অনিন্দ্য একদিকে ‘হিটলার’ অন্যদিকে ‘রামকৃষ্ণ দেব’‘

থিয়েটার দিয়ে অভিনয় শুরু। তারপর টলিউড ও বলিউড দুই ইন্ডাস্ট্রিতেই কাজ করেছেন তিনি। বাংলা ছবির দর্শক এই অভিনেতা অনিন্দ্য পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় নামেই পরিচিত। ‘ব্যোমকেশ ফিরে এলো’, ‘বুনো হাঁস’-এর মতো বাংলা ছবি ছাড়াও ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী’ ও ‘কাহানি’ ছবিতে আমরা দেখেছি তাকে। ইশার খাতরি অভিনীত হিন্দি ছবি 'পিপ্পা' তে দেখা যাবে অনিন্দ্যকে। সম্প্রতি জিয়ো বাংলার 'আড্ডা উইথ অপ্সরা' অনুষ্ঠানে ধরা দিয়ে নিজের জীবনের নানা অভিজ্ঞতা কথা শোনালেন অনিন্দ্য।


প্র: ‘অনিন্দ্য পুলক ব্যানার্জী’ নামে তুমি পরিচিত। পুলকটা কী তোমার ডাক নাম?
অনিন্দ্য: কারুর কাছে এটা ফার্স্ট নেম আবার কারুর কাছে এটা সেকেন্ড নেম। যখন আমি থিয়েটার করতাম তখন আমাকে ঐ নামেই চিনত সকলে। তারপর যখন সিনেমার পর্দায় কাজ করা শুরু করলাম তখনও যারা আমাকে চিনত তাঁরা ‘অনিন্দ্য পুলক’ এই দুই নামেই ডাকতেন। তাই চেনার সুবিধার জন্যে ‘অনিন্দ্য পুলক’ নামটাই ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়।

প্র: অ্যাক্টর অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি ডিরেক্টর অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনটা তোমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়?
অনিন্দ্য: একটা সময় পর সবাই তো‌ নিজের কোনও কাজ করতে চায়। অভিনয় করাটাও নিজেরই কাজ কিন্তু ধরো তুমি ডিরেক্টর তখন তুমি নিজের ভাবনা রূপায়ণ করবে। তাই নিজের লেখা গল্প নিয়েও কাজ করেছি। আমি চেষ্টা করি অ্যাবস্ট্রাক্ট ছবি তৈরি করার।

প্র: আমরা শিল্পের ক্ষেত্রে বহুবার ‘আর্টিস্টিক ফ্রিডম’ শব্দটা শুনেছি। যখন তুমি ‘ক্যাপ্টেন অফ দ্য শিপ’ তখন তোমার সঙ্গে যে অভিনেতা বা অভিনেত্রীরা কাজ করে তাদের কী ‘আর্টিস্টিক ফ্রিডমটা দেওয়ার চেষ্টা করো?
অনিন্দ্য: আমি কোথাও হিটলার আবার কোথাও রামকৃষ্ণ দেব। আমি সাধারণত কাউকে কিছু বলি না বেশি টেকও নিই না। কিন্তু যখন ধরো কোনও একটা পয়েন্টে আমার এজ্যাক্টলি যেটা দরকার সেটা না পাওয়া পর্যন্ত আমি সারা বছর সময় নিয়ে নেব। ঐ জন্য আমি নিজেকে হিটলার ও রামকৃষ্ণ দেব বলি।

প্র: আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে টাইপ কাস্টিং শব্দটির খুব প্রয়োগ করা হয়। তোমাকেও কী টাইপ কাস্ট করা হয়েছে?
অনিন্দ্য: হ্যাঁ 'কাহানি' ছবিতে আমি ট্যাক্সি ড্রাইভারের রোল করেছিলাম তার পর একের পর এক ছবি ও সিরিয়ালে আমি ট্যাক্সি ড্রাইভারের রোল করেছি। তারপর 'বাইশে শ্রাবণ' ছবিতে পুলিশের রোল করার পর পুলিশ অফিসারের রোল করতে হয়েছিল অনেক ছবিতে। এছাড়াও রেপিস্ট, চোর, জোচ্চোরের চরিত্রে অভিনয় করতে হয় আমাকে। আমি এখন পর্যন্ত প্রায় ১০৮ টা ছবি করেছি যার মধ্যে ১০০টাতেই আমি নেগিটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছি। তবে এটাও ঠিক যে দর্শকদের চরিত্রগুলি পছন্দ হয়। তাই প্রোডিউসার বা পরিচালকদের দোষ দেওয়া যায় না।

প্র: শুনেছি তুমি অনেক বই পড়ো। তুমি লিটারেচার নিয়ে পড়াশুনা করেছ। এটা কি ছোটবেলা থেকেই ছিল?
অনিন্দ্য: না না আমি যখন বুঝতে পারি যে পড়াশুনা ছাড়া আমার আর গতি নেই তখন আমার বয়স তিরিশ বছর হয়ে গিয়েছে। আমার ক্লাস ওয়ান থেকে মাস্টার ডিগ্ৰি পর্যন্ত আমার কোনও অঙ্কের নাম্বার যোগ করলেও মনে হয় কুড়ি হবে না। কখনও তিন-চারের বেশি নাম্বার পাইনি আমি। চোতা করে পাশ করেছি। স্যারের বাড়ির কাজ করে দিতাম তার বদলে স্যারের স্ত্রী আমাদের পরীক্ষার প্রশ্ন দেখিয়ে দিত। আমরা যা করেছি তা এখনকার ছেলেমেয়েরা করতে পারবে না।

