আজ পরিচয় করব এক জীবন্ত ইতিহাসের সাথে। শুনে মনে হতে পারে ইতিহাস আবার জীবন্ত হয় কি করে? এখানেই রহস্য। আর আজ তাই বলব।
করোনা মোটামুটি গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকে প্রায় বিপর্যস্ত করে তুলেছে, যদিও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়াসে কিছু কোম্পানি সফল হলেও বহু কোম্পানি কিন্তু সেই সুযোগ হারিয়ে হয়েছে নিঃস্ব। কিন্তু এমন এক কোম্পানির কথাই আজ বলব, যে বিশ্বের অর্থনীতির ওঠা পড়া এমনকি একাধিক বিপর্যয়ের সাক্ষী হয়েও এখনো স্বমহিমায় নিজেদের অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বিশ্বের সবথেকে পুরোনো কোম্পানির স্বীকৃতি তারই দখলে। ১৪৪০বছর বয়সী এই ‘কন্সট্রাকশন কোম্পানি’র নিবাস জাপানে।
সেই জীবন্ত ইতিহাসের নাম কঙ্গো গুমি কোং লিমিটেড। সূচনা হয়েছিল ৫৭৮সালে, রাজা ইয়োমেয়ি ও তাঁর পুত্র শোতকুর বদান্যতা এবং পৃষ্ঠপোষকতায়, শিগেমিৎসু কঙ্গোর প্রয়াসে। প্রসঙ্গত বলা ভালো এই সময় কোরিয়া থেকে বেশ কিছু মানুষের আগমন ঘটে জাপানে। তাঁদের অন্যতম ছিল কঙ্গোরা। বৌদ্ধধর্মের প্রসারেই তাঁরা নিজেদের মতো করে শুরু করেন ছোটো ছোটো মন্দির তৈরির কাজ যদিও এক্কেবারে পারিবারিক ভাবে। বিষয়টি রাজপরিবারের নজরে এলে রাজপুত্র শোতকু বুদ্ধের উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ মন্দির নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন এবং এ কাজে কঙ্গো পরিবারের থেকে যোগ্য আর কাউকেই তিনি পাননি।
এগিয়ে আসেন কঙ্গো পরিবারের সদস্য শিগেমিৎসু কঙ্গো। রাজপরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় ওসাকাতে তৈরী হলো জাপানের প্রথম ও প্রাচীনতম বুদ্ধ মন্দির, শিতেননো-জি মন্দির। এর স্থাপত্যরীতির প্রশংসায় উৎসাহিত হয়ে শিগেমিৎসু এই কাজটিকে পারিবারিক ব্যবসায় পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেন- তৈরি হল ‘কঙ্গো গুমি কোং লিমিটেড’।
ব্যাস সেই যাত্রা শুরু। কালক্রমে সময়ের সাথে পরিণত হয়েছে কঙ্গো গুমি, তৈরী হয়েছে ইতিহাসের আর সেই ইতিহাস সাক্ষী থেকেছে আরো কত ইতিহাসের। এই সংস্থা ক্রমশ জাপানের প্রধান ও বিখ্যাত স্থাপত্যগুলির সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে থাকে। পারিবারিক ব্যবসা হিসেবে সূত্রপাত ঘটলেও ক্রমশঃ সেই ব্যবসার পরিসর বৃদ্ধি পায়। ওসাকায় তৈরি হয় প্রধান কেন্দ্র। আশ্চর্যের বিষয় হলো কত উত্থান পতন,বিশ্বযুদ্ধের দাপটেও কোম্পানি কিন্তু বন্ধ হয় নি। আজও একই ভাবে করোনার বাউন্সার সামলে বহু মানুষের অন্নের সংস্থান করে চলেছে এই প্রবীণ কোম্পানি।