মাসের শেষে বাড়িতে আসা ইলেকট্রিক বিলখানা প্রায় প্রতিমাসেই হয়ে ওঠে সক্কলের মাথা ব্যথার কারণ। নিক্তি নিয়ে হিসেব চলে ইউনিটের কিসে কিসে বাড়ল আর কেনই বা বাড়ল?
কিন্তু ধরুন যদি এরকম হয় লাইট, ফ্যান, ফ্রিজ, টিভি সবই চলছে অথচ মাসের শেষে ইলেকট্রিক বিল শূন্য, কেমন হবে!
চমকাচ্ছেন তো? কিন্তু এমনই কান্ড ঘটিয়েছেন বেঙ্গালুরুর বাণী কান্নান আর তাঁর স্বামী বালাজী।
সবে নতুন বাড়ির গৃহপ্রবেশ হয়েছে তাঁদের, আর সেই বাড়িতেই ঘটিয়েছেন এমন কান্ড!
কীভাবে সম্ভব হল?
সে কাহিনি জানতে হলে ফিরতে হবে ২০০৯ সালে। গল্প বলছেন বাণী।
তখন তাঁরা ব্রিটেনে। প্রথম সন্তান আসার অপেক্ষায়। হঠাৎ তাঁদের মাথায় ভাবনা আসে সন্তানের জন্মের পর ন্যাপি, বোতল এই সব করে কত নতুন বর্জ্য জমা হতে চলেছে। মানে শুরু থেকেই একটা শিশু বেড়ে উঠবে প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে।
এই ভাবনা থেকেই বেশ কিছু পরিবেশ বান্ধব বিকল্প পথ বের করেছিলেন তাঁরা। বাড়ির খাবার আর ইকো-ফ্রেন্ডলি ন্যাপি ছিল সমাধান।
২০১৮ সালে বিদেশ থেকে পাকাপাকি ভেবে ফিরে এলেন দেশে। তখন সঙ্গে দুই কন্যা। শিকড়ে ফেরার টানে ঘরে ফিরলেও ফিরে দেখলেন এখানে ঘর পাওয়া বেশ কঠিন। আকাশ ছোঁয়া জমির দাম, বাড়ি তৈরির খরচও বহুল। খোঁজখবর চালিয়ে হতাশ হলেও হাত গুটিয়ে বসে থাকতে নারাজ ছিলেন তাঁরা। এবারও সমাধান বের করলেন একেবারে নিজস্ব পন্থায়।
তাঁদের দেখা হয়ে যায় এক আর্কিটেক্ট-এর সঙ্গে।
অনিরুদ্ধ জগন্নাথন নামে ওই আর্কিটেক্ট বলেন, তাঁরা যেভাবে ভাবছেন ঠিক সেভাবেই বাড়ি তৈরি সম্ভব।
বাণী কান্নান ার বালাজীর প্রথম শর্তই ছিল বাড়ি যতটা সম্ভব আধুনিক চেহারার হবে। বাড়ির ভিতরও হবে সেরকমই। বাড়ি তৈরীর উপকরণ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল মাটি। বেঙ্গালুরু শহরের একেবারে মাঝখানে হবে এক মাটির বাড়ি।
সিমেন্ট, মাটি, বালি, লাল মাটি, ইস্পাত, লাইমস্টোন দিয়ে তৈরী হয়েছিল ইট। সিমেন্ট আর মাটি মিশিয়ে তৈরী হয় ছাদ। নারকেলের খোল দিয়ে কাঠামো আর মাটির গাঁথুনি। ইস্পাত আর কংক্রিট যতটুকু না দিলেই নয় ঠিক ততটুকুই ব্যবহার করা হয়েছে।
বাড়ির বাইরে আছে লম্বা কিচেন গার্ডেন সেখান থেকেই নিজেদের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটান এই দম্পত্তি। বাড়িতে এসি নেই। এমনকি পাখাও বন্ধ থাকে। এভাবে বিদ্যুতের সাশ্রয় করেন না তাঁরা, বরং প্রয়োজন হয় না। বিদ্যুতের জন্য আছে সোলার সিস্টেম। তাঁদের বাড়ির বিদ্যুতের উৎস সৌর বিদ্যুৎ। তবে সেই বিদ্যুতেরও নিয়ম আছে। সুইচ দিলাম আর আলো জ্বলে গেল এমন ব্যাপার নয়। ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে ছটা বাজল তবেই বিজলি আসবে বাতিতে। বর্ষার মরসুমের জন্য আছে অন্য ব্যবস্থা। সেটাও পরিবেশ বন্ধব পদ্ধতিতেই।
মাত্র তিন মাসে শেষ হয়েছে বাড়ির কাজ। বাড়ির জানলা তৈরী হয়েছে নন্দী মাটি দিয়ে। বাড়ি নির্মাণে ব্যবহার করা কাঠ দিয়ে জানলার ফ্রেম আর দরজা। বাড়ির মূল দরজা ৮০ বছরের পুরনো। সেকেন্ড হ্যান্ড কিনেছিলেন বাণী। তাঁদের নতুন বাড়িতে এমন ‘দ্বিতীয় বার’র বহু জিনিস আছে।
নিজেদের সংসার খরচের ৩০ শতাংশ তাঁরা ব্যবহার করেন এই ইকো ফ্রেন্ডলি বাড়ির জন্য। অন্যপথে জীবন চালাতে গিয়ে তাঁদের তেমন অসুবিধার মুখেও পড়তে হয়নি। শুধু মাত্র বাড়ি তৈরীতে নিজেদের ভাবনা আটকে না রেখে নিজস্বতার ছাপ রেখেছেন বহু কিছুতে। দুই কন্যার জন্য শিক্ষাক্ষেত্রেও খুঁযে বের করেছেন ‘অল্টারনেটিভ’-এর রাস্তা। নিজেদের শিকড় ও সংস্কৃতিকে আঁকড়েই যাতে সন্তানরা বৃহত্তর পৃথিবীতে পরিচিতি তৈরী করতে পারে সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বেঙ্গালুরুর বাণী আর বালাজী।
সহ নাগরিকদের জন্য তাঁদের বার্তা, ‘উপভোগ করুন জীবনের প্রতিটি নির্মাণ’।
তথ্য সূত্রঃ বেটার ইন্ডিয়া