কলকাতায় পা রাখলেই ভবানীপুর আসবেন তিনি। গন্তব্য ভবানীপুরের এক বিখ্যাত মিষ্টির দোকান। কাউন্টারে রীতিমতো লাইন দিয়ে লাল দই আর রসগোল্লা কেনেন। সানগ্লাস ঢাকা চোখ আর স্কার্ফ দেখে খুব একটা বোঝার উপায় থাকে না। তবু যদি চিনে ফেলে কেউ মিঠে হাসি থেকে বঞ্চিত করেন না অনুরাগীকে। সত্তর আশির হৃদয় কেঁপে উঠেছিল তাঁর নামে। তিনি পর্দায় আসা মানেই বিস্ফোরণ। পরিত্রাণ নেই তাঁর থেকে। তিনি যে জিনাত। এভারগ্রিন জিনাত আমন! বলিউডে জিনাত ‘সিম্বল অফ এলিগেন্স’। আসল নাম জিনাত খান।
বাবা আমানুল্লাহ খান ছিলেন চিত্রনাট্যকার। ‘মুঘল-ই-আজম’, ‘পাকিজা’র মতো ছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলনে। বাবার কলমের ছোঁয়া লেগেছিল মেয়ের জীবনেও। সিনেমার প্রতি টান, ভালবাসা সেখান থেকেই। কিন্তু মাত্র ১৩ বছর বয়সে অকালপ্রয়াণ বদলে দিল পুরো ছবিটা। জিনাতের জন্ম, বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা বোম্বাই শহরে। মা সিন্ধা দ্বিতীয় বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন জার্মান নাগরিক হেইঞ্জকে। মায়ের সঙ্গে জার্মানি পাড়ি দেন জিনাত। ফিরে এলেন পাঁচ বছর পর। সবে আঠারো ছুঁয়েছেন।
এমনিতেই গৌরবর্ণা। ভারতীয় মেয়েদের তুলনায় বেশি। কয়েক বছরের ইউরোপ বাস ভীষণ ফেলেছিল চেহারায়। মুম্বইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্সে পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর লস এঞ্জেলস উড়ে গেলেন পরের পড়াশোনার জন্য। ইউনিভার্সিটি অফ সার্দান ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাম্পাসটা খুব প্রিয় হয়ে উঠল কয়েকদিনের মধ্যেই। কেরিয়ার শুরু করেছিলেন সাংবাদিক হিসেবে। প্রথম চাকরি ফেমিনা ম্যাগাজিনে। সাংবাদিকতা করতেন বিনোদন বিভাগে। সেই সূত্রেই গ্ল্যামার দুনিয়ার কাছাকাছি আসা।
জিনাতের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হল ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া কন্টেস্টে অংশ নেওয়ার পর। ১৯৭০-এ মিস এশিয়া প্যাসিফিকের তাজ উঠল মাথায়। এশিয়ার প্রথম মহিলা হিসেবে। পরের বছর ‘হালচাল’ ছবি দিয়ে বলিউড ডেবিউ। কিন্তু সত্যিকারের ডেবিউ তাঁর হয়েছিল ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’ ছবির মাধ্যমে। দেশে আছড়ে পড়েছে হিপি কালচারের ঢেউ। সেই সময়কে ছবিতে ধরেছিলেন দেব আনন্দ। সময়ের মুখ হয়ে উঠলেন জিনাত। দম মারো দম। সুর আর জিনাত দুই নেশাতেই উত্তাল দেশ!
‘দম মারো দম’ আজও প্লে লিস্টের প্রথম সারিতে। কখনও পুরনো হয় না এই গান। তেমনি জিনাত। তিনি শুধু মায়ানগরীর মায়াকন্যা নন, ভাঙায়-গড়ায় রক্ত মাংসের। আজও তাই চোখ ঢেকে রাখতে হয় সানগ্লাসে। নষ্ট চোখের যন্ত্রণা নয় ঢাকাই থাক রঙিন কাচের আড়ালে।