তিনি কখনও ‘সাঁইবাবা’ কখনও ‘লোকনাথ’। অতি সম্প্রতি দর্শক তাঁকে চিনছে বোমক্যেশ বক্সির বন্ধু ‘অজিত’ হিসেবে। ওয়েব সিরিজ ব্যোমকেশ ও পিঁজরাপোলে-তিনি সত্যান্বেষীর সঙ্গী। 'জিয়ো আড্ডা উইথ অনিন্দিতা সরকার' শোয়ে আজ অতিথি অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়। পর্দায় রিল লাইফের ‘ভাস্বর’কে দর্শকরা সবাই জানেন, কিন্তু পর্দার ওপারে রিয়েল লাইফে কেমন মানুষ তিনি, অচেনা ‘ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়’এর মনের কথা শুনুন তাঁর মুখেই
প্রঃ অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছেপূরণের জন্য কি বাড়ির সাপোর্ট পেয়েছিলে নাকি লড়াই করতে হয়েছিল?
ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ঃ খুব লড়াই করতে হয়নি কারণ ছোট থেকেই অভিনয় করতে ভীষণ পছন্দ করতাম। স্কুল-কলেজ সব জায়গাতে অভিনয় কর ছি। বাব-মা কখনও বলেননি ‘করিস না’। বড় হতে চাকরি করলাম। চাকরি করতে করতে ঠিক করলাম অভিনেতা হব। তখনও ওঁরা বলেছিলেন নিশ্চয়ই করবে। তবে যতদিন পর্যন্ত না অভিনয় দুনিয়ায় নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছ ততদিন চাকরিটা ছেড়ো না। আমিঅসেটা মাথায় রেখেছিলাম। যখন দেখলাম পারব, তখন চাকরি ছেড়ে পাকাপাকিভাবে অভিনয়ে ঢুকে পড়লাম।
প্রঃ তোমার পরিবারের একটা ঐতিহ্য আছে। সেখানে একটা ভাল এস্ট্যাবলিমেন্টের দরকার, সমস্যা হয়নি?
ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ঃ আমার বাড়িতে অভিনয়ের সঙ্গে কারুর কোনওদিন যোগাযোগ ছিল না। আমার বাবার আগের পরের আমার প্রজন্মের সবাই এঞ্জিনিয়র। বাবারও একটা সুপ্ত বাসনা ছিল যে ছেলে এঞ্জিনিয়র হোক, কিন্তু আমি অঙ্কে এতোটাই কাঁচা যে এঞ্জিনিয়রিং-এর ধারকাছেও পৌঁছতে পারিনি। আমাদের বাড়িতে অভিনেতা একটা বড় চমক। বাবামার সাপোর্ট পেলেও আত্ময়দের কটুক্তি শুনতে হয়েছে। তবে সে সব আমরা কখনও আগ্যে মাখিনি। কারণ আমার অভিনয়ের স্বপ্নটা খুব চোখের সামনে ছিল।
প্রঃ তুমি তো ছবি সিরিয়াল সব মাধ্যমে কাজ করেছ, তোমার পছন্দের মাধ্যম কোনটা?
ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ঃ আমার পছন্দের মাধ্যম অভিনয়। যাত্রা করা এখনও হয়নি। যাত্রাতে কিছু ব্যাপার আছে। যেমন রাতে অভিনয়। আমি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি। সারারাত ট্রাভেল করে এসে পরের দিন শ্যুটিং করতে এখনও পারব না। ভবিষ্যতে কী হবে জানিনা।
প্রঃ বিভিন্ন অভিনয়ের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা তোমার। সত্যজিৎ রায়ের পোশাক পরে একবার অভিনয় করেছিলে…
ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ঃ হ্যাঁ, ঘড়ি, সোয়েটার আর জামা। আমি বাবুদা মানে সন্দীপ রায়ের সঙ্গে রইয়াল বেঙ্গল রহস্য আর যেখানে ভূতের ভয় করেছিলাম। প্রথম ছবি করতে গিয়ে একবার একটা জামা পরেছিলাম জানতাম না জামাটা কার। বৌদি বললেন ‘তুমি যে জামাটা পরে আছ, এটা সত্যজিৎ রায়ের’! ঘড়িটাও…পরের ছবি যেখানে ভূতের ভয়। কালিম্পং-এ াউৎডোর শ্যুটিঙে গিয়ে স্যারের সোয়েটার আর শার্ট …
প্রঃ ইদানিং তোমাকে দেখছি খুব নেগেটিভ রোলে। অথচ একটা সময় তোমার সাংঘাতিক ‘গুড বয়’ ইমেজ ছিল, এখন নেগেটিভ রোলে অভিনয় করতে মজা পাচ্ছ?
ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ঃ পাচ্ছি। কিন্তু এখন মনে করছে চেঞ্জ করলে ভাল হয়। লোকনাথের পর থেকে টানা করে যাচ্ছি। দেখা যাক কী হয়…
প্রঃ অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়কে সবাই চেনে, মানুষ ভাসবর কেমন? তোমার দুটি দিক সামনে আসছে লেখক আর সোশ্যাল ওয়ার্কার, কোভিদে বেশি দেখা গিয়েছিল, এটা কি আগে থেকেই ছিল?
ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ঃ মা চলে গেলেন ২০১৭তে। তারপর মনে হল মায়ের নামটা কী করে আমি বাঁচিয়ে রাখতে পারব তখন আমি আর আমার কাজিন মিলে ছোট্ট একটা এনজিও শুরু করি। প্রথমে পুরনো জামাকাপড় সংগ্রহ করে কলকাতা আর আশেপাশে দিতাম। আমার গাড়ির ডিকি]তে বোঝাই করে রাখা থাকত। শীতে রাস্তায় মানুষ কেউ কষ্ট পাচ্ছে দেখতে দিতাম। আমফানে কিছু কাজ করলাম। তারপর দ্বিতীয় লকডাউনের সময় মনে হল রাস্তায় নামতে হবে। খাবারের জন্য হাহাকার, কান্না কী ততদিনে বুঝে গেছি। যে সময়টায় বড় হয়েছি এত খারাপ সময় দেখিনি। দক্ষিণ কলকাতায় এমন কোন জায়গা নেই যেখানে খাবার দিতে যাইনি। কাশীরে কাজ কর ছি। বাঁদর লেঙ্গুররা কাশ্মীরের রাস্তায় খাবার না পেয়ে কাঁদছে। মানেকা গান্ধীকে চিঠি লিখেছিলাম। আমি এখান থেকে সাহায্য পাঠিয়েছিলাম। উনিও ত্রাণ ব্যবস্থা করেছিলেন।
প্রঃ তোমার কাশ্মীরের প্রতি প্রচন্ড ভালোবাসা, সেটা নিয়ে বইমেলায় বই প্রকাশিত হয়েছে…
ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ঃ ‘অন্য উপত্যকা’ বইমেলাতে প্রকাশিত আমার লেখা থ্রিলার। আমার বন্ধুবন্ধব চেনাজানা ছাড়াও অনেক অজানা অচেনা মানুষ আমায় ট্যাগ করে রিভিউ দিয়েছেন বইয়ের। বলেছেন আমাদের কাশ্মীর ঘোরা নয় কিন্তু এই বই পড়ে মনে হল কাশ্মীরের অলিতে-গলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এটা আমার কাছে বড় পাওনা।
প্রঃ ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়কে দেখেমনে হয় তার একদম রাগ হয় না। তার রাগের অভিব্যক্তি কেমন?
ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ঃ না না, হয়। আমি তো মানুষ।তবে খুব কম। মাঝে মাঝে শ্যুটিং-এ হয়। আমি খুব পাঙ্কচ্যুয়াল মানুষ। সময় না মেনে চললে অসুবিধা হয়।