'৬০ এর পরে' নিয়ে আড্ডায় অমিত ও শৌভিক

থ্রিলার ধর্মী গল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে পরিচালক শৌভিক দে-এর নতুন ছবি '৬০ এর পরে'। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন অভিনেতা অমিত শেঠি। অভিনেতা প্রথম বাংলা ছবি এটি। সম্প্রতি জিয়ো বাংলার পর্দায় নিজের ছবি ও কর্ম জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন অমিত শেঠি ও শৌভিক দে।

প্র: শৌভিককে আমি জিজ্ঞেস করতে চাই। তোমার প্রথম ছবি হিসেবে ক্রাইম থ্রিলার কেন বেছে নিয়েছ তুমি?

শৌভিক : এটা বলা খুব মুশকিল। আমি যখন ওয়ার্ল্ড সিনেমা দেখা শুরু করলাম তখন বুঝলাম থ্রিলারধর্মী ছবি কলকাতায় খুব কম হয়। আমার মনে হয়েছে ওয়ার্ল্ড সিনেমায় থ্রিলার ধর্মী ছবি বেশি হয়। আমি সৃজিতের মুখোপাধ্যায়ের 'বাইশে শ্রাবণ' ও 'দ্বিতীয় পুরুষ' দেখেছিলাম। তাই আমি ভেবেছিলাম এই ছবি বানানোর কথা। অনেক ভুলভ্রান্তি হয়তো আছে কিন্তু থ্রিলার ছবির মাধ্যমে বড়ো কিছু করা ইচ্ছা ছিল আমার।

প্র: অমিতএটা তো তোমার প্রথম বাংলা ছবি। স্ক্রিপ্টে এমন কী নতুনত্ব দেখলে যার পর ছবিতে কাজ করার ইচ্ছা হল?

অমিত: বাংলা ছবি বেছে নেওয়ার মতো কিছু না। আমি যে কোনও ছবিতে কাজ করার আগে তার কনটেন্ট দেখি। আমি আগে অনেক থ্রিলারধর্মী ছবি দেখেছি। কিন্তু শৌভিক যখন আমাকে এই ছবির স্ক্রিপ্ট শুনিয়ে ছিল তখন আমার খুব ভালো লেগেছিল। "ইউ ক্যান ক্যাম্পেয়ার দিস স্ক্রিপ্ট উইথ হিচকক টাইপ মুভিজ।"

প্র: '৬০ এর পরে' এই নামটা কেন? ছবির এই টাইটেল থেকে আমরা কী জানতে পারব?

শৌভিক : এই প্রশ্নটা খুবই কমন। এমনকি আমার বাবাও জানতে চেয়েছে '৬০ এর পরে' নাম দেওয়ার কারণ। কিন্তু এখন যদি এর কারণ আমি বলতে যাই তাহলে এক ঘন্টার ইন্টারভিউ চার ঘণ্টার হয় যাবে।

অমিত: আমার এই ছবির নাম শোনার পর মনে হয়েছিল "তাহলে এরা কী আমাকে বুড়ো সাজাবে?" যে প্রশ্নগুলো আপনাদের মধ্যে আসছে সেই একই প্রশ্ন তখন আমার মধ্যেও এসেছিল।

শৌভিক : আমি যখন অমিতদা'কে এই ছবিতে কাজ করার জন্য বলেছিলাম, তখন অমিত আমাকে বলেছিল, “ছবির নামটা না একদম ‘অকোওয়ার্ড’ নাম। প্রযোজকও জিজ্ঞেস করেছিল এই নাম দেওয়ার কারণ। আমি ছবির নামে নতুনত্ব আনতে চেয়েছিলাম তাই এই নাম দিয়েছিলাম।

প্র: শুটিং ফ্লোরে তোমাদের কেমিস্ট্রিটা কেমন ছিল?

