ছোট্ট মেয়ে ‘চুমকি’ থেকে শীর্ষ নায়িকা ‘দেবশ্রী’ মাঝখানে অনেকটা পথ, অনেকগুলো দিন। ঠিক এতগুলো দিন ধরেই তাঁকে দেখেছে বাঙালি দর্শক। আদর, ভালবাসা, খ্যাতি, সম্মান পেরিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির আবেগ। বাংলা পেরিয়ে নিজস্ব ছাপ রেখেছেন হিন্দিবলয়েও। ইতিহাস গড়া হিন্দি মেগা 'মহাভারত'-এ সত্যবতীর ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল তাঁকে। কিন্তু রাজনীতির ময়দানে পা দিয়ে প্রায় দশ বছর সিনেমার দুনিয়া থেকে দূরে চলে গিয়েছিলেন। অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়ের সেই সময়টা কেমন ছিল জানালেন 'জিয়ো আড্ডা উইথ অনিন্দিতা সরকার' অনুষ্ঠানে।
প্র: তুমি অনেক বছর গ্যাপের পর আবার ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরেছিলেন। টেলিভিশনে কাজ করলে। কিন্তু যারা ফিল্মের টপ হিরোইন তারা সাধারণত টেলিভিশনে কাজ করেন না। তোমার কেন মনে হল টেলিভিশনে কাজ করি?
দেবশ্রী রায়: আমি যখন ছবি করতাম তখনও আমি টেলিভিশনে কাজ করেছি। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে 'দেনা পাওনা'তে কাজ করেছিলাম। এছাড়াও 'নগরপারে রূপনগর', 'লৌহকপাট' ও হিন্দিতে একটা প্রজেক্ট করেছিলাম। যখন আমি রমরমিয়ে ছবি করছি তখন এই সব কাজগুলো করেছিলাম। আমি কখনও বড় পর্দায় বা ছোট পর্দায় বলে ভাগ করিনি যেটা ভাল চরিত্র মনে হয়েছে সেটাই করেছি। আমার ‘জ্যোতিরানী’ চরিত্রটা সেই সময় খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। যে জন্য আমার বাড়িতে চিঠি আসত জ্যোতিরানীর নামে। সিরিয়ালের যে একটা চাপ থাকে সেটা আমি রিয়েলাইজ করলাম ডেইলিসোপ করতে গিয়ে।
প্র: তোমাকে বাংলায় আমরা প্রচুর কাজে দেখেছি। মুম্বইতেও তোমার একটা স্ট্রং কানেকশন রয়েছে এমন একটা পরিবারের সঙ্গে। তাহলে আবার কবে হিন্দি ছবিতে দেখা যাবে তোমাকে?
দেবশ্রী রায়: রানীর আগেও আমি অনেক ছবি করেছি। তবে এই মুহূর্তে আমি জানি না। কিন্তু ভাল অফার পেলে নিশ্চই করব।
প্র: তোমাকে রাজনীতিতে নিয়ে আসা হয়েছিল। তুমি মানুষের উপকার করবে বলেই রাজনীতির মঞ্চে গিয়েছিলে। সেখানে তোমার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
দেবশ্রী রায়: আমি যতদিন ছিলাম মানুষের জন্য করেছি। তুমি যদি আমার এলাকায় যাও, যখন আমি প্রথম গিয়েছিলাম কিচ্ছু ছিল না। না লাইট না রাস্তা না জল। দেখে আমার সত্যি চোখে জল চলে এসেছিল। এমন এমন রাস্তা দেখেছি যেখানে গাড়ি যায় না। বাইকে করে যেতে হত। তবে আমি স্যাটিসফাই যে যতটা সম্ভব করার আমি করেছি।
প্র: কিন্তু একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিসেবে তোমার কী মনে রাজনীতিতে যাওয়া উচিত ছিল?
দেবশ্রী রায়: আমি দশ বছর কাজ করে রিয়েলাইজ করেছি এটা আমার কাজ নয়। এটা আমার ব্যক্তিগত। আমি অন্যদের কথা বলছি না। আমি কনফেস করছি যে দশ বছর আমি নিজের কাজটাকে নেগলেক্ট করেছি। এখন আমি চেষ্টা করেছি ভাল কাজ করার।
প্র: কলকাতায় কিছু দিন আগেই 'কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল'-এর আয়োজন করা হয়েছিল। তোমাকে সেখানে আমরা পেলাম না কেন?
দেবশ্রী রায়: আমি ছোটবেলা থেকে আজ অবধি মানুষের ভালবাসা ও সম্মান পেয়েছি। তাই যেখানে আমি যোগ্য সম্মান পাই না সেখানে আমি যাই না।
প্র: ইন্ডাস্ট্রিতে অমুক দাদা, অমুক দিদির আন্ডারে থাকলে কাজ পাওয়া যায়। তারা মনে করেন তারাই ইন্ডাস্ট্রিকে চালাচ্ছে। তুমি এই বিষয়ে কী বলবে?
দেবশ্রী রায়: আমি যেসব মানুষকে দেখে বড় হয়েছি, যে সব পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছি- অপর্না সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ, তরুণ মজুমদার মতো পরিচালকরা আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন কাজ করার জন্য। এখন মনে আমি একটা অদ্ভুত পরিবেশে বাস করছি। এই ইন্ডাস্ট্রিটাকে আমি যেন চিনতে পারছি না। যে ভাল করে দাঁড়াতেই পারে না সে কাজ পেয়ে যাচ্ছে। বাংলা ছবিকে আমি খুব ভালবাসি তাই বম্বেতে অনেক অপোরচুনটি পেয়েও আমি যাইনি। কিন্তু কোথায়, ইন্ডাস্ট্রির যদি এই হাল হয় তাহলে বাংলার গর্ব কোথায় থাকবে!
প্র: দিদি তুমি অ্যানিমেল রাইটস নিয়ে কাজ করো, এটা নিয়ে তোমার ভবিষ্যতে আর কী করার প্ল্যান রয়েছে?
দেবশ্রী রায়: আমি প্রায় ১৪ বছর ধরে এই নিয়ে কাজ করছি। আমার এনজিও'র নাম ‘দেবশ্রী রায় ফাউন্ডেশন’। আমি সব সময় চেষ্টা করি ওদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। আর এটাই বোঝানোর চেষ্টা করি যে শুধু মানুষ একা বাঁচবে না, তার সঙ্গে পশু-পাখিও থাকবে। আসলে মানুষ তো স্বার্থপর হয়ে গিয়েছে তাই বোঝে না। আমি সচেতন করানোর চেষ্টা করি সকলকে। কিন্তু আগে যেমন অত্যাচার হত, সেটা অনেকটাই কমেছে। এখন অনেক মানুষও সর্তক হয়েছে।
প্র: তোমাকে কিছু চেঞ্জ করতে বলা হলে কী চেঞ্জ করতে?
দেবশ্রী রায়: আমি শিল্পী হিসেবে ভাল কাজ করতে চাই। আমি অন্ধের মতো কাজ করতে চাই না। ভাল গল্প ভাল চরিত্র পেলেই সেটাকে ‘হ্যাঁ’ বলব। সেই চরিত্রে অভিনয় করে আমি আমার ফ্যানদের খুশি করতে চাই।