পৃথিবী জীববৈচিত্রে পূর্ণ। পৃথিবীর নানাপ্রান্তে গেলেই নানা ধরণের জীববৈচিত্র কিন্তু আমাদের চোখে পড়ে। এটা আজকের কথা নয়। পৃথিবীতে প্রাণের স্পন্দন আসার পর থেকেই নানা জীব পৃথিবীর বুকে জন্ম নিতে শুরু করে। সেই সব প্রত্নতাত্ত্বিক জীবের খোঁজ মেলে আবার মাটির তলা থেকে। বিজ্ঞান বইতে ছোটবেলা থেকে ডাইনোসরের কথা সকলেই পড়েছি কিন্তু কেউই তাকে চোখে দেখিনি। সেরকমই এক নতুন প্রাণীর সন্ধান বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন ইতালির এক লেকের পাশ থেকে।
বিজ্ঞানীদের কথায়, ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই প্রাণীর সন্ধান পাওয়া গেছে ইতালির সান গিউলিয়ানা লেকের পাশ থেকে। না, প্রাণীটিকে পাওয়া যায়নি ঠিকই কিন্তু প্রাণীটির জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। সেই জীবাশ্মটি দেখে বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই প্রাণীটিই সবচেয়ে বড় একটি প্রাণী। অনুমান করে দেখা গেছে এই প্রাণীটি দৈর্ঘ্যে ৮৫ ফুট। জীবদ্দশায় এই প্রাণীটির ওজন ছিল ১ লক্ষ ৩৬ হাজার কিলোগ্রাম যা প্রায় ২৫ টি এশিয়ান হাতি এবং ১১ টি আফ্রিকান হাতির ওজনের সমান। এর আগে যেসব জীবাশ্ম পাওয়া গেছে তাদের কোনোটির ওজনই এতো বেশি ছিল না। তাই বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণীর জীবাশ্ম। কিন্তু প্রাণীটি কি? প্রাণীটি আসলে একটি নীলতিমি। নীলতিমি আজও মহাসাগরের বুকে নির্ঝঞ্ঝাটে বিদ্যমান। কিন্তু তাদের কারোর ওজনই এতো বেশি নয়। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, আকার ও আয়তনে বর্তমানের নীলতিমিগুলি আসলে এই তিমির কাছে শিশু।
কিন্তু এত বড় একটি প্রাণীর জীবাশ্মের খোঁজ মিললো কিভাবে? বেশ কয়েক বছর আগে ইতালির ওই লেকটির পাশে চাষের জন্য মাটি খুঁড়ছিলেন এক ব্যক্তি। মাটি খোঁড়ার সময় একটি বড় আকারের মেরুদণ্ডের হাড় দেখতে পান তিনি। এরপরই সেই জায়গায় পৌঁছান ইতালির বিজ্ঞানীদের দল। সেই থেকে কাজ শুরু। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শেষমেশ উদ্ধার করা হয় এই বিশালাকৃতি নীলতিমির জীবাশ্ম। প্রত্নতত্ত্ববিদদের কথায়, এই কঙ্কালটি এতটাই বড় যে সম্পূর্ণ কঙ্কালটি তুলতেই সময় লেগে যায় প্রায় ২ বছর। এমনকি কঙ্কালটি তোলার জন্য পাশের লেকের জলের মাত্রাও কমানোর প্রয়োজন পড়ে। জীবাশ্ম উদ্ধারের পর তার হাড়ের পরীক্ষা করে জানা গেছে, আজ থেকে প্রায় ১০ লক্ষ বছর আগে এরা সমুদ্র বা জলাশয়ে বিচরণ করতো। বিজ্ঞানীরা এই প্রাণীটির আকার আয়তন বিচার করে জানাচ্ছেন, ১০ লক্ষ বছরের আগেই পৃথিবীর বুকে নীল তিমির আবির্ভাব ঘটেছিলো কারণ আবির্ভাবকালে কোনো প্রাণীই এতবড় আকারের হতে পারে না। কিন্তু পৃথিবীর বুকে নীলতিমির আবির্ভাব ঘটেছিলো কিভাবে? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এর পিছনে বরফের যুগ বা আইস এজ দায়ী হতে পারে। আজ থেকে প্রায় ২০ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীর সর্বত্রই ছিল বরফ আর বরফ। সেই সময়ে জলাশয়ের জল সমস্ত ধীরে ধীরে বরফে পরিণত হয়ে যাচ্ছিলো। সেই সময়ে সমুদ্রে বাস করা কিছু তিমি মারা যায়। এই জীবাশ্মটি তাদের মধ্যে কোনো এক তিমির বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
পৃথিবীর জীব বৈচিত্রের নানা বিভিন্নতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে চারদিকে। ধীরে ধীরে চমক দিচ্ছে তারাও। সবচেয়ে বড় প্রাণীর জীবাশ্ম উদ্ধার সেরকমই একটি চমক সাধারণ মানুষের কাছেও আর বিজ্ঞানের কাছেও। জলের তলার জীবন নিয়ে যারা বিশেষ আগ্রহী তাদের ক্ষেত্রে এই খবরটি যথেষ্টই খুশির, এমনটাই মনে করছেন প্রত্নতত্ত্ববিদগণ।