জিয়ো আড্ডা উইথ অনিন্দিতা সরকার' শোয়ে আজ অতিথি অভিনেতা আরিয়ান ভৌমিক (Aryann Bhowmik, Actor)। কেরিয়ার শুরু হয়েছিল 'চলো পাল্টাই' ছবিতে, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ‘গৌরবে’র ভূমিকায় তাঁর অভিনয় মন কেড়েছিল দর্শকদের। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় কাকাবাবু সিরিজের সন্তুও তিনিই। অভিনয় প্যাশন। জীবনের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী হয়ে উঠেছে লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন। সেই পথে চ্যালেঞ্জ কম আসেনি। কীভাবে বাধা পার হলেন? খোলামেলা আড্ডায় জানালেন তাঁর জীবনে গল্প
প্রঃ টিন-এজে তোমার কেরিয়ার শুরু, এই বয়সে সিনেমায় কেরিয়ার শুরু করতে গেলে অনেক সময় অভিভাবকরা সহজে মানতে চান না। তুমি কীভাবে বাড়ির সাপোর্ট পেয়েছিলে?
আরিয়ান ভৌমিকঃ আমাদের প্রফেশনটা অনিশ্চিত, সাফল্য আসবে কি না তার কোনও নিশ্চয়তা নেই, কিন্তু আমার জার্নিটা খুব অন্যরকম। আমি বাবা মার থেকে টোটাল সাপোর্ট পেয়েছি। সাংঘাতিকভাবে পাশে থেকেছেন। ইনফ্যাক্ট আমার সিনেমার প্রতি ভালবাসাটা এসেছেই বাবার মাধ্যমে। দর্শক হিসেবেও বাবা সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা করেছে। সেভাবেই আমার বড় হয়ে ওঠা। বাবার থেকেই সিনেমার প্রতি ভালবাসা জন্মায়। বাবা আমার মেন্টার। আমি যা কিছু করতে পেরেছি সবটাই বাবা-মার জন্য। এই সাপোর্ট ছাড়া কোনও কিছুই সম্ভব ছিল না। আমাদের বাড়িতে সিনেমা ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে আলোচনাও হয় না।
প্রঃ পড়াশোনা আর সিনেমার ব্যালেন্স কীভাবে করলে?
আরিয়ান ভৌমিকঃ ব্যালেন্স করা খুব কঠিন ছিল। এমন সিরিয়াস পরিস্থিতি আসে যখন বেছে নিতে হয় কী করবে। একটা হয় প্ল্যান বি রেখে এগোনো। আমাকেও বাড়িতে সেই পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সেটাই নিরাপদ। কিন্তু আমি নিজে নিজের পথ বানাতে চেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল একবারে ঝাঁপানোটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি সিনেমা ছাড়া আর কিছু করব না। যদি স্পট বয় হতে হয় তাহলেও ঠিক আছে। কিন্তু যাই করি তা যেন সিনেমার সঙ্গেই থাকে।
এই পেশা মেন্টাল চ্যালেঞ্জএ ভর্তি। সার্ভাইভ করার জন্য পাহাড়ের মতো শক্ত হতে হবে। কমবয়সী হোক বা সিনিয়র সকলের কমবেশি ডিপ্রেশন আসে। সেখানেই আমি বলব আমার মনে হয়েছে বড় হয়ে ওঠার শিকড় ভুললে হবে না। সেখানে যত বেশি জুড়ে থাকবে তত লড়াই করা সহজ হবে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথিবীর মোকাবিলা করার চেয়ে ঘরের মানুষকে পাশে নিয়ে যুদ্ধ করা সহজ। নোঙর শক্ত থাকতে হবে।
প্রঃ এখন এত চ্যানেল, ওটিটি কিন্তু তবু অনেক ছেলেমেয়ে অনেক রকম সাফার করছে, তোমার কী মনে হয় কাজের অপশন বেশি হলেও নিজেকে তৈরি করাটা জরুরি?