অমিত: আমাদের ছবিটা থ্রিলার ধর্মী ছবি হতে পারে। কিন্তু আমরা যখন শুটিং শেষ হয় যেত তখন আমরা মজা করতাম।

শৌভিক : আমরা শুটিংয়ের পর যখন রাতে বসতাম তখন স্ক্রিপ্ট নিয়ে আলোচনায় বসতাম। তখন অমিতদা মজা করে বলত ‘শৌভিক একটু চেঞ্জ হবে’। আমি প্রত্যেক দিনই ঐ গল্প চেঞ্জ করতাম।

অমিত: আমরা ইয়ার্কি করে বলতাম শৌভিক এটা চেঞ্জ হবে? আমি বলতাম একবার শুট করে দেখ না কেমন হয়। তুমি হয়তো বিশ্বাস করবে না কিন্তু ঐ সিনগুলো সত্যিই কাজে লেগে গিয়েছে।

শৌভিক : ছবিতে এই ধরনের অনেক সিন রয়েছে।

অমিত: যে কোনও কাজের মধ্যেই যদি দুটি মানুষের মধ্যে কেমেস্ট্রি বা বন্ডিং না থাকে তাহলে সেই কাজটা ভালো হয় না।

শৌভিক : শুধু অমিতদা নয়, ছবিতে যারা কাজ করেছেন প্রত্যেকের সঙ্গেই আমার বন্ডিং ভালো ছিল।

প্র: অমিত, তোমার জার্নি শুরু হয়েছিল থিয়েটার দিয়ে। তারপর তুমি 'চেজ নো মার্সি টু ক্রাইম' ছবিতে অভিনয় করেছ। বেস্ট অ্যাক্টর অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছ তুমি এর জন্যে। এছাড়াও 'ম্যায় মুলায়ম সিং যাদব' ছবির জন্য তুমি এভারেস্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছ। কিন্তু শুরুতে তোমার জার্নিটা কেমন ছিল?

অমিত: প্রথমেই বলে রাখি অভিনয় জগতে প্রবেশ করার আগে আমি একজন পাইলট ছিলাম। অ্যাক্টিং করার ইচ্ছা আমার শুরু থেকেই ছিল। কিন্তু আমার বাবার স্বপ্ন ছিল যে পাইলট হই। তাই আমি পাইলট হওয়ার কোর্স করলাম। তারপর আমি চাকরিও করতাম। তবে অভিনয় করার ইচ্ছাটা আমার যাচ্ছিল না। তাই থিয়েটার জয়েন করেছিলাম। 'চেজ নো মার্সি টু ক্রাইম' ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ তখনই পেয়েছিলাম। সেই ছবির পরিচালক আমাকে 'ম্যায় মুলায়ম সিং যাদব' ছবির জন্য কাস্ট করেছিল।

প্র: বাংলা ফিল্ম ও হিন্দির মধ্যে কোথায় কাজ করে তুমি বেশি কম্ফোটেবেল?
অমিত: যদি টিম ভালো হয় তাহলে সব জায়গায় তুমি কম্ফোটেবেল হবে। তাই আগে টিমের সঙ্গে বন্ডিংটা ঠিক করতে হবে। আমি কোনও পার্থক্য বুঝিনি। শুধু ভাষার পার্থক্য ওখানে আমরা হিন্দি ও মারাঠিতে কাজ করি এখানে বাংলায়। এছাড়াও যেহেতু আমি এখানেই বড় হয়েছি তাই বাংলা বলতেও আমার কোনও সমস্যা হয়নি।

প্র: তুমি কলকাতার কোন স্কুলে পড়াশোনা করেছ?
অমিথ: নর্থ পয়েন্ট সেকেন্ডারি বোডিং স্কুল।

প্র: তোমার বাড়িতে কে কে আছেন?
অমিত: বাড়িতে আমার মা আছে, বাবা প্রয়াত হয়েছেন। এছাড়াও আমার স্ত্রী ও সন্তান আছেন।

প্র: সন্তানের বয়স কত?
অমিত: আট বছর।

প্র: সিনেমা ছাড়া তুমি কী করো?
শৌভিক: আমার বিয়ে হয় নি এখনো।

প্র: সিনেমা পরিচালকদের অনেক ফ্যান রয়েছে। প্রচুর মেয়েরা এই সময় আশেপাশে থাকতে চায়। তোমার কী কেউ আছে?
শৌভিক: আমার মেয়ে বন্ধু আছে কিন্তু কোনও গার্লফ্রেন্ড নেই।

প্র: গার্লফ্রেন্ড নেই কেন?
শৌভিক: ভালো লাগে না।

প্র: তাহলে তোমার কী ভালোলাগে?
শৌভিক: বন্ধু ভালো লাগে। সিনেমাটাই আমার বউ।

প্র: পার্টি করো?
শৌভিক: একটু দূরে থাকার চেষ্টা করি। কারণ সময়টা শুধু সিনেমার গল্প লিখতে কাজে লাগে।
অমিত: আমি পার্টি করি। প্রত্যেক উকেন্ডেই আমি বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করি, পাবে যা্‌ ডিস্কোতে যাই।

