যন্ত্রণার কারণে কষ্ট পাওয়ার দিন শেষ। এবার থেকে নিজের রক্ত দিয়েই চিকিৎসা করা যাবে যন্ত্রণার।সম্প্রতি এরকম একটি পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হচ্ছে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে।যন্ত্রণার উপশমে পিআরপি (প্লেটলেট রিচ প্লাজমা) পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে ইনজেকশনের মাধ্যমে।সম্প্রতি এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা শুরু হয়েছে হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগ।
কি এই পিআরপি পদ্ধতি?
চিকিৎসকেরা জানান, এই পদ্ধতিতে প্রথমে রোগীর শরীর থেকে সংগ্রহ করা হয় রক্ত। সেই রক্তকে তীব্র গতিতে ঘোরালে রক্তের উপাদানগুলি তিনটি স্তরে ভাগ হয়ে যায়। তার মধ্যে একটি হলো প্লেটলেট বা অনুচক্রিকা মিশ্রিত প্লাজমা বা পিআরপি।আঘাত পাওয়া জায়গায় এই পিআরপি ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। দুই সপ্তাহ অন্তর মোট তিনধাপে এই ইনজেকশন নিতে হয়।
হাসপাতালের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যেই এই পদ্ধতিতে চিকিৎসায় উপকার পেয়েছেন দুইজন রোগী। তারা জানিয়েছেন এই পদ্ধতির দ্বারা ট্রিটমেন্ট করতে যন্ত্রনার দ্রুত উপশম হয়েছে।এনাদের মধ্যে একজন বাম কাঁধের যন্ত্রনা নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। পেশায় লেখিকা জানান, কাঁধের ব্যাথার কারণে পুজো সংখ্যাতেও লিখতে পারেননি তিনি।অন্যদিকে, বাইক থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আঘাত পান একজন যুবক।ব্যাথার উপশমের জন্য দুইজনকেই বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অস্ত্রপ্রচারের পরামর্শ দেন। কিন্তু সোনার কারিগর অনুজের অস্ত্রপ্রচার করানোর মতো সামর্থ ছিল না। শেষে গ্রামের একজনের কথা শুনে তিনি আসেন কলকাতায় এবং এসএসকেএমের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগে ট্রিটমেন্ট করান।দুইজন রোগীর ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হয় পিআরপি পদ্ধতি।
এই থেরাপি প্রসঙ্গে চিকিৎসকেরা জানান, পিআরপির প্রচুর গ্রোথ ফ্যাক্টর আছে। আর এই গ্রোথ ফ্যাক্টরই ক্ষতস্থানের ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করছে।দীঘদিন কাঁধের যন্ত্রনায় ভোগা একজন লেখিকা জানান, লাস্ট ৬ মাসে সেই ব্যথা অসহনীয় হয়ে ওঠে।যন্ত্রনা থেকে মুক্তির আশায় তিনি তিনজন অস্থি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছিলেন। তারা যথারীতি ফিজিওথেরাপি করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি বলেই জানান তিনি।বেসরকারি হাসপাতালে দেখানোর পর সেখান থেকে তাকে অস্ত্রপ্রচার করার কথা জানানো হয়।কিন্তু শেষে তিনিও তার এক পরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে খবর পান এসএসকেএম হাসপাতালের পিআরপি পদ্ধতির কথা।
চিকিৎসকদের মতে, অসাবধান অবস্থায় লাগা আঘাত কিংবা পা মুচকে যাওয়া এইসব ক্ষেত্রে খুব ভালো ফল দিচ্ছে পিআরপি।এছাড়াও লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়া, টেনিস এলবো এইসব ক্ষেত্রেও উপকার মিলছে বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকগন। কিন্তু লিগামেন্ট পুরোপুরো ছিঁড়ে গেলে সেই ক্ষেত্রে পিআরপি খুব একটা ভালো উপকার সাধন করতে পারছে না।পিআরপি পদ্ধতিতে চিকিৎসার ফলে উপকার পাওয়া লেখিকা তিলোত্তমা জানান, এই পদ্ধতি সম্পর্কে অনেকেরই কোনো ধারণা নেই।কিন্তু এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করানোর ফলে তিনি যে উপকার পেয়েছেন তার জন্য তিনি তার হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এই চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে আশাবাদী চিকিৎসকমহল। অস্থি চিকিৎসকদের একাংশ মনে করেন, টেনিস এলবো, কাঁধের চোট, কব্জির ব্যথা, লিগামেন্টে টান ধরা বা পেশির ব্যথা এইসব ক্ষেত্রে আজকাল আর অস্ত্রপ্রচার করার কথা ভাবা হচ্ছে না।এইসব ক্ষেত্রে পিআরপি পদ্ধতিতেই চিকিৎসা করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করার ফলে অনেক রোগীই উপকৃত হয়েছেন তবে কিছু অস্থি চিকিৎসকদের মতে, কিছু ক্ষেত্রে উপকার দিলেও এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে মতামতও রয়েছে।