প্র: 'কাহানি' ছবিতে তুমি ট্যাক্সি ড্রাইভার বিমলের চরিত্রে অভিনয় করেছ। সেই ছবিতে বিদ্যা বালানের সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল তোমার?
অনিন্দ্য: আমরা শুটিংয়ের পর গল্প করতাম। একবার বিদ্যা বালান আমার সঙ্গে মনসামঙ্গল নিয়ে গল্প করছিল। বিদ্যা আমার সঙ্গে খুব সহজেই মিশে গিয়েছিল। তবে শুধু বিদ্যাই নন সুশান্তের সঙ্গে যখন আমি 'ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ' ছবিতে কাজ করেছিলাম তখন সুশান্তের সঙ্গেও অনেক বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে আমার। আমি ওকে একটা ছবিতে কাস্ট করবো ভেবেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখন সুশান্ত আর আমাদের মধ্যে নেই।

প্র: তুমি এক সঙ্গে সিরিয়াল ও সিনেমা দু'জায়গায় কাজ করছ। কী করে টাইম ম্যানেজ করো তুমি?
অনিন্দ্য: আজ আমার কাছে এটা একটা সিস্টেমে পরিণত হয়েছে। জানি না কখনও শুনেছ কি না, কিন্তু আমার মনে অভিজ্ঞতা একটা খারাপ জিনিস। যেমন- আমি মনে করি না যে সবার শিক্ষার দরকার আছে। এটা একটা মিথ। তবে অভিজ্ঞতাকে খারাপ বলছি কারণ আমার মনে হয় যে কোনও অভিজ্ঞতাই তোমাকে মেকানিক্যাল ও মনোটোনাস করে দেবে। আর একজন অভিনেতা হিসেবে তুমি প্রত্যেক চরিত্রে অভিনয় করেই আলাদা অভিজ্ঞতা বানাবে। কিন্তু সব চরিত্রের জন্য এক অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে না। তাই সব সময় সিস্টেমে চলাও যায় না। যেমন কিছু দিন আগেই 'পিপ্পা' নামের একটি হিন্দি ছবিতে কাজ করতে গিয়ে একটা সিরিয়ালে অভিনয় করা হল না। এরকম মাঝে মাঝে হয় একটা কাজ করতে গিয়ে অন্যটা মিস হয়ে যায়। তবে চরিত্রটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা দেখেই কাজটা সিলেক্ট করতে হয়ে।

প্র: অভিনয় করতে হলে তো অনেক পড়াশুনা করতে হয়।
অনিন্দ্য: হ্যাঁ, কিন্তু দুর্ভাগ্য যে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ অতো পড়াশুনা করে না। অভিনয় করতে হলে তোমাকে মেথড জানতে হয়। সেটা ইন্ডিয়ান মেথডও হতে পারে আবার ওয়েস্টার্ন মেথডও হতে পারে। ভারতীয় নাট্য শাস্ত্রেও অভিনয়ের দুটি মেথড রয়েছে।

প্র: তুমি পজিটিভ ও নেগেটিভ দুই ধরনের চরিত্রেই অভিনয় করেছ। তোমার নিজের কোনটা সবচেয়ে বেশি পছন্দের?
অনিন্দ্য: নেগেটিভ আমার বেশি পছন্দ। কারণ আমি  নেগেটিভ চরিত্রের এক অন্য ধারা নিয়ে এসেছিলাম বাংলা সিনেমায় যা আগে ছিল না। আমি পোলাইট ভাবে নেগেটিভ চরিত্রগুলিকে তুলে ধরার চেষ্টা করি।

প্র: তোমার প্রথম ফিচার ফিল্ম হল 'স্মাগ'। তোমাকে পেয়েছি আর 'ওয়াচমেকার' নিয়ে কথা বলবো না তা হয় না। এই ধরনের টপিক নিয়ে সিনেমা বানানোর আসল কারণটা কী?
অনিন্দ্য: আমার ছবিতে বেসিক্যালি এই সিভিলাইজেশনের বিরোধীতা করা হয়েছে। মানবজাতি আজ যে দিকে এগোচ্ছে তার বিরুদ্ধে কথা বলতে চেয়েছি আমি। যে সিভিলাইজেশন ড্রাগস দিয়েছে, যে সিভিলাইজেশন নিউক্লিয়ার ওয়েপেন দিয়েছে তার বিরুদ্ধে কথা বলা হয়েছে। আমি এই ছবির স্ক্রিনিং করিয়েছি এস.আর.টি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্টুডেন্টদের ভালো লেগেছে। তবে সবার হয়তো এই ছবি ভালো না লাগতে পারে।

প্র: এখন শোনা যাচ্ছে প্রযোজক ধরে নিয়ে আসতে পারলে লিড রোলে কাস্ট করা হচ্ছে। অনেক প্রভাবশালী অভিনেতা-অভিনেত্রীই বলছেন যে প্রযোজক খুঁজে দিতে পারিনি বলে আমরা কাজ পাচ্ছি না। এটা কী তোমাকে ফেস করতে হয়েছে?
অনিন্দ্য: এগুলোকে বলে ‘ব্লেম’ করা। নিজের ফেলিওর ঢাকার জন্য ব্লেম করা। অন্যকে ব্লেম না করে নিজেকে আপডেটেড হতে হবে। তবে এই কথাটা পুরোটা ফেলে দেওয়া যায় না। কিছুটা সত্য আছে। কিন্তু সেটা সব ফিল্ডেই থাকে।

প্র: তুমি ইন্ডাস্ট্রিতে কোন নায়িকাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছ?
অনিন্দ্য: স্মিতা পাতিল। আর হলিউডের ক্যাথরিন জিটা জোন্স।

থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ ফর জয়নিং আস অনিন্দ্য দা। লুকিং ফরোয়ার্ড টু মোর গল্প সেশন।
অনিন্দ্য : থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...