বারাণসীতে শ্যুটিং কেমন ছিল? আড্ডায় টিম ‘বারাণসী জংশন’

ছকভাঙ্গা থ্রিলার ‘বারাণসী জংশন’। বারাণসীর অলি-গলি আর ঘাটে শ্যুটিং। কেমন ছিল সেসব রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। সেই গল্প নিয়েই ‘টলিকথা’র আড্ডায় মুখোমুখি টিম ‘বারাণসী জংশন’ অমৃতা চট্টোপাধ্যায়, অর্ণব রিঙ্গো বন্দ্যোপাধ্যায়, ঐন্দ্রিলা বন্দ্যোপাধ্যায় ।

প্রঃ বারাণসীর অলিতে-গলিতে রহস্য, কী বলবে দর্শকদের?

অমৃতাঃ আমি তো ভাবছিলাম ডিরেক্টর বললে বেটার হয়। কিন্তু হ্যাঁ, দারুণ একটা গল্পের সঙ্গী করে এই ডিরেক্টর এবং দারুণ একটা টিম আমাদের বেনারসে নিয়ে গিয়ে ফেলেছেন এবং দারুণ একটা অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে আমাদের শ্যুট হয়েছে। থ্রিলার বললেই দেখবে আমাদের মাথায় যে চেনা ছকটা আসে দুমদাম কয়েকটা খুন হল, তারপর থ্রিলার মানেই সেটা রিয়েলিস্টিক হবে সেটা নয়। তারওপর পটভূমি যেহেতু উত্তরপরদেশ সুতরাং সেখানকার মানুষ, রাজনীতি একেবারে আলাদা। বারাণসীকে বেস করে এরকম পলটিক্যাল থ্রিলার আমি তো দেখিনি। তাই মনে হয় দর্শকও নতুন কিছু দেখতে পাবে।

প্রঃ ঐন্দ্রিলা, তুমি বলো কেমন ছিল বারাণসীতে কাজের অভিজ্ঞতা?

ঐন্দ্রিলাঃ ডিফিকাল্ট তো ছিলই। কারণ পুরোটাই আমরা বারাণসীতে শ্যুট করেছিলাম। টানা ১০-১৩ দিন এবড়োখেবড়ো রাস্তা দিয়ে হাঁটা, আমরা ‘চৌষট্টি ঘাট’ নামে একটা জায়গায় ছিলাম। প্রতিদিন সবাইকে ৬৪টা সিঁড়ি ভেঙে ওঠানামা করতে হত, ওখানে যেহেতু ঘাটই একমাত্র যোগাযোগের ব্যবস্থা, সেই ঘাট পেরিয়ে যেতে হত।

অমৃতাঃ ওখানে ট্রান্সপোর্টেশনের কোনও গল্প নেই, পুরোটাই পায়ে হেঁটে এক লোকেশন থেকে আর এক লোকেশনে যাওয়া নয়ত, নৌকা।

ঐন্দ্রিলাঃ প্রতিদিন ১০-১২ কিমি শুধু হেঁটেছি। দৌড়েছি। শ্যুট করেছি। আমাদের বোট ছিল। আবার উল্টোদিকে একটা বালিয়াড়ি, সেখানে গিয়েছি, বালিতে হেঁটেছি। ৫-৬ কিমি হেঁটে হেঁটে যাওয়া...

প্রঃ তার মানে তো ডিরেক্টরের সাংঘাতিক চাপ ছিল, ছিল কি?