আরিয়ান ভৌমিকঃ হান্ড্রেড পার্সেন্ট! যাই করো না কেন রুট লেভেল স্ট্রং থাকতেই হবে। এখন অপশন যেমন বেড়েছে মানুষের ধৈর্য তেমন কমেছে। ভিওয়ার্স থেকে পারফরমার সকলের। চটজলদি এত কন্টেন্ট পেয়ে যাচ্ছে।
প্রঃ প্রসেনজিৎ থেকে শুরু করে এমন এমন মানুষদের কাজ করেছ, চল পাল্টাই অসম্ভব ভাল একটা সিনেমা, সন্তু অনেক বার করেছ, জঙ্গল থেকে মরুভূমি কঠিন কঠিন শুটিং স্পট, কোনও বিশেষ ঘটনা মনে পড়ে?
আরিয়ান ভৌমিকঃ আমি আগে তোমার প্রশ্নের প্রথম পার্টের উত্তর দিই। সত্যিই এমন এমন মানুষদের সঙ্গে কাজ করেছি যে সত্যিই আমি ভাগ্যবান যে এরকম স্কুলিং এর সুযোগ হয়েছে। সেই স্কুলিংটাই আমায় তৈরি করেছে। 'কাকাবাবু' অনেক কারণে ভালবাসতাম। অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসি। মিশর রহস্য আমার প্ৰিয় পিরামিডের জন্য। ছোটবেলা থেকে এরিক ফন দানিয়েনকে নিয়ে খুব পড়াশোনা করতাম। সেখান থেকে আমার প্রথম বিদেশ যাওয়া মিশর, পিরামিডের দেশে। তারওপর আবার সন্তু করছি। ভাঙা পিরামিডে দিন কাটিয়েছি, ইজিপশিয়ান ফোক লাইভ রেকর্ড করেছি। মরুভূমিতে মাফিয়ারা ধাওয়া করেছিল আমাদের। আফ্রিকা থেকে সুইজারল্যান্ড এরকম নানা অভিজ্ঞতা...
প্রঃ তুমি তো খুব ফিটনেস ফ্রিক, এখন যারা নতুন অভিনয়ে আসছে তাদের জন্য কী বলবে?
আরিয়ান ভৌমিকঃ ফিটনেস অভিনয়ের জন্য জরুরি তো বটেই, কিন্তু আমার ফিটনেস জার্নি শুরু অনেক আগে থেকে, সেই ২০০৫-এ। কারণ আমি মার্শাল আর্ট আর্টিস্ট। ২০১০-এ ব্ল্যাক বেল্ট পাই। আগে প্রতিযোগিতায় যেতাম। ক্যারাটেকে আমার দ্বিতীয় মা বলি। সাংঘাতিক প্যাশনের জায়গা। অভিনেতাদের অভিনয়ের প্রয়োজনেই বিভিন্ন রকম ট্রান্সফর্মেশনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। কখনও রোগা কখনও মোটা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে হাতে সময় বিশেষ থাকে না। তাই ফিট থাকতে হবে। হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করতে হবে।
প্রঃ তুমি বলিউড প্রজেক্ট করছ, সেটা একটু বলো...
আরিয়ান ভৌমিকঃ আমার প্রথম বলিউড প্রজেক্ট দিবাকর ব্যানার্জীর ডিটেক্টিভ ব্যোমকেশ বক্সি, তারপর আমি অমিত শর্মার 'ময়দান' করেছিলাম। রিলিজের জন্য অপেক্ষা করছে। আর অভিনব দেও-এর পরিচালনায় জি ফাইভের ওয়েব সিরিজ প্রজেক্ট 'ব্রাউন' করলাম। করিশমা কাপুর, সুরিয়া শর্মা আছেন।
প্রঃ বিদেশেও কাজ করছ তুমি?
আরিয়ান ভৌমিকঃ দুটো প্রজেক্ট শুট হয়েছে। একটা রবীন নাম্বিয়ার আর একটা মৈনাক ভৌমিক। আরও বেশ কিছু আছে পাইপলাইনে…