প্র: কোন এমন ক্যুইজিন আছে যেটা তুমি খেতে ভালোবাসো?
অমিত: আমার নর্থ ইন্ডিয়ান ফুড খেতে খুব ভাল লাগে।

শৌভিক: আমি সাধারণ বাঙালির মতো ভাত, ডাল, আলু সেদ্ধ ও আলু পোস্তো এসব খেতে ভালোবাসি।

প্র: অভিনেত্রী পিয়ালী মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্ন- ছবি শুটিংয়ের সময় আমি দেখতাম শৌভিক আর অমিত গায়েব হয়ে যেত। কোথায় যেতে তোমরা?
শৌভিক : আমারা যখন‌ শুটিং ফ্লোরে থাকি। তখন বাইরে বেরিয়ে গিয়ে এক সঙ্গে সিগারেট খাই। টেনশনে থাকি তাই।
অমিত: অনেক সময় ফ্লোরের মধ্যে সবাই শুটিংয়ের জন্য রেডি হয় যেত। কিন্তু তখন আমাদের দুজনকে খুঁজে পাওয়া যেত না। তখন আমাদের স্মোকিং জোনে পাবে।

প্র: শৌভিক তোমার প্রথম ক্রাশ কে?
শৌভিক: প্রথম ক্রাশ শ্রাবন্তী। কিন্তু অভিনয় করাতে চাই পরেই ছবিতে পাওলি দামকে দিয়ে।

প্র: বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কোন অভিনেতাকে তুমি কাস্ট করবে?
শৌভিক: দুজন রয়েছে যার মধ্যে অমিতদা এছাড়াও রয়েছে প্রসেনজিৎ ও দেব।

প্র: ফিল্ম ছাড়া কী কাজ তুমি করতে ভালোবাসো?
শৌভিক: আমি দিনে বারো চোদ্দো ঘন্টা সিনেমা নিয়ে থাকি। অন্য কিছু করার সময় পাই না। শুধু সিনেমা নিয়েই থাকতে ভালো লাগে।

প্র: তোমার প্রিয় ট্রাভেল ডেসটিনেশন কী?
শৌভিক: সেই রকম কিছু নেই তবে পাহাড় বেশি ভালো লাগে আমার।

প্র: তুমি যে কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছ তাদের কাকে কোন স্থানে রাখবে?
অমিত: আমি শৌভিককেই এক নম্বরে রাখব।

প্র: মানুষ হিসেবে, বাবা হিসেবে, স্বামী হিসেবে কাকে কীভাবে মার্কিং করবে তুমি?
অমিত: অ্যাক্টার হিসেবে আমি মার্ক করিনি। মানুষ হিসেবে আমি খুব হ্যাম্বেল। আর বাবা হিসেবে খুব ভাল বলবো না আমি। স্বামী হিসেবে খুব ভাল মার্ক করব না। কারণ আমি স্ত্রীকে টাইম দিতে পারি না।

প্র: ট্রাভেল করতে তুমি ভালোবাসো?
অমিত: হ্যাঁ, ভালোবাসি। কিন্তু সময়ের অভাবে করতে পারি না।

প্র: তুমি মুম্বইয়ের পানি পুরি না কলকাতার ফুচকা কোনটা তোমার বেশি পছন্দ?
অমিত: সব সময় ফুচকা। মুম্বইতেও কলকাতার ফুচকার জনপ্রিয়তা রয়েছে।

প্র: মুম্বইয়ের বড়া পাও না কলকাতার কচুরি?
অমিত: কলকাতার কচুরি।

প্র: বিরিয়ানি কোথাকার ভালো লাগে?
অমিত: কলকাতার বিরিয়ানি বেটার।

প্র: অমিতের কী চেঞ্জ করতে চাও তুমি?
শৌভিক: অমিতদার সব ভাল। কিন্তু খুব স্ট্রাগেল করে। কারণ শুটিংয়ের পরেই সে রাত বারোটা পর্যন্ত বসে থাকে।

প্র: শৌভিকের কী চেঞ্জ করতে চাও তুমি?
অমিত: আমি চাই শৌভিক সবার সঙ্গে মিশুক।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...