটা শোনার পর আমার খুব ভালো লাগল।
'চতুষ্কন' ইন্টারেস্টিং এই যে এটা দীপকের ছবি।
প্র: 'অ্যাবি সেন', 'বুড়ো সাধু' এই ছবিগুলোতে আপনাকে অন্য রকম ভাবে দেখেছি আমরা। কী বলবেন সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে?
চিরঞ্জিৎ: এগুলো সবই দীপক করেছে। দীপক এই ভ্যারাইটিগুলো পছন্দ করে। কিন্তু চিরঞ্জিৎ এই সব পছন্দ করে না এমন নয়। তবে দীপক যদি সেটা করে তাহলে মাসটা দেখবে না ওকে।
প্র: ঋতুপর্ণ ঘোষের 'বাড়িওয়ালি' ছবিটি অনেকেই মনে করেন আপনার ফিল্ম লাইফের কি-পয়েন্ট। সেটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
চিরঞ্জিৎ: অপর্ণা সেন বলেছিলেন 'chotushkon'-এর চেয়ে আমার 'বাড়িওয়ালি'তে বেশি ভালো অভিনয় করেছিলাম। তবে ছবির ডাবিং নিয়ে তো একটা কন্ট্রোভার্সি ছিলোই। ওটা একটা দুঃখ। যে ঋতুপর্ণ আমার ডাবিংয়ের পরে ওটাকে চেঞ্জ করে অন্য জনকে দিয়ে ডাব করিয়েছিলেন। যাতে আমাকে নন এলিজেবেল করা যায় ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড থেকে। যদিও আমি সেটাকে অ্যালাও করেছিলাম। আমি যদি আড়াইশো ছবি করে থাকি তাহলে তার মধ্যে মাত্র একটা ছবিতে আমি ডাবিং করিনি। তবে একজন ব্রিলিয়ান্ট ডিরেক্টর ছিলো। আমরা সকলে তাকে মিস করছি।
প্র: আপনার সম সাময়িক যারা অভিনেতা ছিল। যেমন- প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, তাপস পাল, অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। তাদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল?
চিরঞ্জিৎ: সবার সঙ্গে ভালো রিলেশন ছিল। শুধু তাপসটা চলে গেল অসময়।
প্র: 'মেম্বার অফ লেজিসলেটিভ অ্যাসম্বলি'। তার জন্যে কী কোনও ভাবে একজন অ্যাক্টর ও ডিরেক্টরের ক্রিয়েটিভ স্পেসটা কমে গিয়েছে?
চিরঞ্জিৎ: হ্যাঁ, একটু কমে গিয়েছে। সময়টা কমে গিয়েছে। আমি যতই কম ইন্টারেস্টেড হই পলিটিক্স নিয়ে আমার একটা টাইম তো দিতেই হয়। ধরো, পনেরো বছর যদি এম.এল.এ পদে থাকি আমি তখন এই পুরো সময়টা তো আর ধোকা দিতে পারবো
না আমি। তাই মানুষের জন্য যা যা করলে ভালো হয় তাই করি আমি। কিন্তু আমি পলিটিশিয়ান নই আর হতেও চাই না। একজন এম.এল.এ হিসেবে যা যা কতর্ব্য তাই করি আমি।
প্র: আপনার আপকামিং প্রজেক্টগুলো কী কী?
চিরজিৎ: স্বপন পাঁজার দুটো ছবি রেডি হয়ে আছে। আর একটা ছবি আছে যেটার শুটিং হয়ে গিয়েছে।
এবার র্যাপিড ফায়ার রাউন্ডে চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী।
প্র: ফেভারিট পাস টাইম কী?
চিরঞ্জিৎ: এক্সটার্নাল এনার্জি ছাড়া কোনও কাজ করারই আমার ফেভারিট পাস টাইম। এছাড়াও কবিতা লিখি গান গাই।
প্র: নাইট আউল না আরলি রাইজার?
চিরঞ্জিৎ: নাইট আউল ঠিক নই। খুব যে আর্লি রাইজার তাও নয়।
প্র: মুভিজ না টিভি সিরিজ?
চিরঞ্জিৎ: মুভিজ।
প্র: ফেভারিট কুইজিন?
চিরঞ্জিৎ: অনেক কুইজিন রয়েছে। মেক্সিকান ফুড খুব ভালোবাসি। এছাড়াও একটা ইলিশের তেল দিয়ে ভাত খেতে ভালোবাসি। বাটার চিকেনটাও ভালো লাগে আমার।
প্র: রেনি পার্সন নাকি সানি পার্সন ?
চিরঞ্জিৎ: সানি।
প্র: লং ওয়ার্কস না লং ড্রাইভ?
চিরঞ্জিৎ: লং ড্রাইভ বেটার লাগে।