অর্ণব রিঙ্গোঃ আমার চাপ নেই। আমি চাপ দিয়ে অভ্যস্ত। আমার সঙ্গে যাঁরা কাজ করছেন, অনেক বছর ধরে সঙ্গে আছেন তাঁরা অভ্যস্ত। আমরা বেনারসে দুটো শ্যুটিং করে এসেছি। ইন্টারেস্টিং যেটা- এটা অমৃতার প্রথম কাজ ছিল। যারা আগে বেনারস যায়নি তাদের বেনারস নিয়ে একটা ভিজ্যুয়াল থাকে। কিন্তু তারা যখন সেখানে পৌঁছায় খুব অন্যরকম দেখে। আমাদের কোনও রেস্ট ছিল না। সকাল ৫টা থেকে কল থাকত। রাত ১২-১টা অবধি শ্যুটিং করেছি পরে আবার। ওকাহ্নে ১৬-১৭ কিমি করে হাঁটা থাকত। অ্যাকট্রেসদের জন্য এটা ছিল বেশ শক্ত কাজ। ওদের নিজেদের ঠিক রাখতে হচ্ছে, আবার হাঁটতে হচ্ছে, কস্টিউম চেঞ্জ করতে হচ্ছে আবার চলে আসতে হচ্ছে। So Over all iyt was a difficult Shoot. এডিটের পর ফিল্মটা যখন দেখলাম It was a great shoot. 

প্রঃ অমৃতা, চরিত্রটা একদম ডিফিকাল্ট শেড। কী বলবে?

অমৃতাঃ দ্যাখো, সাংবাদিক সে যদি কলকাতায় কাজ করে একরকম, উত্তরপ্রদেশে যদি সে কাজ করে বারাণসীর মতো একটা জায়গায়, ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট যারা হয় তাদের কোনও একটা নির্দিষ্ট জায়গায়কাজ করার যে কমফোর্ট সেটা এভাবে পাওয়া যায় না। এই চরিত্রটা সুপ্রিয়া চৌধুরী সে যেহেতু ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট এমন কোনও একটা অ্যাসাইনমেন্ট হয়ত সে নেয় যেটা নিয়ে সে খুব খোলাখুলি চর্চা করতে পারছে না। এই ব্যাপারটা চরিত্রটার মধ্যেই আছে।

যেহেতু আমার প্রথমবার বারাণসী, ওখানকার ব্যাপার স্যাপার আমি ‘ফেলুদা’তে দেখেছি। গুগলে দেখেছি কিন্তু রিঙ্গোদারা এতবার ঘুরে এসেছে তো আমি প্রচুর ফিডব্যাক পেয়েছি। যাওয়ার আগে অভিজ্ঞতা একরকম আর গিয়ে অভিজ্ঞতা আর একরকম। ওখানে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে, কিন্তু জায়গাটার অদভুত চার্ম আছে। একটা মিস্টিক সিটি। অনেক আশ্চর্য ঘটনা ঘটে। যে কারণে হয়ত রাত্রিবেলা শুট করে এসেছি, খুব টায়ার্ড  সকালে উঠে দেখছি ডিরক্টর আর টিম রেডি। আর তারা লাফিয়ে লাফিয়ে শ্যুটিঙ্গ করতে যাচ্ছে। তারা প্রচন্ড চার্জড আপ, তখন তুমিও কিছু ভাববে না। চার্জড আপ হয়ে শ্যুটিংটাই করত যাবে।  

প্রঃ এই ছবিটা মোবাইলে শ্যুট করা। আগেও একটি কাজ দেখেছি, এটা কী ইউএসপি?

অর্ণব রিঙ্গোঃ দ্যাখো, অনেক রকম ইউএসপি হয়। সিনেমা যে জায়গায় যাচ্ছে, ওটিটি কন্টেন্ট যে জায়গায় যাচ্ছে সে পরিমান সময় পাওয়া যায় না, বাজেট ব্যাপার। তার জন্য তুমি যা করতে পার তার চেয়ে বেশি কিছু করতে হবে। ১৬-১৭টা লোকেশন প্রতিদিন। বেনারসে ৫ টার মধ্যে সূর্য ডুবে যায়। তাই ব্যাক লগ ত্রাখলে  লবে না। দিনের দিন সিন শেষ করতে হবে। তাই মোবাইল শ্যুট বিষয়টা নিয়ে পড়াশোনা চলছিল। স্পিড অনেক বেশি, কোয়ালিটিতে কোনও কম্প্রোমাইজ নেই। এটা হয়ত অনেকের মনে প্রশ্ন হতে পারে, মোবাইলে করলে কেমন ব্যাপার! কিন্তু পুরোটাই আউটোর শ্যুটিং। তাই ফরম্যাট খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেটা দেখাতে চাইছি সেটা দেখাতে হব। আমার মনে হয় গত ৭ বছরের সেরা কাজ করেছি। কালার যেভাবে এসেছে তাতে খুব খুশি। বারাণসীকে যেমন দেখে চোখ অভ্যস্ত আমার মনে হয় সেটার সঙ্গে জাস্টিস করতে পেরেছি।

