কৈশরে উত্তর প্রদেশের বাদোহি গ্রাম থেকে বাবার হাত ধরে মুম্বইতে আসা। দিনযাপন করার জন্য ছিল না মাথার ওপর ছাদ। মুম্বইয়ের রাস্তার এক কোণে কোনওরকমে চলত বসবাস। বাবা রাস্তার ধারে ফুচকা বিক্রি করে কোনও রকমে ‘দু বেলা দু মুঠো’ খাবারের আয়োজন করত।কিন্তু, এত দারিদ্রতার মধ্যেও ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন ছোট্ট যশস্বী। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন শচীন তেন্দুলকারের ভক্ত। তাই ক্রিজে শচীন ব্যাট করতে নামলেই পাশের দোকানের টিভি-র পর্দার সামনে থেকে সব়ানো যেত না তাকে। শচীনের শট মারার কায়দা দেখে ‘শ্যাডো প্রাকটিস’ চলত তার। তাই শচীনকেই নিজের আইডল বানিয়ে নেন যশস্বী। শচীনের ব্যাটিং দেখেই উত্তর প্রদেশের হলেও মুম্বই দলের হয়ে খেলার ইচ্ছা জাগে তার। শচীনের ব্যাটিং তার মনে এতটাই রেখাপাত করে যে তার বাবা তাকে নিজেদের বাড়ি ফিরে যেতে বললেও সে যেতে রাজি হন না।
এমনভাবেই চলছিল দিনযাপন। হঠাৎ একদিন সুযোগ আসে তার কাছে। মুম্বই খ্যাত আজাদ ময়দানে একটি দলের হয়ে খেলার সুযোগ পান তিনি, কোনও কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে যান যশস্বী। তবে সেখানো আরও একটি সমস্যার মুখে পড়তে হয় তাকে। দিনযাপন করার জন্য মাথার ওপর ছাদ পেলও, ব্যবহার করার জন্য ছিল না কোনও শৌচালয়। শৌচকর্ম করতে হলে খোলা মাঠ ছাড়া দ্বিতীয় কোনও উপায় ছিল না। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নকে এত কাছে পেয়ে রাজি হয়ে যান যশস্বী।
সেই ম্যাচে নিজেকে প্রমাণ করে মুম্বই দলে খেলার ছাড়পত্র পেয়ে যান যশস্বী। তার পর আর পিছনে ফিরে তাঁকাতে হয় নি তাকে। ২০১৯-এর অক্টোবর মাসে বিজয় হাজারে ট্রফিতে মুম্বই দলে সুযোগ পান যশস্বী। সুযোগ পেয়েই গোটা ভারতবাসী-কে চমকে দেন তিনি। ঝড়খন্ডের বিরুদ্ধে দ্বিশতরান করে শিরোনামে উঠে আসে জয়সওয়াল। লিস্ট এ ক্রিকেটে কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসাবে মাত্র ১৭ বছর ২৯২ দিন, বয়সে দ্বিশতরান করে নয়া রেকর্ড করেণ তিনি। আর তার এই অনবদ্য প্রদর্শনের ফলে ২০২০ সাল দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আয়োজিত অনুর্দ্ধ ১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে জায়গা করে নেন যশস্বী জয়সওয়াল। তবে এখানেই শেষ নয় অনুর্দ্ধ ১৯ দলের পর এবার তার পরবর্তী লক্ষ ভারতের সিনিয়র দলে জায়গা করে নেওয়া। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মার পাশে থেকে ভারতের হয়ে খেলতে টান তিনি।