এই যে আজ কত ধরনের যাতায়াতের মাধ্যম, তার আবার কতই না রকমফের - সে যাইহোক, এই কলকাতার জন্মলগ্ন থেকে তাতে এসেছে কালক্রমে নানা বিবর্তন ও বৈচিত্র তা বলাই বাহুল্য। সেই প্রথম ছিল পদব্রজে যাত্রা, পরে পাল্কী, তার পর চাকার আগমনে এল ঘোড়ার গাড়ী। ব্যাস, শুরু হল সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলার এক মহা তাড়না। সাথে শুরু হলো সমাজের বিত্তবানদের মানে তৎকালীন বাবুদের দেখনদারির এক বাহার। আজ বলব পুরনো কলকাতার এমন এক বিচিত্র কথা যা ছিল শুধুমাত্র দেখনদারী আর শখ পূরণের এক মাধ্যম মাত্র। কিন্তু কী তা? সেই কথাই জানাব আজ।
উত্তর কলকাতার পাথুরিয়া ঘাটার সাথে পরিচিত নন এমন মানুষ আছেন হাতে গোনা। পুরনো কলকাতার এক বেশ অভিজাত স্থান। সেই পাথুরিয়াঘাটার অন্যতম ধনী, প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন যদুনাথ মল্লিক (১৮৪৪-১৮৯৪)। তাঁর ছোট ছেলে মন্মথ মল্লিকের ছিল গাড়ীর শখ। তা প্রভাবশালী বিত্তবান মানুষের ছেলেপুলেদের খানিক অমন শখ থাকতে আছে বৈ কি? ঘোড়া তো ছিলই সাথে তাঁর ছিল তৎকালীন প্রায় ৭খানা গাড়ী। কিন্তু এ আর এমন কি? নতুনত্ব কোথায়? বলি, জমিদারদের দেখনদারী না থাকলে চলে? আর সেই তাড়নাতেই তিনি ১৯৩০ সালে আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে মাত্র ৬০০০/- টাকায় (যদিও সেই সময় এই অর্থমূল্য নেহাত ‘মাত্র’ ছিল না) ২টি জেব্রা সংগ্রহ করেন। ব্যাস, শখ পূরণে আর কয়েক ধাপ বাকি।
কলকাতার রাজপথে যাতে সেই জেব্রা টানা গাড়ীতে ঘুরতে পারেন সেই জন্য নিজেই দিয়েছিলেন তাদের ট্রেনিং। ব্যাস, তামাম কলকাতা দেখল মল্লিক বাবুর জেব্রা টানা সে এক গাড়ী। যা নিঃসন্দেহে ছিল এক অভিনব ঘটনা। মল্লিকবাবুর সেই গাড়ী এতটাই আলোড়ণ ফেলেছিল যে তা রীতিমতো ফ্রেমবন্দি হয়ে রয়েছে। জুরি গাড়ীর সাথে এর পার্থক্য ছিল এই যে এই গাড়ীতে মাত্র দু'জন সওয়ার হতে পারতেন। কিন্তু বিবর্তিত তিলোত্তমার এহেন ইতিহাস নিঃসন্দেহে এক স্মৃতির সম্পদ।