প্রঃ তিনজনের কাছেই একটা প্রশ্ন জানতে চাই। শ্যুটিং চলাকালীন এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে যা মনে থেকে গেছে?  

অর্ণব রিঙ্গোঃ প্রচুর! ঝগড়া, মারামরি, মজা, ইয়ার্কি! আমাদের একজন আছে যুধাজিৎ। ২-৩ দিনের জন্য মিসিং হয়ে গিয়েছিল। ও নাকি সাধু হবে। সাধুদের থেকে ট্রেনিং নিয়েছিল, কীভাবে সাধু হওয়া যায়। অভিজিৎ সারা গায়ে ছাই মেখে দুজন মিলে প্র্যাকটিস করত কীভাবে সাধু হওয়া যায়। ওরা দু’জন রুমপার্টনার ছিল। রাতে আলোচনা চলত। ওরা বুঝেছিল অভিনয় করে যা উপার্জন করছি সাধু হলে অনেক বেশি উপার্জন হবে।

ঐন্দ্রিলাঃ ইনফ্যাক্ট, আর একটা জিনিস মনে পড়ছে, আমাদের একটা ভিখারির সিকুয়েন্স ছিল। ওখানকার নিয়ম হচ্ছে ওখাঙ্কার ভিক্ষাজীবীরা মোটামুটি সূর্যোদয় হলে যে যার জায়গায় চলে আসে। তাদের কোনওভাবেই সরানো যায় না। ৩৬৫ দিন ওখানেই। আমাদের সিক্যুয়েন্স অনুযায়ী ওটা ওখানেই করতে হবে। ঐ সারিতে এক জন ভিখারি সেজে বসবে। আমাদের প্রায় যুদ্ধ করতে হত। 

অর্ণব রিঙ্গোঃ আমাদের অ্যাসিসট্যান্ট সিজু ভিখারি সেজে বস ত। ওকে বলত ‘আপ কৌন হ্যায়’। ও প্রচুর ভিক্ষাও পেয়েছে।

প্রঃ দর্শকদের উদ্দ্যেশ্যে তোমরা কী বলবে?

অমৃতাঃ আমরা যতটা লাফিয়ে, দৌড়ে, মজা করে কাজ করেছি, কাজ করতে গিয়ে যতটা আনন্দ পেয়েছি মনে হয় সেই আনন্দটা আপনাদের মধ্যে সঞ্চার করতে পারব। সিরিজটা দেক লে বুঝতে পারবেন।

অর্ণব রিঙ্গোঃ বেনারস যারা গেছেন বা যাননি, এখন তো প্রচুর ট্রাভেল ব্লগ হয়েছে, লোকের মোটামুটি আইডিয়া রয়েছে। একটা মোবাইল ফোনে খুব স্টাইলাইজ করে যদি শ্যুৎ করা হয় তাহলে অ্যাজ থ্রিলার সেটা কেমন  দেখতে লাগবে সেটা দেখুন, বিশেষ করে যারা ইয়ং ফিল্মমেকার তারাও দেখুন মোবাইলে কী ধরনের ছবি বানানো যায়।

ঐন্দ্রিলাঃ এই মোবাইলে পুরো একটা সিরিজ শ্যুট করা, পুরোটাই বেনারস ঘুরে, পুরো লোকেশন এক্সপ্লোর করে। সবাই অবশ্যই দেখুন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...