ল্যাম্ব স্টেক কীভাবে বানাতেন প্রাচীন যুগের মানুষ?
তাঁদের রেসিপিটা ছিল অনেকটা এরকম, ‘ মাংস তৈরি থাকবে। জল ফুটবে। নুন আর বার্লি মেশাবেন।পিঁয়াজ আর পার্সি শ্যালোট দেবেন। রসুন গাছের গোড়া আর বাটা রসুন মেশান।’
বাকি রান্নাটা কীভাবে হবে তা জানার কোনও উপায় নেই। কারন এই ‘রেসিপি’র যিনি মালিক তাঁকে হাজার সন্ধানেও পাওয়া সম্ভব নয়।তাঁর মৃতু হয়েছে আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে।
রন্ধন সংস্কৃতি এবং রন্ধন ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেন এমন একদল গবেষক সম্প্রতি এই রেসিপির পাঠোদ্ধারের কাজ করছেন। উল্লেখিত রেসিপির সঙ্গে তাঁরা আরও তিনটি রেসিপি পেয়েছিলেন। সদ্য আবিষ্কৃত রন্ধন প্রণালী বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন রন্ধন প্রণালী বলে দাবী করা হয়েছে। এগুলিকে বলা যেতে পারে এটা ‘রন্ধন সম্বন্ধীয় প্রত্নবিদ্যা’।
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটির বেবিলন সভ্যতার সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত ট্যাবলেট থেকে পাঠোদ্ধার করে রান্নার স্বাদের মাধ্যমে সংস্কৃতির রূপ বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। গবেষকদের মতে এই ‘রেসিপি’তে ব্যাবিলন ও সুমেরিয় সভ্যতার প্রভাব পড়েছে।
ব্যাবিলন হল প্রাচীন আক্কাদিয়ান ভাষার রাজ্য ও সাংস্কৃতিক অঞ্চল, যা কেন্দ্রীয় দক্ষিণ মেসোপটেমিয়া ঘিরে গড়ে ওঠে।
ইয়েল পিবডি মিউজিয়ামের কাচের বাক্সে রাখা নরম মলাটের বইয়ের আকৃতির ট্যাবলেটগুলো দেখে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রাচীন এই সভ্যতা বিশেষজ্ঞ গোজকো বারজামোভিচ রেসিপিগুলো সম্পর্কে বলেন, এটা অনেকটা গান পুনর্গঠনের চেষ্টার মতো, কোনো একটি নোটের হেরফের থেকে পুরো বিষয়টি পাল্টে যাবে। তিনি ট্যাবলেটগুলো থেকে পাঠোদ্ধারের কাজ করছেন।
চারটি ট্যাবলেটের মধ্যে তিনটি ১৭৩০ খ্রিষ্টপূর্বের এবং একটি এক হাজার বছর আগের। সব ট্যাবলেটই ব্যাবিলন ও আসিরিয়াসহ মেসোপটেমিয়া অঞ্চলের।
পুরোনো তিনটি ট্যাবলেটে ২৫টি স্যুপ জাতীয় খাবারের উপকরণসহ রেসিপি আছে। আরেকটিতে রয়েছে ১০টির বেশি রেসিপি। এগুলোতে রান্নার প্রক্রিয়া ও পরিবেশনের তথ্য আরও বিশদভাবে আছে। তবে সেগুলো অনেকখানি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মর্মোদ্ধার করতে পারেননি তাঁরা।
এই দলের সদস্য হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির খাদ্য রসায়নবিদ পিয়া সোরেনসেন বলেন, সেগুলো খুব বেশি তথ্যবহুল রেসিপি নয়। হয়তো চার লাইনের। ফলে অনেক বেশি অনুমানের সুযোগ রয়েছে। কাজ করতে গিয়ে যা বোঝা যাচ্ছে, ওই সময়ে স্যুপ জাতীয় খাবারের বহুল প্রচলন ছিল।
রেসিপিগুলো নিয়ে কর্মরত হার্ভার্ড সায়েন্স অ্যান্ড কুকিং ফেলো প্যাট্রিসিয়া জুরাদো গনজালেজ বলেন, খাদ্য উপাদানগুলো আজ এবং চার হাজার বছর আগের একই। মাংসের টুকরা মানে মাংসের টুকরোই। যেভাবে বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ একই থাকে, বিষয়টা অনেকটা সেরকমই। এখানে একটি বিজ্ঞান রয়েছে, সেটা চার হাজার বছর আগে যা ছিল, এখনো তা আছে।
ইরাকের রন্ধন বিশেষজ্ঞ এবং এ-বিষয়ক ইতিহাসবিদ নাওয়াল নাসরাল্লাহ বলেন, এটা খুব অবাক করা বিষয় যে, এখন ইরানের প্রধান খাবার যেটি তা হল স্যুপ জাতীয় খাবার। প্রাচীন সময়েও যা প্রধান খাবার ছিল। যা ইরাকে এখনও প্রতিদিনের খাবার তালিকায় থাকে। ঝোলযুক্ত তরকারি, ভাত, সঙ্গে রুটি। যা থেকে বোঝা যায় খাবারের আঙ্গিক বদলালেও মূল ট্র্যাডিশন একই আছে। প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত হাজার বির্বতনের মধ্যে দিয়ে গেলেও তা টিকে আছে।