শেষ হয়েও হল না শেষ। বাংলা ছোটগল্পের অনন্য এই চরিত্র বরাবরই স্বকীয় করেছে এই ধারাকে অন্য ধারার থেকে। স্বয়ং রবিঠাকুরের গল্পগুচ্ছ তার উদাহরণ। আর সেই ধারায় সামান্য কিছু শব্দে অনন্য জাদু দেখিয়েছেন বনফুল। ওরফে বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। আজ তাঁর ১২০ তম জন্মদিন।
বাংলা ছোটগল্প অনন্য রূপ পেয়েছিল তাঁর হাতে। তাই তাঁর একাধিক ছোটগল্প থেকে তৈরি হয়েছে খ্যাতনামা সিনেমা। ১৮৯৯ সালের ১৯ জুলাই বিহারের পূর্নিয়া জেলায় জন্মেছিলেন তিনি। সাহিত্যের পাশাপাশি চিকিৎসক হিসেবেও খ্যাত ছিলেন। শিল্পে অবদানের জন্য তাঁকে পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত করা হয়।
বনফুলের বাবা সত্যাচরণ মুখোপাধ্যায়ও ছিলেন চিকিৎসক। সত্যাচরণ ও মৃণালিনী দেবীর সুযোগ্য পুত্র বনফুল সাহিত্যে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন একাধিক ছোটগল্পের জন্য। ‘হাটেবাজারে’, ‘ভুবন সোম’ জাতীয় গল্পগুলি নিয়ে আজও সমালোচকেদের বিস্ময়ের শেষ নেই।
কেন এই বিস্ময়? প্রখ্যাত সমালোচক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় জানালেন, “বনফুলের ছোটগল্প সত্যিই ছোট। আয়তনের কারণে এ কথা বলা না। যেমন জাপানি হাইকু। এ ধরনের লেখা রবীন্দ্রনাথ লিপিকায় কিছু লিখেছিলেন। বনফুল ততধিক সফল নন। কিন্তু তিনি মাত্র ১০ বা ২০ লাইনের মধ্যে একটা দুনিয়াকে ধরতে পারেন। এই অনুবিশ্ব কিন্তু আজকের বাংলা সাহিত্যে নেই। সে যোগ্যতা আজকের লেখকদের মধ্যে নেই। এখন শুধুমাত্র জায়গা দখল এবং আরও কত জায়গা যে কোনওভাবে ভরানো যায় তার চেষ্টা। এখানে সাহিত্য কোথায়? বস্তুত ইমেজকে যেভাবে এজরা পাউন্ড কবিতার প্রাণ মনে করতেন বা হাইকুকে সিনেমার অনিবার্য উপাদান মনে করতেন আইজেন্সটাইন, তেমনই বনফুলের ছোটগল্প সাহিত্যের এক জরুরি সংযোজন।”
আজ যখন সাহিত্য বা সিনেমা ক্রমশ ছোট হচ্ছে আকারে, ক্রমশই ইমেজের জন্ম হয়ে চলেছে চারপাশে, সেই পরিসরে নতুন করে আবিষ্কার করা যায় বনফুলকে। এমনটাই মনে করেন সমালোচকেরা। সেখানেই যুগের সাথে প্রাসঙ্গিক বনফুল। প্রাসঙ্গিক তাঁর ছোটগল্প।