আমাদের নিত্যদিনের বর্জ্য পদার্থ চারপাশে ছড়িয়ে থেকে পরিবেশের যথেষ্ট দূষণ সৃষ্টি করে। যদিও মিউনিসিপ্যালিটি থেকে বর্জ্য তুলে নেবার পদ্ধতি রয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে তা পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে পুরসভা থেকে কিন্তু এ কথা অনস্বীকার্য, এখনও প্রচুর বর্জ্যের কারণে পরিবেশ দূষিত হয়। এই ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করে তার উপায় বের করেছেন আইআইটি খড়্গপুরের গবেষকরা।
আইআইটি খড়্গপুরের গবেষকদের একটি দল ভারতীয় আবহাওয়ায় উচ্চ আর্দ্রতাসম্পন্ন কঠিন বর্জ্য ‘হাইড্রো থার্মাল কার্বোনাইজেশন’(এইচটিসি) পদ্ধতিতে জ্বালানি তৈরী করেছেন। এই পদ্ধতিতে বর্জ্য পদার্থ থেকে জৈব জ্বালানি উৎপন্ন হবে। পৌর অঞ্চলে কঠিন বর্জ্যের মধ্যে থাকা জৈব পদার্থকে একটি রিঅ্যাক্টরের মাধ্যমে হাইড্রোকার-এ পরিণত করা হবে। বর্জ্য পদার্থের মধ্যে থাকা জল রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ব্যবহৃত হবে তার ফলে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শহরাঞ্চলে জৈব বর্জ্য পদার্থের থেকে ৫০-৬৫ শতাংশ জ্বালানী পাওয়া যাবে। এবং এইচ টি রিঅ্যাক্টরের উন্নত তাপদায়ী ব্যবস্থার ওপর এই গোটা প্রক্রিয়াটির সাফল্য নির্ভর করবে।
আইআইটি খড়্গপুরের সিভিল ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ব্রজেশ কুমার দুবে জানান, চলতি পদ্ধতির মাধ্যমে ভারতের শহরে যে পরিমান বর্জ্য হয়, তা কাজে লাগিয়ে যেভাবে পুনর্ব্যবহার করা হবে, তাতে পরিবেশের ওপর তার যথেষ্ট সদর্থক প্রভাব পড়বে। এই প্রযুক্তির ফলে বর্জ্য পদার্থের পরিমান হ্রাস পাবে। এখন থেকে যে জৈব জ্বালানী উৎপন্ন হবে, তা লিগনাইট কয়লা থেকে প্রাপ্ত শক্তির সমতুল। এর ফলে জীবাশ্ম জ্বালানীর পরিমাণ হ্রাস পেয়ে পরিবেশ দূষণ কমাবে। এই গোটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মৃত্তিকা দূষণের পরিমাণও কমে আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে। একটি শহরের বিভিন্ন জায়গায় এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে বর্জ্য পদার্থ আয়ত্ত্বে আনতে সুবিধা হবে। ২০১৭ সালের জুলাই-এ আবিষ্কৃত 'থার্মাল বেসড ওয়েস্ট টু এনার্জি' পদ্ধতির মাধ্যমে ভারতবর্ষে বর্তমানে প্রতিদিন যে জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়, তার পরিমাণ ৫৩.৫ মেগাওয়াট। এই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ৫ হাজার ৩০০ টন জঞ্জাল লাগে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে পুরসভার পক্ষে কঠিন বর্জ্য পদার্থের মধ্যে থাকা জৈব অংশ ব্যবহার করা সম্ভব হবে। নতুন পদ্ধতিতে শিল্পাঞ্চলের বর্জ্যকে যথেষ্ট পরিমানে কাজে লাগনো যাবে বলেই মনে করছেন আইআইটি খড়্গপুরের গবেষকরা।